২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক

মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ সন্ধ্যার পর ভুতুড়ে পরিবেশ

-

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রতিদিন নানা পেশার মানুষ অনেকটা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। দিনে দুই লেনের সরু রাস্তা দিয়ে কোনোভাবে চালকেরা গাড়ি চালাতে পারলেও সন্ধ্যার পরই ওই মহাসড়কে নেমে আসে ভুতুড়ে পরিবেশ। এ সময় শুধু গাড়ির চালকেরাই নন আতঙ্কে থাকেন নানা পেশার যাত্রীরাও। ভুক্তভোগী যাত্রী ও গাড়ির চালকেরা জানান, এই মুহূর্তে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এমনও সড়ক রয়েছে যেখানে সড়কবাতি এবং সড়ক বিভাগের দেয়া সাদা রঙের রেখার দাগও নেই। যার কারণে মাঝে মধ্যে চালকের অনিচ্ছা সত্ত্বেও মহাসড়কের কোথাও না কোথাও ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। অকালে ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ।
গত বুধবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত হাইওয়ে সড়ক সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে ধরা পড়ে এসব সমস্যা আর অনিয়মের চিত্র।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যেসব স্থান এই মুহূর্তে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলো দ্রুত মেরামত ও সংস্কার করার জন্য সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের দায়িত্বশীলদের দ্রুত হস্তপেক্ষপ কামনা করছেন সাধারণ যাত্রীরা ও চালকেরা। পাশাপাশি কোন কোন দফতরের গাফেলতির কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার রয়েছে সেটিও দ্রুত খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সড়ক ও মহাসড়ক নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা।
সর্বশেষ গতকাল সকালে ব্রাহ্মহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার শশই নামক স্থানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসের সাথে বালু ভর্তি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে লন্ডন এক্সপ্রেস নামের বাসের চালক আনোয়ার হোসেন ও অপর একজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। আহত হন আরো আট যাত্রী। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গত বুধবার সকাল ৯টায় ঢাকা থেকে মাইক্রোয় সিলেট যাওয়ার পথে ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজে উঠার আগেই ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় যানজটে আটকে পড়ে গাড়ি। কখনো কখনো এ সড়কে যানজটের কারণে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহনের চালকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এরপর দীর্ঘদিন ধরে গাউছিয়া এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করার কারণে ওই সড়কে প্রতিনিয়ত মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ওই দিন এ সড়কে যানজট চোখে পড়েনি। নরসিংদী শহর পেরিয়ে ইটাখোলা, মরজাল, বেলাবো, বারৈচা, নারায়নপুর, ভৈরব হয়ে আশুগঞ্জ পর্যন্ত সরু সড়ক দিয়ে দিনে চালকদের গাড়ি চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এ সময় দেখা যায় বহু স্থানে সড়কের মাঝখানে এবং দুই পাশে গাড়ি নিরাপদে চলাচলের জন্য যে সাদা রঙ দিয়ে মার্কিং থাকার কথা সেটি নেই। যার কারণে সন্ধ্যার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড, শাহবাজপুর, তান্দুরা, মাধবপুর, জগদ্বীশপুর তেমনিয়া, শায়েস্তাগঞ্জ, শমশেরনগর অনেক স্থানে ভুতুড়ে পরিবেশ নেমে আসে। অন্ধকার সড়ক দিয়েই বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য যানবাহনের চালকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এতে এ পথের বেশির ভাগ বাস ও পণ্যবাহী গাড়ির চালকেরা থাকছেন দুর্ঘটনা আতঙ্কে। এর মধ্যে দেখা গেছে বেশকিছু গাড়ির চালক ভুৃতুড়ে পরিবেশেই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন।
ঢাকা মাইক্রোবাস ও কার মালিক সমিতির সদস্য এবং ঢাকার মুক্তাঙ্গন জিপিও এলাকার গাড়িচালক স্বপন নয়া দিগন্তকে জানান, ‘বর্তমানে দেশে যত হাইওয়ে সড়ক আছে তার মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক। একে তো রাস্তাটি সরু দুই লেনের। তার ওপর সড়কের বেশির ভাগ স্থানে রঙ দিয়ে কোনো মার্কিং করা নেই। তাই দিনে আমরা কষ্ট করে দেখেশুনে গাড়ি চালালেও সন্ধ্যার পর এসব রাস্তা একেবারে অন্ধকার হয়ে যায়। তখন নানা আতঙ্কে থাকতে হয়। তিনি বলেন, অনেক রাস্তায় কোনো লাইটপোস্ট নাই, রাস্তার মাঝখানে, দুই পাশের অনেক স্থানে সাদা রেখা (দাগ) নেই। কী করব? দীর্ঘদিন ধরেই এই সড়কে দেখছি এমন ভুতুড়ে পরিবেশ।
ঢাকা-সিলেটগামী লন্ডন এক্সপ্রেস বাসের যাত্রী রাজ্জাক তালুকদার গতকাল এ প্রতিবেদককে জানান, রাস্তা সরুর পাশাপাশি গাড়ির চালকদের বেপোরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেও এই মহসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এরপর রয়েছে যত্রতত্র রিকশা, সিএনজিসহ ছোট ছোট গাড়ি। এসব গাড়িও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমার বাড়ি সিলেট। ট্রেনের টিকিট না পেলে সড়ক পথেই মাঝেমধ্যে আসা-যাওয়া করি। রাতের গাড়ি চলাচল চোখে দেখলে আর গাড়িতে উঠতে মন চায় না। কারণ সামনে থেকে যে গাড়িটি হেড লাইট ওপরে দিয়ে আসে সেটি সরাসরি সামনের গাড়ির চালকের চোখে পড়ছে। এভাবে পুরো রাতই আমাদের পার করতে হয় আতঙ্কে। চালকদের আস্তে গাড়ি চালাতে বললেও তারাও কর্ণপাত করেন না।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, ইদানীং মহাসড়কের অনেক রাস্তা নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। দেখতে পরিচ্ছন্ন। কিন্তু এসব সড়কের দুই লেনে কী কারণে মার্কিং নেই তা বুঝতে পারছি না। এটা না থাকার কারণেই চালকদের বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তা ছাড়া ভুতুড়ে এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের নজরদারিও কম। তিনি সংশ্লিষ্টদের দ্রুত সড়কে লাইটপোস্ট, সাদা রেখা চিহ্নহ্ন দেয়াসহ অন্যান্য সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement