২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি তারুয়া সমুদ্রসৈকত

-

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে নদী বেষ্টিত একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা। পূর্বে মেঘনা, উত্তরে ইলিশা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এর মধ্যে তিন হাজার ৪০৩ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ব-দ্বীপ জেলা ভোলা। রুপালি ইলিশ, ধান আর সুপারির জন্য বিখ্যাত এ জেলা। এই জেলার উপশাখা হিসেবে রয়েছে চর মানিক, চর জব্বার, চর নিউটন, চর নিজাম, চর জংলী, চর মনপুরা, চর ফয়েজ উদ্দিন, চর জহিরউদ্দিন, চর কচুয়া, চর সৈয়দ, ভাসান চর, চর পাতিলা, চর কুকরী মুকরী ও ঢালচরসহ ছোট বড় অসংখ্য চর। এসব চরের মধ্যে লুকিয়ে আছে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তসহ অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানে না এলে অনুভব করা যাবে না এর সৌর্ন্দয।
জেলা শহর থেকে দেড় শ’ কিলোমিটার দূরে এই তারুয়া সমুদ্রসৈকতের অবস্থান। এক শ’ পয়ত্রিশ কিলোমিটার পাকা সড়কের পর পনের কিলোমিটার নৌপথ পেরিয়ে সেখানে যেতে হয়। তারুয়া সমুদ্রসৈকতে পর্যটকেরা একই সাথে উপভোগ করতে পারেন বিশাল সমুদ্রের বিস্তীর্ণ জলরাশি। নানা জাতের পাখিদের কলকাকলি, বালুকাময় মরুপথ আর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ছায়াঘন মনকাড়া নিবিড় পরিবেশে সময় কাটানোর সুযোগ। বৈচিত্র্যময় প্রাণী আর সাগরের উত্তাল গর্জন সব মিলিয়ে মায়াবী হাতছানি। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে তারুয়া দ্বীপটিকে সাজিয়ে তুলেছেন। তবে সেখানে এখনো গড়ে উঠেনি মানুষের বসবাস। দ্বীপটিতে হরিণ ও ভাল্লুুকসহ নানা প্রাণী ও দৃষ্টিনন্দন মাটি রয়েছে। তারুয়ার সৈকতে দেখা মিলবে চকচকে সাদা বালি আর লাল কাঁকড়ার লুকোচুরি। পাশাপাশি দেখা মিলবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য। সবুজ বৃক্ষের সমারোহ আর পাখিদের কলরবে মুখরিত তারুয়া দ্বীপ পর্যটন এলাকা হিসেবে গুরুত্বের দাবি রাখে। কিন্তু তারুয়া সমুদ্রসৈকতের এই প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের কথা দেশবাসী তো দূরের কথা ভোলার বহু মানুষের কাছে এখনো অজানা। কর্মচাঞ্চল্য জীবনের মধ্যে কিছুটা সময় অবকাশ যাপনের জন্য প্রকৃতিপ্রেমীরা ইচ্ছে করলেই এ চরে এসে ঘুরে যেতে পারেন।
তারুয়া ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল
ঢালচরের ৩১.৩১ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২৮.২০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সুবিশাল বনাঞ্চল। এর মধ্যে তারুয়ার বন অন্যতম। এই তারুয়া বনে রয়েছে গেওয়া, গড়ান, কেওড়া, বাইন, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। শীত এলেই এখানে দেখা মিলবে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পাখির। এখানে পরিকল্পিতভাবে বনাঞ্চল শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। কোনো হিংস্র পশুর ভয় না থাকলেও বনে রয়েছে শিয়াল, বনবিড়াল, হরিণ, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এই বাগানের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটু ভেতরে প্রবেশ করলেই মনে হবে এ যেন আরেক ভুবন। সেখানে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিশাল এক খণ্ড শীতল ছায়াবিশিষ্ট মাঠ। স্থানীয়দের কাছে জায়গাটা বরইতলা নামে পরিচিত।
তারুয়া সমুদ্রসৈকত
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের শেষ প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের অবস্থান। তারুয়ার সাদা বালির বিশাল সমুদ্রসৈকতে দেখা মিলবে নোনা পানির ঢেউ। সেখানে সাদা বালি আর নোনা পানিতে স্বাদ মিলবে কক্সবাজার অথবা কুয়াকাটা সৈকতের। পাশাপাশি সৈকতে দেখা মিলবে লাল কাঁকড়ার। বালির উপরে ছোট ছোট পা দিয়ে দৌড়ে চলে এসব লাল কাঁকড়ার দল। মানুষের অবস্থান টের পেলে এরা চোখের নিমিষেই লুকিয়ে পড়ে বালির গর্তে।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত
দিনের প্রথম প্রহরে তারুয়া সৈকতে দাঁড়ালে দেখা যাবে সমুদ্র থেকে ভেসে ওঠা লাল টকটকে সূর্য। সিঁড়ি বেয়ে এক পা দু’পা করে আকাশের পথে যাচ্ছে। আবার সন্ধ্যায় দেখা মিলবে সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে সূর্যের মিসে যাওয়া দৃশ্য।
বিনোদন কেন্দ্র
এই সমুদ্রসৈকতের পাশে রয়েছে বিশাল তারুয়া বন। বনের ভেতরেই প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা শীতল ছায়া বেষ্টিত মাঠ। সেখানে একাধিক বাংলা ছায়াছবির দৃশ্য শুটিং হয়েছে। এই চরেই বাংলা ছায়াছবি ‘অনেক সাধের ময়না’-এর বাসরঘর ও কয়েকটি গানের দৃশ্যের চিত্রায়ন হয়।
এলাকাটির নামকরণ
প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ বছর আগে চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচরের পাশে সাগরের বুকে জেগে ওঠে সবুজে ঘেরা এই এলাকা। জেগে ওঠার পর থেকেই একে ঘিরে মাছ শিকার করতেন স্থানীয় জেলেরা। জেলেরা যখন নদীতে জাল ফেলতেন, তখন শত শত তারুয়া নামের এক প্রকার মাছ উঠে আসত তাদের জালে। হয়তো সে কারণেই এ এলাকাটির নামকরণ করা হয়েছে তারুয়া, যা এখন সবার কাছে তারুয়া সমুদ্রসৈকত নামে পরিচিত।
নবাগত ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক জানান, ভোলায় পর্যটনের সম্ভাবনা প্রচুর। কারণ এখানকার ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে, যাকে বলে ইকোটুরিজম। আমরা সেটা উৎসাহিত করার চেষ্টা করব। এখানে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে আরো অবকাঠামো তৈরি হবে। দেশী-বিদেশী বেশি বেশি পর্যটক বিনোদন ও মুক্ত হাওয়া উপভোগ করতে ছুটে আসবে এখানে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী বাস্তবায়নের আহ্বান ৩ গণকবরে ৩৯২ লাশ, ২০ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত কবর দিয়েছে ইসরাইল! মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিবকে আটকের অভিযোগ হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের

সকল