২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ট্রাফিক জ্যাম হচ্ছে আশপাশ এলাকায়ও

ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় ভিড় : নয়া দিগন্ত -

মেলা শুরুর পর গতকাল দ্বিতীয় ছুটির দিনেই তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায়। তীব্র ভিড়ের কারণে এ দিন মেলায় প্রবেশ করতেই দর্শনার্থীদের কেটে যায় ঘণ্টাখানেক সময়। মেলা ঘিরে সৃষ্ট যানজট ছড়িয়ে পড়ে আশপাশ এলাকায়। মেলার কারণে বিপাকে পড়েন আশপাশ সড়কের যাত্রীরাও। দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খায় আইনশঙ্খৃলা রক্ষাকারী বাহিনীও। মেলায় আসা নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। যদিও বিক্রেতাদের অভিযোগ, ভিড়ের তুলনায় বিক্রি হয়েছে কমই।
শিশুকন্যা মৌকে কোলে নিয়ে আর বৃদ্ধ শাশুড়িকে হাতে ধরে বাণিজ্যমেলার দিকে এগোচ্ছিলেন গৃহিণী শারমিন আকতার। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে জীবনে প্রথমবারের মতো শখ করে মেলায় এসেছেন তিনি। জানালেন, এমন অভিজ্ঞতার কথা অনুমানও করতে পারেননি তিনি। বেলা ২টায় বাসা থেকে বের হয়ে আগারগাঁও পৌঁছেছেন তিনি ৩৫ মিনিটে। কিন্তু আরো প্রায় এক ঘণ্টা লেগে গেছে মেলায় প্রবেশ করতে। আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে মাত্র তিন মিনিটের পথ পাড়ি দিতে তার লেগেছে আধ ঘণ্টারও বেশি। তারপর টিকিট কাটার জন্য ধরতে হয়েছে দীর্ঘলাইন। লাইন ছিল প্রবেশ গেটেও।
মিরপুর-১১ নম্বর থেকে মেলায় আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মনিরুল জানান, প্রতি বছরই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অন্তত একবার বাণিজ্যমেলায় আসেন তিনি। শুক্রবার ছাড়া অন্য দিনগুলোয় অফিস খোলা থাকে। বাধ্য হয়ে এ দিনটি বেছে নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ভেবেছিলাম প্রথম দিককার শুক্রবারে মোটামুটি ফাঁকা থাকবে। কিন্তু মেলায় এসে ধারণা পাল্টে গেল। এখানকার অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত পানি না ছিটানোয় ধুলাবালিতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। তা ছাড়া গাড়ি পার্কিং এরিয়া বাইরে রাখলেই ভালো হতো।
মিস্টার নুডলস প্যাভিলিয়নের কর্মচারী মনিষা বলেন, মেলায় আসা দর্শনার্থীরা মেলা প্রাঙ্গণ যেমন ঘুরে ঘুরে দেখছেন তেমনি কেনাকাটাও করছেন। শুক্রবার হওয়ায় আজ সকাল থেকেই ক্রেতাদের ভিড় বেশি। অন্যান্য দিনের তুলনায় আমাদের বেচাকেনাও বেশ ভালো হচ্ছে আজ। তবে ইলেকট্রনিক কোম্পানি স্কয়ারের বিক্রয়কর্মী সুমন বলেন, দর্শনার্থীর ভিড় বাড়লেও বিক্রি এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। লোকজন স্টলে স্টলে ঘুরছেন, পণ্য দেখছেন এবং দাম ও মান পরখ করছেন। আগামী সপ্তাহে বেচাকেনা পুরোপুরি শুরু হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। তবে ক্রেতাদের ভিড়ে কথা বলার সুযোগ নেই মিয়াকো ব্র্যান্ডের স্টলের কর্মীদের। কাজের ফাঁকে বিক্রয়কর্মী সোহেল জানান, দাম অপেক্ষাকৃত কম থাকায় প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন গৃহস্থালি পণ্য কিনতে। তারও অভিযোগ, যতটা ভিড় দেখা যায় বিক্রি ততটা হয় না। তবে কাস্টমার বলে কথা। সবার সব প্রশ্নের জবাব তো দিতে হয়! যা দেখতে চান দেখাতে হয়।
২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরু হয়েছে ১০ দিন আগে। রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ গত ৮ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বরাবরের মতো বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে। মাসব্যাপী এই মেলা আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। মেলার গেট ও বিভিন্ন স্টল প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। এবারের বাণিজ্যমেলায় থাকছে প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ৬০টি, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন ৩৮টি, সাধারণ প্যাভিলিয়ন ১৮, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন ২৯টি, প্রিমিয়ার স্টল ৬৭টি, রেস্টুরেন্ট তিনটি, সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন ৯টি, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন ৬টি, বিদেশী প্যাভিলিয়ন ২৬টি, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন ৯টি, বিদেশী প্রিমিয়াম স্টল ১৩টি, সাধারণ স্টল ২০১টি এবং ফুড স্টল ২২টি। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে ২০টি স্টল।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, মেলায় রাখা হয়েছে মা ও শিশু কেন্দ্র, শিশুপার্ক, ই-পার্ক ও পর্যাপ্ত এটিএম বুথ। থাকছে রেডিমেড গার্মেন্ট পণ্য, হোমটেক্স, ফ্যাব্রিকস পণ্য, হস্তশিল্প, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি ও উপহারসামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। ওঠানো হয়েছে তৈজসপত্র, সিরামিক, প্লাস্টিক, পলিমার পণ্য, কসমেটিকস হারবাল ও প্রসাধনী সামগ্রী। থাকছে খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, ইমিটেশন ও জুয়েলারি, নির্মাণসামগ্রী ও ফার্নিচারের স্টল। মেলায় অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ ছাড়াও ২৫টি দেশের ৫২টি প্রতিষ্ঠান। দেশগুলো হলোÑ থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান।


আরো সংবাদ



premium cement