২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মা-বাবার পাশে আল মাহমুদ

মোড়াইলে তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে কবি আল মাহমুদের দাফন :নয়া দিগন্ত -

বাংলাসাহিত্যের কিংবদন্তি কবি আল মাহমুদের তৃতীয় ও শেষ নামাজে জানাজা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দক্ষিণ মোড়াইলের পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফনসম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল রোববার বাদ জোহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে কবির শেষ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কবির জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণী-পেশার হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। জানাজা শেষে বিকেল ৩টার দিকে তাকে দাফন করা হয়।
জানাজায় অংশ নিয়ে কবির মামা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, আমরা আমাদের একজন অভিভাবক হারিয়েছি। আমাদের মাথার ওপর থেকে ছায়া চলে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘কবির শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। বাংলাসাহিত্যে তার অবদান এই দেশের মানুষ মনে রাখবে। তিনি আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন তার কর্মের মাধ্যমে।’ বেলা সোয়া ১১টায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কবির লাশ নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে রাখা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ কবির ভক্তরা এ সময় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে শনিবার রাত ৮টা ১০ মিনিটে কবির লাশ নিজ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোড়াইল গ্রামের মোল্লা বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
কবির লাশ পৌঁছাতেই শুরু হয় শুভাকাক্সক্ষীদের আর্তনাদ। উপস্থিত কেউই যেন অশ্রু সংবরণ করতে পারছিল না। বাংলাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান এ কবির বিয়োগে হাহাকারে ছেয়ে যায় তার বাড়ির চারপাশ। বিমর্ষ হয়ে পড়েন কবির ভক্ত ও স্বজনরা। শুধু মোড়াইল মোল্লা বাড়িই নয় শহরজুড়ে নেমে আসে বিষাদের ছায়া।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এই কবি রাজধানীর ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত ১১টার কিছু পরে ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল মাহমুদের বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই মোড়াইলের মোল্লা বাড়িতে জন্ম নেয়া আল মাহমুদ দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকার কারণে মাঝে মধ্যে অল্প সময়ের জন্য পৈতৃক নিবাসে আসতেন তিনি। তবে বছর খানেক আগে থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসা-যাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন।
কবির ভাতিজা মীর রব্বান হোসেন বলেন, কাকা মাঝে মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এলেও নিজ পৈতৃক ভিটাতে থাকেননি প্রায় এক যুগেরও বেশি সময়। আর অসুস্থতাজনিত কারণে গত এক বছর ধরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসতে পারেননি।
তিনি বলেন, নিজ বাড়িতে যখন আসতেন তখন তার ভক্ত ও শুভাকাক্সক্ষীদের ভিড় লেগে থাকত। তাদের সাথে গল্প করে অনেক সময় দিতেন। বেশির ভাগ সময় বসে থাকতেন বাড়ির সামনের পুকুর ঘাটে। অনেক সময় বড়শি দিয়ে মাছও শিকার করতেন।
রব্বান আরো বলেন, কাকার পৈতৃক ভিটায় আগের দিনের একটি চৌচালা ঘর বা রাউডি ঘর ছিল। যখন উনি আসতেন ওই ঘরে অবস্থান করতেন। সেখানে ঘরটি ভেঙে এখন ভবন করা হয়েছে। এতে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছেন। এরপর থেকেই উনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসা কমিয়ে দিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেয়া কবি আল মাহমুদ ১৯৭৪ সালে গণকণ্ঠের সম্পাদক থাকাকালে কারাবরণ করেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক পদ থেকে অবসর নেন তিনি। সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি একুশে পদক ও বাংলা একাডেমিসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement