রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ভালো ঋণ গ্রহীতারা প্রণোদনা পাবেন

রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যাংকের ভালো ঋণ গ্রহীতাদের বিশেষ প্রণোদনার দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই প্রণোদনার অংশ হিসেবে ব্যাংকের ভালো গ্রহীতাদের বিশেষ সুদে ঋণ প্রদান, তাদের নাম ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ, কর রেয়াত সুবিধাসহ কার্ড প্রদান করা হতে পারে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের ভালো ঋণ গ্রহীতাদের কিভাবে সুবিধা দেয়া যায় তার জন্য এসব ব্যাংকের কাছ থেকে মতামত চেয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে একটি পত্র দেয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, আপনাদের ব্যাংকের ভালো ঋণ গ্রহীতাদের উৎসাহ দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ ব্যাংকের লাখ লাখ ক্ষুদ্র আমানতকারীর পরে এসব গ্রাহক ব্যাংকের মূল চালিকাশক্তি। তাই তাদের প্রণোদনার দেয়া প্রয়োজন। ভালো ঋণ গ্রহীতাদের কিভাবে প্রণোদনা দেয়া যায় তার একটি সুপারিশ যেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিটি সব রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা গত বুধবার জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ব্যাংক এ বিষয়ে তাদের সুপারিশ ও মতামত আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক আগামী সপ্তাহের (চলতি সপ্তাহ) মধ্যে তাদের মতামত পাঠাবে। এই মতামতের ভিত্তিতে ভালো ঋণ গ্রহীতাদের প্রণোদনার ধরন ঠিক করা হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রণোদনার বিষয়টি ঠিক করে তা অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে আগামী মাসে পেশ করা হবে। তিনি বলেন, সবাই শুধু ঋণ খেলাপিদের নাম শুনে আসছে। কিন্তু ব্যাংকের অনেক ভালো ঋণ গ্রহীতা রয়েছেন, তাদের নাম ক’জন জানেন। এদের সংখ্যাই কিন্তু ব্যাংকিং খাতে বেশি। তাই এসব ভালো ঋণ গ্রহীতার নামও আমাদের জানা প্রয়োজন। তাদেরও প্রণোদনা দিতে হবে, তার জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ভালো ঋণ গ্রহীতাদের জন্য বেশ কয়েকটি প্রণোদনার কথা চিন্তা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, অনুমতি সাপেক্ষে নামের তালিকা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা। এদের অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঋণ প্রদান করা। এসব গ্রহীতার ব্যবসার ক্ষেত্রে কর রেয়াত দেয়ার জন্য এনবিআরকে অনুরোধ জানানো এবং ভালো গ্রহীতা হিসেবে কার্ড দেয়া উল্লেখযোগ্য। একই সাথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভালো গ্রহীতাদের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হতে পারে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ এখন ৪৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ২২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর আগে সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ৩৪৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ কমেছে ১২৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
কিন্তু এই খেলাপি ঋণের বিপরীতে বিপুল অঙ্কের ঋণ বিভিন্ন ব্যাংক প্রদান করেছে যার বেশির ভাগই ভালো অবস্থায় রয়েছে। এই ঋণ আবার নিয়মিত পরিশোধও করা হচ্ছে।