সাড়ে ৭ কোটি ডলার ঋণের অর্থ অনুদান হিসেবে চায় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ
- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
একটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সাড়ে সাত কোটি ডলার ঋণের অর্থ অনুদান হিসেবে চেয়েছে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। এই কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এটি মূলত একটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। আমদানি-রফতানির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সহায়তা করাই এ প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ। সেবা প্রদানের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠান খুবই স্বল্প রাজস্ব আয় করে থাকে, যার দ্বারা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা, বন্দরগুলোর পরিচালন ব্যয়, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্বল্প ব্যয়ী উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় সরকার কর্তৃক এ প্রকল্পের অর্থায়ন অনুদান হিসেবে বিবেচনা না করলে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এটি বাস্তবায়ন করা দুরূহ হবে এবং এত বিপুল ঋণ প্রতিষ্ঠানটির স্বল্প আয় দ্বারা পরিশোধ করা দুঃসাধ্য হবে।
এ-সংক্রান্ত একটি আবেদন ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আবেদন মঞ্জুর করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ও সুপারিশ করেছে। বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। তবে এটি অনুমোদনে সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে।
ঋণ পরিশোধের দায় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে না দেয়ার জন্য প্রকল্প অনুমোদনের আগেই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছিল বলে সূত্র জানায়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিধান অনুযায়ী সরকারি সংস্থার ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত ঋণের অর্থ অনুদান হিসেবে এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ক্ষেত্রে সাধারণত ঋণ হিসেবে দেয়া হয়ে থাকে। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে অনুদানও প্রদান করতে পারে।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আবেদনের বিষয়ে সূত্র জানায়, এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়েছিল। এই কাগজপত্র তারা পাঠিয়েও দিয়েছে। এখন তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে অনুদান হিসেবে অর্থ প্রদানের জন্য এ বিষয়ে আরো আলোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। একই সাথে এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রয়োজনও রয়েছে।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ আবেদনে বলেছে, দেশের স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সেবা প্রদান পদ্ধতির আধুনিকায়ন ও পদ্ধতিগত দক্ষতার উন্নয়নসহ দেশের অন্যান্য অবকাঠামোর সাথে স্থলবন্দরগুলোর সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায় বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পটিকে নৌবন্দরগুলোর উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পের সাথে সমন্বয় সাধনে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বন্দরগুলোর পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ও জোরদার করতে তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি পাশের অন্যান্য দেশের সাথে স্থলবন্দরের মাধ্যমে ব্যবসাবাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ৪২ একরের অধিক ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন, সোস্যাল ও এনভায়রনমেন্টাল মিটিগেশন, শেওলা, রামগড় ও ভোমরা স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, বেনাপোল স্থলবন্দরে সিসিটিভি ও গেট পাস সিস্টেম স্থাপনসহ নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ গত বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প পরিচালক এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিটের অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগ ও অফিস ভাড়া নেয়া হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু অনুদানের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে চুক্তি সই করা সম্ভব হচ্ছে না এবং এ বিষয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে না। ফলে বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ পেতে দেরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষাপর্যায়ে রয়েছে। তবে ঋণের টাকা অনুদান হিসেবে দিতে হলে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা