২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন

বিভিন্ন জটিলতায় প্রকল্প প্রত্যাহারের প্রস্তাব

পুনর্গঠিত ডিপিপি না হওয়ায় অনুমোদন আদেশ স্থগিত ; সোয়া দুই হাজার কোটি টাকায় সারা দেশে ফ্ল্যাট নির্মাণ
-

মাঠপর্যায়ে প্রতিক্রিয়া, ফ্ল্যাটের মালিকানা ও উত্তরাধিকারসংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে উপজেলা পর্যায়ে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখছে না। খোদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ই এখন প্রকল্পটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে। অথচ এক বছর আগে ২০১৮ সালে মার্চের শুরুতেই দুই হাজার ২৭৩ কোটি ২১ লাখ টাকা প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক)। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গত এক বছরে প্রেরণ না করায় প্রকল্পের অনুমোদন আদেশ জারি করা হয়নি।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি প্রত্যাহারের জন্য আগামী মঙ্গলবারের একনেকে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সারা দেশের প্রতিটি উপজেলায় এই ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। একনেক সভার সিদ্ধান্ত ছিল, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ বিবেচনায় রেখে ভবনগুলোর নকশায় প্রতিটি ফ্ল্যাটে খোলা বারান্দা, ঘুলঘুলি, আলাদা টয়লেট ও বাথরুমের সংস্থান রাখতে হবে। ফ্ল্যাট বরাদ্দে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
একনেকের তথ্যানুযায়ী, প্রতি জেলা উপজেলায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে দুই হাজার ২৭৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। নির্মাণ করা হবে ৮ হাজারটি ফ্ল্যাট। দুই ইউনিট বিশিষ্ট ২৬৪টি এবং চার ইউনিট বিশিষ্ট ২৬৮টি অর্থাৎ মোট ৫৩২টি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ইউনিট বা ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ৯৮২ বর্গফুট। এতে তিনটি বেডরুম, একটি ড্রইং কাম ডাইনিং রুম, দু’টি বাথরুমসহ বারান্দা। এখানে মোট আট হাজারটি বিভিন্ন আকৃতির ফ্ল্যাট নির্মাণের কথা ছিল। তবে যেসব জেলা বা উপজেলায় তিন বা ততোধিক ভবনের প্রয়োজন হবে সেখানে আবাসন কমপ্লেক্স নির্মাণ করে অন্যান্য সুবিধা যেমনÑ অভ্যন্তরীণ সড়ক, লাইটিং ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। মূল খাসজমির ওপর ভবনগুলো নির্মাণ করা হবে। যেসব উপজেলায় খাসজমি পাওয়া না যায় সখানে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এক শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। অনুমোদন আদেশ জারি না হওয়ার কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা হয়নি বলে জানা গেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রত্যাহারের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলছে, প্রকল্পের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে প্রতিক্রিয়া, ফ্ল্যাটের মালিকানা, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতা, বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য চিহ্নিত বা প্রস্তাবিত এলাকা কিংবা নিকটবর্তী এলাকায় সুবিধাভোগী মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মসংস্থানের সুযোগের অপ্রতুলতা। এ ছাড়া বহুতল ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং লিফটবিহীন পাঁচতলা ভবনে বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধাদের ওঠানামার অসুবিধা হবে। তাই জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিবর্তে ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের নিজ বসতভিটায় বা প্রয়োজনে সরকারি খাসজমি বন্দোবস্ত দিয়ে একতলা বিশিষ্ট বাসস্থান নির্মাণ করাই যথার্থ হবে।


আরো সংবাদ



premium cement