২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পরীক্ষামূলকভাবে দু’টি চালু

ডিএনসিসির ১১ ইউটার্ন প্রকল্পের ৯টিই অনিশ্চিত

রাজধানীর উত্তরা রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের সামনে চালু হওয়া ইউটার্ন : নূর হোসেন পিপুল -

যানজট নিরসনে রাজধানীর সাতরাস্তা থেকে উত্তরা আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত মোট ১১টি ইউটার্ন নির্মাণে প্রকল্প নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনিসুল হক। তার মৃত্যুর পর নানা বাধায় এ প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। গত সপ্তাহে উত্তরার রাজলক্ষ্মীতে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ইউটার্ন চালু করা হয়েছে। র্যাব-১ কার্যালয়ের সামনে আরো একটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। কিন্তু বাকি ৯টি ইউটার্ন নির্মাণ এখনো শুরুই হয়নি। সরকারের অনিচ্ছায় বাকিগুলো শুরু করা যাচ্ছে না বলে ডিএনসিসি ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ফলে এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, আনিসুল হক ডিএনসিসির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর গাজীপুর থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত সড়কের যানজট নিরসনের উদ্যোগ নেন। এ জন্য ইউটার্ন নির্মাণের প্রস্তাব দেন। পরে বিভিন্ন সেবা সংস্থা, মেট্রো রেল প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক হয়। এক পর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের সাথে সমন্বয় করে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত ১১টি পয়েন্টে ইউটার্ন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ইউটার্ন নির্মাণের পয়েন্টগুলো হলো : তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়, কোহিনূর কেমিক্যাল মোড়, মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি, বনানী কবরস্থান, বনানী ওভারপাস, শ্যাওড়া, উত্তরার কাওলা, র্যাব-১ কার্যালয়ের সামনে ও রাজলক্ষ্মী। এ কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় এসএম কনস্ট্রাকশনকে। কিন্তু তারা কাজ শুরু করতেই বিপাকে পড়ে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বিভিন্ন পয়েন্টের সরকারি জমির জন্য টাকা দাবি করে। কিন্তু এতে রাজি হয়নি সিটি করপোরেশন। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়, সওজ ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনার পরও সমাধান আসেনি। তবে এর মধ্যেই উত্তরার রাজলক্ষ্মী ও র্যাব-১ কার্যালয়ের সামনে ইউটার্ন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রাজলক্ষ্মীর ইউটার্ন নির্মাণ শেষে গত সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। আর র্যাব-১ কার্যালয়ের সামনের ইউটার্নের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। স্বল্প পরিসরে গাড়ি চলাও শুরু হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলার কারণে জসিমউদ্দীন মোড় ও বিমানবন্দর মোড়ে টিনের বেড়া দেয়ায় গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে কাওলা এলাকায় রোড ডিভাইডার ভেঙে গাড়ি ইউটার্ন নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজলক্ষ্মী মোড়ে এ ক্যাটাগরির ইউটার্ন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বিমানবন্দর মোড় হয়ে যাওয়া গাড়ি রাজলক্ষ্মী ইউটার্ন হয়ে ঘুরতে পারছে। একইভাবে আব্দুল্লাহপুর থেকে আসা গাড়ি রাজলক্ষ্মীতে এসে ইউটার্ন নিতে পারছে। আর যেসব গাড়ি সরাসরি যেতে চায় তারা সোজাসুজি চলে যেতে পারছে। কোনো গাড়িকেই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না। এতে যানজট অনেক কমে গেছে। র্যাব-১ কার্যালয়ের সামনের সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে বি ক্যাটাগরির ইউটার্ন। এখানে অপেক্ষাকৃত কম জায়গা নিয়ে ইউটার্ন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ইউটার্ন দিয়েও গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই এটি পুরোপুরি চালু হয়ে যাবে বলে জানা গেছে। গাড়িচালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইউটার্ন ব্যবহার করে গাড়িগুলো ডানে বাঁক নিয়ে চলে যেতে পারায় ক্রসিংয়ে আগে যেভাবে গাড়িগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, এখন আর সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না। এতে সময় বেঁচে যাচ্ছে। কামরুল ইসলাম নামে এক গাড়িচালক জানান, ইউটার্ন চালু হওয়ায় কোনো ক্রসিংয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে না। এতে যানজটে পড়ার কোনো ভয় নেই। গাড়ি দ্রুত চলে যেতে পারছে। এটা একটা ভালো উদ্যোগ।
ইউটার্নের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এম কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী হাসিবুর রহমান শাহিন নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইউটার্নগুলোর কাজ শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। রাজলক্ষ্মী মোড়ে ইউটার্ন চালু হওয়ায় মানুষ সুফল পাচ্ছে। অন্যগুলোও নির্মাণ করতে পারলে ভালো হতো। সব ইউটার্ন চালু হলে তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কের যানজট অনেকটাই কমে যেত।
ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো: জামাল মোস্তফা নয়া দিগন্তকে বলেন, ইউটার্নের কাজ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র দুইটি শেষ করা সম্ভব হয়েছে। অন্যগুলোও আমরা দ্রুত করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই পয়েন্টগুলোতে ইউটার্নের কাজ করলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রো রেলের কাজ ব্যাহত হবে। এ জন্য অন্যগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মেট্রো রেল ও এক্সপ্রেস ওয়ের নিচের অংশের কাজ শেষ হলেই ইউটার্নের কাজ শুরু হবে।
যেভাবে যানজট কমায় ইউটার্ন : রাজধানীর সড়কগুলোর ক্রসিং পয়েন্টে যানজট লেগে থাকা নিত্য বিষয়। মূলত ক্রসিংগুলোর যানজট কমানোই ইউটার্ন নির্মাণের উদ্দেশ্য। ক্রসিং পয়েন্টে রাস্তার দুই পাশের কিছু জমি নিয়ে সেখানে ডানে টার্ন নেয়ার জন্য একটি লেন করে দেয়া হয়। সেই লেন ব্যবহার করে গাড়িগুলো ডানে টার্ন নিতে পারে। এতে যানবাহনগুলোকে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। বিদ্যমান রাস্তার ওপরেই তৈরি করা যায়। বিটুমিন দিয়ে তৈরি রাস্তার মতো যাতে দ্রুত ভেঙেচুরে না যায় সে জন্য ইউটার্নের লেনগুলো তৈরি করা হয় কংক্রিট দিয়ে। আর ওই পয়েন্টে লেনের বাইরে যেটুকু উš§ুক্ত স্থান থাকে সেখানে করা হয় ফুলের বাগান। এতে যানজটের যেমন নিরসন হয়, তেমনি নগরীর সৌন্দর্যও বাড়ে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল