১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পুলিশের জরাজীর্ণ থানা ভবন সংস্কার

তিন বছরের প্রকল্প সাত বছরে পড়েছে

আবারো এক বছর সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব ; ৬ বছরে কাজের অগ্রগতি ৭১ শতাংশ
-

জনগুরুত্বপূর্ণ বা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সব উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে ঢিমেতালে। নির্ধারিত সময়ে ও ব্যয়ে কোনো প্রকল্পই সমাপ্ত হচ্ছে না। দফায় দফায় ব্যয় সময় বাড়ছে। সারা দেশে পুলিশের ১০১টি জরাজীর্ণ থানা ভবন টাইপ প্ল্যানে নির্মাণ প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের দ্বিগুণ মেয়াদেও শেষ হয়নি। তিন বছরে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও তা এখন সাত বছরে পা রাখল।
জরাজীর্ণ থানা ভবনগুলোর অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সংস্কারের জন্য ৮১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১২ সালের অক্টোবরে প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পের কাজ ২০১৫ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু আজো প্রকল্পটি চলমান। ২৫টি থানার কাজ সমাপ্ত হতে আরো সময়ের প্রয়োজন বলে এক পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো: মনোয়ার আহমদ বলেছেন, কোনো প্রকল্পই নির্ধারিত মেয়াদে আমরা শেষ করতে পারছি না। এ কারণে প্রকল্পের সময় বাড়ানোর সাথে সাথে ব্যয়ও বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতা আরো বাড়াতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেশির ভাগ থানা ভবন জরাজীর্ণ ও পুরনো। থানা ভবনগুলো প্রায় এক শ’ বছর আগে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত। বেশির ভাগ থানা ভবনই সেমিপাকা। বর্তমানে ভবনগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে পুলিশ সদস্যরা এসব ভবনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি ছিদ্র হওয়া টিনের চাল দিয়ে ভবনের ভেতরে পড়ে। এতে কাগজপত্র ক্ষতিগ্রন্ত হয়।
সারা দেশে পুলিশের ৬১৫টি থানা রয়েছে। এর মধ্যে ২০৭টি জরাজীর্ণ। ২৭৭টি নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। জরাজীর্ণ এ ২০৭টি থানা ভবনের মধ্যে ১০১টি নতুন করে নির্মাণের জন্য এ প্রকল্প। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি শেষ না হওয়ায় ২০১৫ সালের জুনে দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। এখানে কোনো ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়নি। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল বর্ধিত মেয়াদে। কিন্তু সেটিও হচ্ছে না। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হলো ৭১ শতাংশ আর বাস্তব অগ্রগতি হলো প্রায় ৬৯ দশমিক ২২ শতাংশ। এখন আবারো মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরের এক পর্যালোচনার ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী, প্রকল্পের ১০১টি জরাজীর্ণ থানা ভবন নির্মাণকাজের মধ্যে ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সমাপ্ত হয়েছে ৫৮টির। কাজ এখনো চলমান আছে ৪১টি থানার। আর দরপত্র প্রক্রিয়াধীন আছে দু’টি থানার। তবে চলতি ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে আরো ১৮টি থানার নির্মাণকাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হবে এবং বাকি ২৫টি থানার নির্মাণকাজও দ্রুত শেষ করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক জানান। তিনি সভাকে জানান, বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে সমাপ্তির জন্য আরো এক বছর সময় বৃদ্ধির প্রয়োজন। ২০২০ সালের জুনে এটি সমাপ্ত করা সম্ভব হবে।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পুলিশ ও গণপূর্তের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পর বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান অবস্থায় প্রকল্প এলাকাভুক্ত ১৪টি থানার জমি পেতে জটিলতা সৃষ্টি ও বিলম্ব হয়। এ ছাড়া পিডব্লিউডির দরহার পরিবর্তন, ভবনের ডিজাইন পরিবর্তন, সবুজবাগ ও উত্তরা থানার অনুমোদিত তলার পরিমাণ ছয়তলা থেকে ৮-৯ তলা করা, সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
সূত্র বলছে, পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, প্রকল্পের কাজে মালামাল ব্যবহারের আগে (ইট, রড, সিমেন্ট, বালু ইত্যাদি) যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। নির্মাণসামগ্রী পরীক্ষার রিপোর্ট অবশ্যই পুলিশ সদর দফতরে প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement