নতজানু নীতির কারণেই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ মিয়ানমারের মানচিত্রে : বিএনপি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণেই বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে মিয়ানমার তাদের মানচিত্রে নিজেদের অংশ দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, মিডনাইট ভোটের সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছে। বার বার মিয়ানমার সরকারিভাবে তাদের ওয়েবসাইটে সেই দেশের মানচিত্রে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে নিজের অংশ হিসেবে দেখাচ্ছে। নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে মিয়ানমার বাংলাদেশকে নিয়ে দুঃসাহস দেখাতে স্পর্ধা দেখাচ্ছে বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে মিয়ানমার তাদের দেশের অংশ নিতে চাইবে আর আমরা কিছুই করব না। শুধু দূতকে ডেকে নিয়ে প্রতিবাদ করলেই সব শেষ হয়ে যায় না। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত।
রিজভী বলেন, এ বিষয়ে একবার নয় কয়েকবার একই ঘটনা মিয়ানমার ঘটিয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাসেও তারা শ্রম, অভিভাসন, জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়সহ সে দেশের অন্তত তিনটি ওয়েবসাইটের মানচিত্রে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে তাদের দেশের অংশ দেখানো হয়। তখনো এই গণবিচ্ছিন্ন সরকার কেবল নামকাওয়াস্তে প্রতিবাদ করে চুপ হয়ে যায়। বার বার একরম ঘটনা ঘটাচ্ছে তারপরও বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। এ সরকার দেশ ও মানুষের প্রতি তাদের সামান্যতম দায়বদ্ধতা নেই। রাতে অন্ধকারে কাপুরুষের মতো জনগণের ভোট ডাকাতি করে তারা মসনদ দখল করেছে। দেশ গোল্লায় যাক তাতে তাদের মাথাব্যথা নেই। রোহিঙ্গা সমস্যা সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণেই সমাধান আসছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিজিবির গুলিতে নিহতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গ : রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বিজিবির গুলিতে নিহতদের পরিবারে যখন শোকের মাতম চলছে তখন নিহতদের নামে আবার মামলা দেয়া হয়েছে। হরিপুরের বহরপুর ও রুহিয়া গ্রামের ২৭২ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে বিজিবি। একটি মামলার এজহারে বিজিবির গুলিতে নিহত শিক্ষক নবাব আলী ও কৃষক সাদেক আলীরও নাম রয়েছে। ভয়ে আতঙ্কে এখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে এলাকা। রক্ষকরাই এখন ভক্ষক হয়ে উঠেছে। মৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের যেন সরকারের প্রধান কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, সীমান্ত পাহারা দেয়ার কাজ বিজিবির। তারা সীমান্ত পাহারা না দিয়ে বিএসএফ-এর মতোই বাংলাদেশীদের হত্যা করছে।
কবি আল মাহমুদ আমাদের চেতনার অক্ষয়জ্যোতি : এ সময় কবি আল মাহমুদের লাশ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনার দাবি জানান রিজভী। তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামী এই মুক্তিযোদ্ধার লাশ জাতীয় শহীদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নিয়ে আসা হোক। সে অনুমতি সরকারের দেয়া উচিত। নইলে জাতীয় শহীদ মিনার যে দলীয়করণ হয়ে গেছে এটাই বোঝা যাবে।
কবির প্রতি দলের শ্রদ্ধা নিবেদন করে রিজভী বলেন, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও আমাদের চেতনার অক্ষয়জ্যোতি কবি আল মাহমুদের ইন্তেকালে গোটা দেশবাসীর সাথে আমরাও গভীরভাবে শোকাভিভূত। কিংবন্তিতুল্য কবির প্রতি বিএনপি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে।
তিনি বলেন, এদেশের প্রগতিশীল আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধিকারের লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ কোথায় নেইÑ কবি আল মাহমুদের কাব্য প্রতিভা, তার যে সাহিত্য প্রতিভা। আমরা যখন একুশে ফেব্রুয়ারিতে যাই প্রভাতফেরিতে, তখন আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো গানের পরেও আমরা আরো যেসব কবিতা আবৃত্তি করি, গান গাইÑ ‘ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ দুপুর বেলার অপ্ত’ এই যে গানগুলো, এগুলো আমাদের কবি আল মাহমুদকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে তার অনন্য অবদান রয়েছে আল মাহমুদের কবিতা ও গল্প থেকে আমরা উদ্ধৃতি দেই।
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সাহিদা রফিক, কেন্দ্রীয় নেতা এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।