২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোই মূল চ্যালেঞ্জ

মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অনর্জিত ; আমানতের চেয়ে বেশি বাড়ছে ঋণ ; রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না
-

অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ডিসেম্বর শেষে অর্জিত হয়েছে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। এক দিকে ব্যাংকে আমানতের প্রবাহ কমছে। বিপরীতে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। এতে কমে যাচ্ছে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা। বাড়ছে বিনিয়োগ ব্যয়। কাক্সিক্ষত হারে রাজস্বও আদায় হচ্ছে না। এতে বাড়ছে সরকারের ব্যাংক ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এমনি পরিস্থিতিতে নতুন সরকারের বিনিয়োগ বাড়ানোই হবে মূল চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন বছরে ব্যাংকিং খাতে আমানত সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করছে। আমানত প্রবাহ কমে যাচ্ছে। কিন্তু ঋণপ্রবাহ কমছে না। এ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তহবিল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত নভেম্বরে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। কিন্তু ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশের ওপরে। অর্থাৎ আমানত যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে ঋণের প্রবৃদ্ধি। ব্যাংকাররা আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন সঞ্চয়পত্রের ঋণের সুদ। সঞ্চয়পত্রের ঋণের সুদ আমানতের চেয়ে বেশি। এ কারণে বেশি মুনাফার আসায় আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। আবার কেউবা পুঁজিবাজারসহ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করছে। এতে কমে গেছে আমানতপ্রবাহ। আবার কোনো কোনো ব্যাংক বলছে, ভালো বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় তারা ব্যাংকগুলোর ঋণ নিরাপদ রাখতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বিল বন্ডে বিনিয়োগ করছে। এর ফলে এক দিকে যেমন আমানত কমছে, অপর দিকে সরকারের কোষাগারে তহবিল দীর্ঘমেয়াদে আটকে গেছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এ দিকে অবলোপনসহ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকাই কুঋণ বা মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের ঋণ দেয়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। অপর দিকে বেড়ে যাচ্ছে সরকারের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়। এই অবস্থায় ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর আমানতের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে ঋণের সুদ।
এ দিকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। যেমনÑ ১২ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। সে অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কথা ছিল ৭৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬২ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। ফলে চার মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৭ শতাংশ। রাজস্ব ঘাটতির কারণে বছরের বাদবাকি সময়ে সরকারকে রাজস্ব আদায়ে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে।
এ দিকে সরকরের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। অন্যথায় ব্যাংক ঋণ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকার ইতোমধ্যে ব্যাংক ঋণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে ঋণ নিচ্ছে। সরকার ব্যাংক ঋণ বাড়িয়ে দিলে বেসরকারি বিনিয়োগের সক্ষমতা ব্যাংকগুলোর আরো কমে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ সপ্তাহে ছয় মাসের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। নতুন সরকারের প্রথম মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে জোর দিতে হবে। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ বাড়ানোই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। ব্যাংকগুলোতে টাকার সঙ্কট না কাটলে বিনিয়োগ বাড়ানো কঠিন হবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোর পাহাড় সমান খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দিতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে আমানতের প্রবাহ না বাড়লে এবং সেই সাথে সরকারের ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণ নির্ভরশীলতা না কমালে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো কঠিন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement