১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিজিএমইএ নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে সাধারণ ভোটাররা

-

তফসিল ঘোষিত হলেও তৈরী পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ’র আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের সংশয় কাটেনি। ২০১৫ সালে বিনা ভোটে নির্বাচিত বর্তমান কমিটি সরকারের আনুকূল্য নিয়ে দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়ে এখনো ক্ষমতায় রয়েছে। ভোটারদের আশঙ্কা, যেকোনো অজুহাতে কমিটির মেয়াদ আবারো বেড়ে যেতে পারে। আর মেয়াদ না বাড়লেও সমঝোতার ভিত্তিতে ভোটারদের বঞ্চিত করে একটি কমিটিকে ঘোষণা দেয়া হতে পারে। সাধারণ ভোটারদের ম্যান্ডেট ছাড়া বছরের পর বছর অনির্বাচিত কমিটি দায়িত্বে থাকার কারণে সম্ভাবনাময় তৈরী পোশাক শিল্প খাতের নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতা দিন দিন বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে বিজিএমইএ’র বর্তমান কমিটি ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০১৩ সালে সাধারণ সদস্যদের ভোটে সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন হলেও ২০১৫ সালে তা হয়নি। মূলত সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের নেতারা সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেন। দুই মেয়াদের জন্য সেই সমঝোতা হয়েছিল। সমঝোতা অনুযায়ী প্রথমবার সম্মিলিত পরিষদ সভাপতি, চার সহসভাপতিসহ ১৪ পরিচালক এবং ফোরাম তিন সহসভাপতিসহ ১৩ পরিচালক পদ পেয়েছে। পরের মেয়াদে সভাপতিসহ অন্য পদগুলো দুই পক্ষের মধ্যে অদলবদল হবে। উভয় পক্ষের শীর্ষ নেতারা সেই সংখ্যক প্রার্থী বাছাই করে মনোনয়নপত্র জমা দেন। সে জন্য আর নির্বাচনের প্রয়োজন পড়েনি।
বিজিএমইএ’র বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তবে তার আগেই উত্তরায় নতুন ভবন নির্মাণকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে নেন সিদ্দিকুর রহমান। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত মার্চ মাসে। সে জন্য গত ডিসেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়; কিন্তু জানুয়ারির শেষ দিকে হঠাৎ করেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কমিটির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর আবেদন করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তখন তিনি অজুহাত দেখান উত্তরায় নতুন ভবন নির্মাণ, নতুন মজুরি বোর্ড গঠন ও জাতীয় সংসদের নির্বাচনের জন্য আগামী এক বছর পোশাক খাতের জন্য কঠিন সময়। শেষ পর্যন্ত সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে মন্ত্রণালয় তাদেরকে বাড়তি সময়ের জন্য অনুমোদন দিয়ে দেয়।
নিয়মানুযায়ী গত ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ও নির্বাচনী আপিল বোর্ড গঠন করার কথা। সেটি না করে নতুন করে এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করেন সিদ্দিকুর রহমান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তিনি আরো দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেন। এ ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক ডেকে অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা তিনি করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধির তৎপরতা জানতে পেরে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের কাছে নালিশ জানান বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও ফোরাম নেতা আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, সাবেক সভাপতি আনিসুল হকের স্ত্রী ও মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হকসহ সাতজন।
তারা মন্ত্রীকে বলেন, সভাপতি নিজের মেয়াদ বাড়ানোর যে চেষ্টা করছেন, তা বিজিএমইএ’র সদস্যরা পছন্দ করছেন না। ফোরামের নেতারা তাদের আপত্তির কথা লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে জানান এবং নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধি না করে বর্তমান কমিটিকে অনতিবিলম্বে নির্বাচন ও আপিল বোর্ড গঠন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার নির্দেশ দিতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেন। তাদের অভিযোগ, ভোট না হওয়ায় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে কোনো জবাবদিহি নেই। ফলে বিজিএমইএ ইচ্ছেমতো চলছে। অভিযোগের ধারাবাহিকতায় ওপর মহলের চাপে বিজিএমইএ’র বর্তমান পরিচালনা পরিষদ নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে বলে জানা গেছে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৬ এপ্রিল বিজিএমইএ’র ৩৫টি পরিচালক পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন উপলক্ষে সদস্যদের বকেয়া চাঁদা পরিশোধের সর্বশেষ তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৬ মার্চ। নির্বাচন পরিচালনায় গত ৫ জানুয়ারি গঠিত বোর্ডে গত নির্বাচনের মতো এবারো বিটিএমএর সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। অপর দুই সদস্য হচ্ছেনÑ এমসিসিআইর সভাপতি নিহাদ কবির ও চট্টগ্রামভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এ এস এম নাইম। নির্বাচনী আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি কামরান টি রহমানকে। এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান রয়েছেন সদস্য হিসেবে।
এ দিকে বর্তমান কমিটি নির্বাচনের তফসিল দিলেও সাধারণ সদস্যরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারবেন কি না, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ, সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী আগামী মেয়াদে ফোরামের পক্ষ থেকে সভাপতি হওয়ার কথা রয়েছে। শুরুতে ফোরাম সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খানকে সভাপতি পদের জন্য নির্বাচিত করেছিল। তবে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে গত বছর সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। তখন প্রার্থী বদল করা হয়। বর্তমানে মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হককে সভাপতি পদের জন্য নির্বাচিত করেছেন ফোরামের শীর্ষ নেতারা। রুবানা হক ফোরামের প্যানেল লিডার এবং সাবেক সভাপতি আনিসুল হকের স্ত্রী।

 


আরো সংবাদ



premium cement