২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেই

‘ম্যাকানিজম’ প্রয়োজন মনে করেন বিশেষজ্ঞরা
-

রাজধানীসহ দেশের শহরগুলোতে বাড়িভাড়া ও ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো নিয়মের বালাই নেই। বাড়িওলারা নিজেদের খুশিমতো ভাড়া নির্ধারণ এবং বছরান্তে বৃদ্ধি করে থাকেন। এক ভাড়াটিয়া বাসা বদলের পর দেখা যায়, নতুন করে ভাড়া দেয়া ফ্লাটে আগের ভাড়া ১৫ হাজার থেকে তিন-চার হাজার টাকা বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। অন্য দিকে, বাসাভেদে বছরান্তেই ভাড়া এক হাজার থেকে তিন-চার হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ফলে যেই বাসার ভাড়া পাঁচ বছর আগে ১২ হাজার টাকা ছিল, এখন সেই বাসার ভাড়া গুনতে হচ্ছে ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত। বছরে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়াবৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আইন মানা হয় না। আইনের আশ্রয় নিয়ে ভাড়ার বিষয়টি সুরাহার প্রক্রিয়া সহজ না হওয়ায় ভাড়াটিয়ারা আইনের দিকে যায় না। ফলে অনিয়ন্ত্রিত বাড়ি ভাড়া ও বৃদ্ধির বিষয়টি বছরের পর বছর চলে আসছে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ও ভাড়াটিয়াদের দু’য়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবছরের শুরুতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হলেও ভাড়াটিয়ারা অনিয়ন্ত্রিত বাড়িভাড়ার জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে।
এই সমস্যা সমাধানে আইন বাস্তবায়নে একটি ‘ম্যাকানিজম’ প্রয়োজন মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই ম্যাকানিজমটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভাড়াটে প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত আরবিট্রেশন হতে পারে বা অন্য কিছুও হতে পারে বলে মত দিয়েছেন তারা।
ক্যাবের পক্ষ থেকে গত শনিবার উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে দুই কক্ষবিশিষ্ট বাসার ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে বাড়িভাড়া ও বছরান্তে বৃদ্ধির ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ কোনো পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়নি বলে জানিয়েছেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, এখানে একটি অ্যাভারেজ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
অনিয়ন্ত্রিত বাড়িভাড়ার ব্যাপারে ক্যাব সভাপতি নয়া দিগন্তকে বলেন, বাড়িভাড়া নিয়ে আইন আছে, তা প্রয়োগে একটি ম্যাকানিজম করতে হবে। তাতে এককভাবে শুধু সিটি করপোরেশন বা কাউকে দায়িত্ব দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেকোনো ম্যাকানিজমে বিশেষ করে সেটেলমেন্টের ম্যাকানিজমে দুইপক্ষ থাকে। এক্ষেত্রেও ভাড়াটে এবং মালিকপক্ষ থাকবে এবং নির্ধারণ হবে আরবিট্রেশনের মাধ্যমে। আরবিট্রেশন প্রসেসেই ভাড়াটের একটা প্রতিনিধিত্ব থাকা দরকার। এই আরবিট্রেশন করার ক্ষেত্রে যিনি চেয়ারম্যান তিনি সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরও হতে পারেন। কিন্তু তার সাথে একজন ভাড়াটে মনোনীত আরবিট্রেটরস থাকবে।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আসলে বাড়ি ভাড়ার নিয়ন্ত্রণহীনতা সমস্যাটির সমাধানের সহজ কোনো পন্থা নেই। আইন থাকলে আইনটি প্রয়োগ হওয়া উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগটা বা আইনের আশ্রয় নেয়াটা সহজলভ্য নয় বলেই মনে হয়। তাই আইনটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। ভাড়াটিয়ারা যাতে আইনের সুফল পায়, আইনের প্রয়োগ বা আশ্রয় নেয়া যাতে সহজ হয়, সেজন্য একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে। আর সেই কাঠামোটা সরকারকেই করতে হবে।
রাজধানীসহ শহরগুলোতে প্রতিবছর ভাড়া বৃদ্ধি একটা নিয়মের মতোই হয়ে গেছে। রাজধানীর অনেক এলাকায় বছরে একটি নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের ফ্লাটে ভাড়া জানুয়ারি মাস এলেই এক-দুই হাজার টাকা বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। দেখা যায় কয়েকবছরের মধ্যেই ভাড়া দ্বিগুন হয়ে যায়। আবার ভাড়াটিয়া যখন বাসা ছেড়ে দেয় তখন নতুন ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে আরো দুয়েক হাজার টাকা যুক্ত করে ভাড়া ধরা হয়। কিন্তু ভাড়াটিয়াদের অনেক ক্ষেত্রেই মেনে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। চাকরিরস্থলের দূরত্ব, ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজের কথা বিবেচনা করে ভাড়াটিয়াদের ভাড়ার যন্ত্রণা সহ্য করেই যেতে হয়। এই সমস্যার প্রতিকারে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ অনুযায়ী জেলা জজ আদালতের ভাড়া নিয়ন্ত্রকের কাছে অভিযোগ দাখিল করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় আইনজীবী নিয়োগসহ সময়ের বিষয় জড়িত থাকার কারণে ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়ারা আইনের আশ্রয় নেন না। এমনই সমস্যার কথা জানালেন রাজধানীর বনশ্রী এলাকার ভাড়াটিয়া মো: ইব্রাহীম। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে বনশ্রী এলাকায় ভাড়া দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েদের স্কুলের কারণে অন্য এলাকায় যাওয়ার মতো অবস্থাও নেই। বর্ধিত ভাড়া মেনে নিতে হচ্ছে।
ক্যাবের এক সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়, গত ২৫ বছরে ঢাকায় বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। অথচ একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। ১৯৯০ সালে পাকা ভবনে দুই কক্ষের একটি বাসার ভাড়া ছিল গড়ে দুই হাজার ৯৪২ টাকা। ২০১৫ সালে সেই ভাড়া দাঁড়ায় ১৮ হাজার ১৫০ টাকায়। আর এখন এ ভাড়া এসে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩৪০ টাকায়। এর মধ্যে গত ১০ বছরে ভাড়া বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকায় প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই ভাড়াটে, আর বাড়িওয়ালাদের ৮০ শতাংশই বাড়িভাড়ার আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঢাকার বাড়িওয়ালাদের ২৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ ভাড়াটেদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন।
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান নিয়ন্ত্রণহীন বাড়িভাড়ার বিষয়ে নয়া দিগন্তকে আরো বলেন, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ না হওয়ার বড় একটি কারণ হচ্ছেÑ শহরে যে পরিমাণ লোক আসছে, বিশেষ করে ঢাকা শহরে নি¤œবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই কারণে বাড়ির চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু বাড়ির কলেবরতো বাড়ছে না। তাই যারা ভাড়াটে তারা অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছে। বাড়িওয়ালা যে ভাড়া চায় সেই ভাড়াই দিতে বাধ্য হয়। ভাড়াটিয়া আইনের ব্যাপারে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো আসলে এভাবে আইন দিয়ে অনেক সময় সমাধান করা যায় না। এ ছাড়া, এ ব্যাপারে হাইকোর্টেরও একটা নির্দেশনা আছে, যাতে আইনটাকে সংশোধন করে প্রতিকার চাওয়াটা সহজ হয়। প্রতিকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। কিন্তু কোনো নির্দেশনাতেই কাজ হচ্ছে না। অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো অর্থনৈতিক ফোর্সেসগুলোই ডিটারমাইন করে বাস্তবে কী ঘটবে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনকে সহজ করলে হয়তো কিছুটা প্রতিকার হতে পারে। বছরান্তে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়েই বেশি অভিযোগ আসে। এখন বছরান্তে যাতে ভাড়া বৃদ্ধি না হয় সেজন্যে একটা ম্যাকানিজম করা দরকার। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের একটা নির্দেশনা আছে। আমি বললেতো কোনো কাজ হবে না। হাইকোর্ট বলার পরওতো কোনো কাজ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে আইনের যে ধীর গতি তাতে এই বিষয় নিয়ে কেউ আইনের কাছে যেতে চাইবে না। আইনের যে অবস্থা, তাতে দেখা যাবে এই ধরনের একটি অভিযোগের নিষ্পত্তি দুই বছরেও হবে না। স্থানীয়পর্যায়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য একটি ম্যাকানিজম করতে হবে এবং আমি জোর দিয়েই বলছি, সেই ম্যাকানিজমের সাথে অথ্যাৎ বিচারক প্যানেলে ভাড়াটিয়ার প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
হোচট খেল লিভারপুল, পিছিয়ে গেল শিরোপা দৌড়ে যোদ্ধাদের দেখতে প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার! ফের পন্থ ঝড়, ঘরের মাঠে গুজরাটকে হারাল দিল্লি ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ আরো বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্নীতি, পুতিনের নির্দেশে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী!  আমেরিকানরা কি ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে? গাজায় রিজার্ভ ব্রিগেড মোতায়েন ইসরাইলের উপজেলা নির্বাচন জটিলতা ভোটাধিকারের প্রতি মর্যাদা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধাপরাধের ধারাবাহিক ধারা’ অনুসরণের অভিযোগ

সকল