১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ডিসেম্বর শেষে

লোকসানের মুখে অগ্রণী ব্যাংক মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ

ব্যাংকটি প্রকৃত লোকসান ২২৪ কোটি টাকা ; মূলধন ঘাটতি ৮৮৩ কোটি টাকা
-

শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে আদায় কমে যাওয়ায় এবং খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছে সরকারি খাতের অগ্রণী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটি প্রকৃত লোকসান করেছে ২২৪ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে মুনাফা করেছিল ৬৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এ তথ্য মানতে নারাজ অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস্ উল ইসলাম গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, প্রকৃত মুনাফা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এখনো অডিট নিষ্পত্তি হয়নি। তিনি বলেছেন, আমাদের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৯৫৭ কোটি টাকা। প্রভিশন, ট্যাক্স পরিশোধের পর কিছুটা হলে প্রকৃত মুনাফা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্যাংকটি ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে পর্যাপ্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি। ফলে ডিসেম্বর শেষে মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির মূলধন সংরক্ষণ করার কথা ছিল ৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়ে ব্যাংকটি মূলধন সংরক্ষণ করেছে ২ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। ফলে ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি হয়েছে ৮৮৩ কোটি টাকা। কিন্তু মূলধন ঘাটতির এ তথ্য মানতেও নারাজ ব্যাংকটির এমডি। তিনি জানিয়েছেন, হিসাব এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোর পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতেই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদন তৈরি করে। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর কোনো তথ্য তৈরি করে না। তবে ব্যাংকগুলোর পাঠানো কোনো তথ্যের বিষয়ে কোনো সন্দেহ বা অসঙ্গতি দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পরিদর্শকদের পাঠিয়ে তা তদন্ত করা হয়। এতে ব্যাংকগুলোর পাঠানো তথ্যের চেয়ে খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি ও মুনাফার অসঙ্গতি বাড়ে বৈ কমে না। সুতরাং অগ্রণী ব্যাংকের আলোচ্য তথ্যগুলো তাদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতেই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এখানে ব্যাংকের অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
এ দিকে শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকেও কাক্সিক্ষত হারে ব্যাংকটি ঋণ আদায় করতে পারছে না। গত ৩১ ডিসেম্বর শেষে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছ থেকে অগ্রণী ব্যাংক ঋণ আদায় করতে পেরেছে মাত্র ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে শীর্ষ এ ২০ ঋণখেলাপির কাছ থেকে আদায় কমেছে প্রায় ৯২ শতাংশ। আবার শীর্ষ এ ২০ ঋণখেলাপির বাইরে অন্য শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছ থেকেও ঋণ আদায় কমে গেছে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরে ব্যাংকটি যেখানে এসব ঋণখেলাপি কাছ থেকে আদায় করেছিল ৩১৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরে অর্থাৎ ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরে আদায় করেছিল ৫৫১ কোটি টাকা। এসব ঋণখেলাপির কাছ থেকে এক বছরে আদায় কমেছে প্রায় ৪২ শতাংশ।
এ দিকে গত ডিসেম্বের শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার কমলেও বেড়ে গেছে সামগ্রিক খেলাপি ঋণ ও মন্দ ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। আগের বছরে ছিল ৫ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ১৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, খেলাপি ঋণের হার কমলেও সামগ্রিক খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। আবার খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মন্দ বা আদায় অযোগ্য ঋণও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মন্দ ঋণ বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা, যা তাদের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৯৫ শতাংশ। অথচ আগের বছরে মন্দ বা আদায় অযোগ্য ঋণ ছিল ৪ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা, যা ওই বছরের মোট খেলাপি ঋণের ৮৮ দশমিক ২৪ শতাংশ।
এ দিকে অগ্রণী ব্যাংকের নিট লোকসান হওয়ায় তাদের সম্পদ কমে যাওয়ার পাশাপাশি মূলধনও খোয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির রিটার্ন অন অ্যাসেট কমে নেমেছে ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ। একই সাথে রিটার্ন অন ইকুইটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যেখানে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী রিটার্ন অন ইকুইটি ও রিটার্ন অন অ্যাসেট ১০ থেকে ১২ শতাংশ থাকার কথা, সেখানে ঋণাত্মক হওয়ার অর্থ ব্যাংকটির দায় বেড়ে যাওয়ায় সম্পদ কমে যাচ্ছে। খোয়া যাচ্ছে মূলধন, যা শুভ লক্ষণ নয় বলে ওই সূত্র মনে করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
মোরেলগঞ্জে সৎভাইকে কুপিয়ে হত্যা দুবাই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো? এ দেশের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে : ডাঃ শফিকুর রহমান পিছিয়েছে ডি মারিয়ার বাংলাদেশে আসার সময় ইরানে হামলা : ইস্ফাহান কেন টার্গেট? মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান

সকল