২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এমপিদের শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটের আদেশ আজ

-

দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শপথ নেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। এ ব্যাপারে আজ আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো: আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদেশের দিন ধার্য করেন।
গতকাল বেলা সোয়া ৩টায় রিটের শুনানি শুরু হয়। শুরুতে হাইকোর্ট আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের কাছে জানতে চান, রিট আবেদনকারীর পরিচয় কী? তিনি কি এখানে আছেন? জবাবে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তবে আদালতে উপস্থিত নেই।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, রিট আবেদনটির সাথে সাংবিধানিক ব্যাখ্যার প্রশ্ন রয়েছে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের দফা ৩ এবং ১৪৮ অনুচ্ছেদের দফা ৩ সম্পর্কিত। ১২৩ (৩) দফা থেকে পড়ে তিনি বলেন, এই অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বাধা রয়েছে সংসদের মেয়াদ অবসান না হওয়ার পর্যন্ত নবনির্বাচিতরা শপথ নিবেন না। এর সাথে ১৪৮(৩) অনুচ্ছেদের সংযুক্তি রয়েছে। গত ৩ জানুযারি এমপিরা শপথ নিয়েছেন। এটা সংবিধানের এই দু’টি অনুচ্ছেদের উল্লিখিত দফার লঙ্ঘন।
আদালত বলেন, আপনি বলতে চাইছেনÑ শপথের ফলে ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ দফার লঙ্ঘন হয়েছে।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, দশম সংসদের মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ায় নবনির্বাচিত এমপিদের শপথ গ্রহণ সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। সংসদের মেয়াদ গণনা হবে দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন থেকে পাঁচ বছর। সে হিসেবে ২৯ জানুয়ারি মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হবে। তিনি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ থেকে নির্বাচিতদের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরলে আদালত বলেন, প্রজ্ঞাপন প্রকাশে কোথাও কোনো বাধা দেখছি না।
এরপর ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব রিটের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন, তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি এখনো দশম সংসদ ভেঙে দেননি। ওই সংসদ এখনো বিদ্যমান। একটি সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই নবনির্বাচতরা শপথ নিয়েছেন। এতে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। আদালত বলেন, যা ঘটেছে তা ইতোমধ্যে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
এরপর মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদটি সাংবিধানিক পদ। তিনি সংবিধান মেনে চলা ও রক্ষার শপথ নিয়েছেন। সেটা না করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে সংবিধানবিচ্যুত হয়েছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, তিনি সংবিধান অনুসরণ করেননি। ২৭ বা ২৮ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হলে সংবিধান লঙ্ঘন হতো না। যা সাংবিধানিক পদের ব্যক্তির কাছে অপ্রত্যাশিত।
এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্য জানতে চান আদালত। তিনি বলেন, সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে রিট আবেদনটি দায়ের হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ হলে তিনি সংক্ষুব্ধ হবেন। এ রিটের সাথে মৌলিক অধিকার ক্ষুণেœর সম্পর্ক নেই। আবেদনকারী সংক্ষুব্ধ নন।
আদালত বলেন, রিটে দশম সংসদ থাকা অবস্থায় একাদশ সংসদের নির্বাচিতদের শপথের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, একটি সংসদ থাকা অবস্থায় আরেকটি সংসদের শপথ হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, একটি সংসদ রয়েছে। এখানে সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রয়োজন নেই। প্রশ্ন হলো, রিট আবেদনকারী কিভাবে সংক্ষুব্ধ হলেন?
তখন উপস্থিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এ রিট আবেদনটি কোনো ধরনের রিট। এটি জনস্বার্থের মামলা নয়। আবার রিট অব কো ওয়ারেন্টও নয়।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নবনির্বাচিত এমপি ও মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছেন। এ রিট চলতে পারে না। কারণ, রিট আবেদনকারী সাবেক এমপিও নন আবার এমপি প্রার্থীও ছিলেন না।
এরপর রিট আবেদনটি কোন ধরনের এখতিয়ারে পড়বে তা নিয়ে আলোচনা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এমপির পদ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রিট অব কো ওয়ারেন্টো হবে। কিন্তু সেটা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু রিট আবেদনটি ঘোষণামূলক হয়েছে।
এরপর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, নির্বাচনের পর ৩০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন ও শপথ নিতে হবে। এমপিদের শপথ ও মন্ত্রিসভার গঠনের পর সংসদের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। তিনি সংসদের কার্যপ্রণালী থেকে পড়ে বলেন, সংসদের কার্যক্রম শুরু হলে এটা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যায় না।
তখন আদালত বলেন, ভাগ্য ইতোমধ্যে নির্ধারিত হয়ে গেছে।
এরপর মাহবুব উদ্দিন খোকন আবার দাঁড়িয়ে বলেন, এটা সাংবিধানিক সমস্যা। আমরা শপথ চ্যালেঞ্জ করেছি।
আদালত বলেন, রিট আবেদনকারী সংক্ষুব্ধ কিভাবে হয়েছেন? কারণ, তিনি তো নির্বাচনে প্রার্থীও হননি।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে কারা সংক্ষুব্ধ হবেন তার বিস্তারিত বলেছেন আপিল বিভাগ। রিটে আবেদনকারী বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পক্ষ হয়েছেন। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্র সংবিধান অনুযায়ী চলা উচিত। এখানে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে কি না সেটাই গুরত্বপূর্ণ। সাংবিধানিক আদালত হিসেবে হাইকোর্টের এ প্রশ্ন খতিয়ে দেখতে হবে। এরপর আদালত বৃহস্পতিবার আদেশের দিন ধার্য করেন।
গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এ রিট দায়ের করেন। এর আগে গত ৮ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শপথ বাতিল করে গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে লিগ্যাল নোটিশ দেন। আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তাওহীদের পক্ষে নোটিশটি প্রেরণ করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
গত ১৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে ওই নোটিশের জবাব চাওয়া হয়। জবাব না পেয়ে এই রিট আবেদন করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একাদশ সংসদের নবনির্বাচিত সদস্যরা শপথ নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রতি সংসদ মেয়াদোত্তীর্ণ হলে আগের সংসদ সমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত এরা দায়িত্ব পালন করবেন। সে অনুযায়ী নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ৩ জানুয়ারি নেয়া শপথে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। সংবিধানের ১৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শপথের জন্য নির্বাচিতদের উচিত ছিল ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করা। তাই এই শপথ বাতিল করার জন্য আমরা বলেছি। শপথ বাতিলের পাশাপাশি নতুন করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement