২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আখেরি মুনাজাত মঙ্গলবার

বৈরী আবহাওয়ার কবলে সা’দ অনুসারীদের ইজতেমা

-

তাবলিগ জামাতের ভারতের নিজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা সা’দ-এর উপস্থিতি ছাড়াই ঢিলেঢালাভাবে চলছে তার অনুসারীদের ইজতেমা। ফাঁকা মাঠে চলছে সা’দপন্থী তাবলিগ দায়িত্বশীলদের বয়ান। মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে খণ্ড খণ্ড হয়ে আবার কোথাও একত্রিত হয়ে বয়ান শুনছেন মুসল্লিরা। রোববার সকালে আকস্মিক বৃষ্টিতে মাঠে অনেকে জবু-থবু হয়ে পড়েন। বৈরী আবহাওয়ায় সা’দপন্থীদের ইজতেমার বিঘœ ঘটায় তাদের আখেরি মুনাজাত একদিন পিছিয়ে মঙ্গলবার করা হয়েছে। ইজতেমার আগে ত্রিপক্ষীয় (প্রশাসনের সাথে তাবলিগের বিবদমান দুই গ্রুপের) সমঝোতা অনুযায়ী মাওলানা জোবায়েরপন্থী তাবলিগের বৃহত্তর অংশের আখেরি মুনাজাত শনিবার ও সা’দপন্থীদের সোমবার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সোমবারের পরিবর্তে মঙ্গলবার আখেরি মুনাজাতের সিদ্ধান্ত নেন সা’দপন্থী তাবলিগ জামাতের দায়িত্বশীলরা। প্রথমে এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো অনুমতি না মিললেও পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে তারা মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বর্ধিত করেন। যদিও এর আগেই তারা মঙ্গলবার আখেরি মুনাজাত করার সিদ্ধান্ত ময়দানে উপস্থিত সাথীদের জানিয়ে দেন।
রোববার ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, ইজতেমার প্রথমাংশের উপস্থিতির চেয়ে এক-তৃতীয়াংশেরও কমসংখ্যক লোক ময়দানে অবস্থান করছেন। বিদেশী মেহমানরও চলে যাচ্ছেন। গতকাল রোববার পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে প্রায় ২০০ বিদেশী তাবলিগ অনুসারী অবস্থান করছিলেন। ইজতেমায় নেয়া সরকারের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের মতোই বলবত রয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল জানান, দ্বিতীয়বারের ইজতেমায়ও রয়েছে সব আয়োজন। নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের দেখভাল প্রথম ধাপের মতোই অব্যাহত রয়েছে। খুবই সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা চলছে বলে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান। গাজীপুর পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান জানান, বিশ^ ইজতেমা ঘিরে টঙ্গীর পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। অন্য দিকে গাজীপুর সিটি মেয়র মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রথম ধাপের ইজতেমার মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কর্মীবাহিনী নিয়ে মাঠ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা। দ্বিতীয় ধাপের মুসল্লিদের অংশগ্রহণের জন্য ইজতেমা ময়দান পুরোপুরি প্রস্তুত করে দেয়া হয়েছে।
রোববার ফজর নামাজের পর তাবলিগের শীর্ষ মুরুব্বি ভারতের মাওলানা ইকবাল হাফিজের আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে দুই দিনের ইজতেমা শুরু হয়। ভোর রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলে ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী বৃষ্টি ও বাতাসে মুসল্লিরা জবু-থবু হয়ে পড়েন।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, প্রথম দিনেই বৈরী আবহাওয়ায় সা’দপন্থীদের ইজতেমার বিঘœ ঘটনায় আয়োজকেরা একদিন সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন। তারা এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে সময় বর্ধিত করেছেন। তিনি আরো জানান, ইজতেমা সমাপ্তির পর ইজতেমা ময়দানে থাকা সব মালামাল প্রশাসনের হেফাজতে থাকবে। উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গতকাল ময়দান ঘুরে দেখা যায়, ময়দানের ভেতরের অনেক অংশ ফাঁকা অবস্থায় পড়ে আছে। মাঠে অবস্থানতর মুসল্লিরা এবাদত বন্দেগিতে সময় কাটাচ্ছেন। তারা জিকির আসকারে আল্লাহর গুণগানে ব্যস্ত রয়েছেন। বৃদ্ধ, যুবক, তরুণসহ সব বয়সের মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। সা’দ গ্রুপের মুরুব্বিরা বিদেশী কামরায় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, যোবায়ের গ্রুপের লোকেরা প্রথম ধাপের ইজতেমা শেষে চলে যাবার সময় বাথরুমের কমোড ভেঙে চুরে রেখে গেছে। গ্যাসের লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে। মাইকের সংযোগের তার ছিঁড়ে ফেলেছে। বহু পানির মোটর নিয়ে গেছে।
বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে মুসল্লিরা
তাবলিগ জামাতের অন্য অংশের বিশ^ ইজতেমার প্রথম দিনে রোববার সকালে বৃষ্টি শুরু হলে ময়দানে অবস্থানরতরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে তাবলিগ সাথীদের সাথে থাকা মালছামানা ভিজে একাকার হয়ে যায়। সাথীরা বিভিন্নভাবে নিজেদের বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালান। বৃষ্টির কারণে অনেকে রান্না-বান্নাও করতে পারেননি সকালে। তবে প্রাকৃতিক এ দুর্যোগকে তাবলিগ সাথীরা আল্লাহর রহমত হিসেবে মেনে নেন। তারা বলেন, বৃষ্টি, বাদল, রোগ, শোক হচ্ছে আল্লাহর ঈমানী পরীক্ষা। সকাল ৯টার দিকে বৃষ্টি থেমে গেলে মাঠে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।
রোববার বয়ান করলেন যারা
বাদ ফজর ভারতের মাওলানা ইকবাল হাফিজ উর্দুতে বয়ান করেন এবং তা বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের আব্দুল্লাহ মুনসুর। বাদ জোহর বয়ান করেন নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা আব্দুল বারী। বয়ানটি বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ। এ ছাড়া বাদ আছর বাংলাদেশের মাওলানা মোশাররফ হোসেন ও বাদ মাগরিব বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা শামীম আহমদ বয়ান করেন। এ বয়ানটি অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফ আলী।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল