২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমদানি বন্ধের দাবি মিল মালিকদের লবণের দরপতনে চাষিরা দিশেহারা

পটিয়া ইন্দ্রপোল লবণ শিল্পে অপরিশোধিত লবণ খালাস করছেন শ্রমিকেরা : এস এম রহমান -

বিদেশ থেকে অবাধে লবণ আমদানির কারণে চলতি মওসুমে উৎপাদিত লবণের দর পড়ে যাওয়ায় হাজার হাজার চাষি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অন্য দিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আমদানিকৃত বিপুল পরিমাণ শিল্প ও গ্লোবাল লবণ বাজারজাত হওয়ায় জনস্বাস্থ্যও পড়ছে হুমকির মুখে। চলতি বছর ৫৯ হাজার ৫৬৪ একর মাঠে ১৬ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন লবণের চাহিদার বিপরীতে এরই মধ্যে গতকাল পর্যন্ত তিন লাখ ৯০ হাজার টন উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিক লবণ প্রকল্পের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শামিম আলম।
অন্যদিকে গত বছর গ্লোবাল লবণের (সোডিয়াম সালফেট) চাহিদা ছিল এক লাখ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টন। বিপরীতে আমদানি করা হয় প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টন আর শিল্প লবণের (কসটিক সোডা উৎপাদনের জন্য) চাহিদা ছিল প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টন আর আমদানি করা হয়েছে সাত লাখ টনের উপরে। শিল্প কারখানায় ব্যবহারের বিপরীতে আমদানিকৃত লাখ লাখ টন উদ্বৃত্ত লবণ জনস্বাস্থ্য ও আইনের তোয়াক্কা না করে অসাধু চক্র প্যাকেট করে বাজারজাত করছে।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, গত মওসুমে (২০১৭-১৮) লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ লাখ টন আর চাহিদা ছিল ১৬ লাখ ২১ হাজার টন। বিপরীতে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এক লাখ ২৮ হাজার টন উৎপাদন ঘাটতি হয়। এর আগের বছর (২০১৬-১৭) উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ লাখ টন আর চাহিদা ছিল ১৫ লাখ ৫৭ হাজার টন। ফলে দুই লাখ ১২ হাজার টন ঘাটতি নিয়ে মওসুম শেষ হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দুই লাখ ১২ হাজার টন ঘাটতির বিপরীতে বিদেশ থেকে পাঁচ লাখ টন লবণ আমদানি করে। এ কারণে গত মওসুমে চাহিদার বিপরীতে এক লাখ ২৮ হাজার উৎপাদন ঘাটতি হলেও আমদানিকৃত উদ্বৃত্ত লবণ থাকায় চলতি বছর বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়নি।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সনুয়ার বাসিন্দা ও লবণচাষি আমির হোছাইন বলেন, লবণ আমদানি করায় লাভতো দূরের কথা লবণের উৎপাদন খরচও উঠছে না। তিনি বলেন, প্রতি মণ লবণ উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩২৩ টাকা আর গতকাল পাইকারি বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০০ টাকায়। এ কারণে উপকূলের হাজার হাজার চাষি উৎপাদিত লবণ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
দেশের অন্যতম পটিয়া লবণ শিল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নৌপথে আনা কক্সবাজার কুতুবদিয়া চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় উৎপাদিত লবণ খালাস করছে শ্রমিকেরা। এ সময় লবণ কারখানা হেদায়েত সল্টের মালিক মোরশেদ হোসেন, ইসলামবাদ সল্টের মালিক অহিদুজ্জামান বলেন, দুই মণের প্রতি বস্তা লবণ তারা ক্রয় করছেন ৫২০ থেকে ৬০০ টাকায়। দুই দিন আগে ক্রয় করেছেন ৪৮০ টাকা থেকে ৫২০ টাকায়। লবণ কারখানার মালিকরা বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরাই মাঠ থেকে অপরিশোধিত লবণ ক্রয় করে কারখানায় সরবরাহ করেন।
হেদায়েত সল্টের মালিক বলেন, লবণ ক্রাশ করে তাতে আয়োডিন মিশিয়েও তারা প্রতি বস্তা লবণ পাইকারি বিক্রি করছেন ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়। আর প্যাকেট করে প্রতি কেজি পাইকারি লবণ বিক্রি করছেন ১২ থেকে ১৩ টাকায় আর তা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ টাকায়।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকার যদি লবণ আমদানির ক্ষেত্রে সতর্ক না হয় তাহলে লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা শিল্পকারখানায় ব্যবহারের বিপরীতে আমদানিকৃত লাখ লাখ টন উদ্বৃত্ত লবণ প্যাকেট করে বাজারজাত করছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে এসব ক্ষতিকর লবণ প্যাকেট করার সময় জব্দ করা হয়েছে যা খুবই উদ্বেগজনক। লবণশিল্প রক্ষা করতে তিনি জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, সোডিয়াম সালফেট মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি আমদানির ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ সতর্কতার ওপর জোর দেন। গতকাল সোমবার বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, লবণশিল্প প্রসারের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে লবণ আমদানির কোনো সিদ্ধান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নেয়নি। অন্য দিকে ইন্ডাস্ট্র্রিজ ও গ্লোবাল লবণ শিল্প কারখানায় ব্যবহার না করে বাজারজাত করার বিষয়ে তিনি বলেন, লবণ মিল মালিক সমিতির নেতারা মন্ত্রীর সাথে লবণ আমদানিসহ লবণ শিল্প প্রসারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেছেন। লবণ সমিতির তরফ থেকে ইন্ডাস্ট্র্রিজ ও গ্লোবাল লবণ শিল্পকারখানায় ব্যবহার না করে বাজারজাত করার বিষয়ে অভিযোগ করা হলে মন্ত্রী তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement