২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজধানীতে ঐক্যফ্রন্টের বিজয় র্যা লিতে জনস্রোত

হামলা-মামলা-গ্রেফতার বন্ধের আহ্বান
রাজধানীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয় র্যা লি : নয়া দিগন্ত -

পুলিশের বেঁধে দেয়া সময় ও ুদ্র সীমানার মধ্যেই রাজধানীতে বর্ণাঢ্য বিজয় র্যা লি করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে র্যা লিটি হলেও এটি মূলত নির্বাচনী প্রচারণায় রূপ নেয়। রাজধানীর বিভিন্ন আসনের প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার নিয়ে র্যা লিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। অনেক সাধারণ মানুষও র্যা লিতে অংশ নেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতির পাশাপাশি নেতাকর্মীদের হাতে ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার সংবলিত প্ল্যাকার্ড। জাতীয় পতাকা, দলের প্রতীক ধানের শীষ হাতে নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক।
নয়াপল্টনের কার্যালয়ে সামনে একটি ট্রাকে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে বিজয় র্যা লির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ঢাকা-৬ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-১৪ আসনের প্রার্থী আবদুস সালাম, ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাকসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। র্যা লির প্রথম ভাগে ছিল জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতারা এ ছাড়া মহিলা দল, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, কৃষক দলের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরী কর্মী-সমর্থকদের মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে আসেন। তাদের ব্যানারে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের ছবি ছিল। ঢাকা-৯ আসনের আফরোজা আব্বাস ধানের ছড়া দিয়ে সাজানো একটি ট্রাকে চড়ে বিশাল মিছিল নিয়ে এই র্যা লিতে অংশ নেন। সেই ট্রাকে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় প্রতিকৃতি ছিল। বিজয় র্যা লিতে ব্যান্ড সঙ্গীতের দলও ছিল যারা মুক্তিযুদ্ধের গানের মূর্ছনায় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে রাখে।
শান্তিনগরের কাছে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সামনে মাইক লাগিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে ক্যাসেট বাজাতে থাকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল। কলেজ ঘেঁষে সড়ক দিয়ে বিএনপির বিশাল মিছিলে ধানের শীষ প্রতীকে মুহুর্মুহু সেøাগান দিয়ে অতিক্রম করতে দেয়া গেছে। শান্তিনগর মোড়ে পুলিশের সদস্যরা ব্যারিকেড দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সেখান থেকে মিছিলটির সমাপ্তি টানেন বিএনপির মহাসচিব। পরে মিছিলটি আবার নয়াপল্টন অভিমুখে ফিরে যায়। বিজয় র্যা লিতে বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হারুনুর রশীদ, অর্পণা রায়, আনোয়ার হোসাইন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, শাহ নেছারুল হক, হেলাল খান, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, দেবাশীষ রায় মধু, প্রদীপ কুমার সরকার, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ছাত্রদলের আকরামুল হাসান, রাজীব আহসান চৌধুরী পাপ্পু প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। ঐক্যফ্রন্টের র্যা লি কেন্দ্র নয়াপল্টন থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
বর্ণাঢ্য র্যা লির উদ্বোধনকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আমি শ্রদ্ধা জানাই স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে। যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গোটা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন এবং নিজে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। আজকের এই বিজয় দিবস হওয়া উচিত ছিল আমাদের আনন্দের উৎসবের। কিন্তু আমরা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত, আমরা আতঙ্কিত উৎকণ্ঠিত এই দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকবে কি টিকে থাকবে না। আজকে যে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন যে তফসিল দিয়েছেন এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে সব রকমের পক্ষপাতিত্ব শুরু করেছে সরকার এবং আমরা কখনো এই ধরনের নির্বাচন দেখিনি। নজিরবিহীনভাবে তারা (সরকার) বিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং কি প্রার্থীদেরও গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে। এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরতন্ত্র থাকবে না গণতন্ত্র থাকবে, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার ফল ভোগ করবে কি করবে না, বাংলাদেশের মানুষ নির্যাতিত হয়ে স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মধ্যে যাবে নাকি বহুমাত্রিক গণতন্ত্রের দিকে যাবে। এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে আমাদের গণতন্ত্রের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্ত করতে পারব কি পারব না।
নির্বাচনের প্রচারণায় ঢাকা-৮ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের ওপর হামলার ঘটনাকে নজিরবিহীন অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে এই ধরনের হামলা হওয়ার পরও নির্বাচন কমিশন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, সরকার কিছুই করে না। নোয়াখালী-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মাহবুবউদ্দিন খোকনকে গুলি করা হয়েছে। সে আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরীর ওপর হামলা হয়েছে, তাকে প্রচারণা চালাতে দেয়নি। ঢাকা-৪ আসনে সালাহ উদ্দিন আহমেদের নির্বাচনী এলাকায় একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের এই র্যা লি করতেও বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। আগের দিন বহু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের র্যা লি ছিল ২টায়। সেটাকে তারা পরিবর্তন করে সকাল ১০টায় নিয়ে এসেছে। এ জন্য এটা করা আমাদের জন্য অসম্ভব ছিল। তার পরও বিভিন্ন বাধার মধ্যে যারা এই র্যা লিতে যোগ দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি সরকারকে হুঁশিয়ারি করে দিচ্ছি, এই গ্রেফতার বন্ধ করুন। অন্যথায় এর দায়-দায়িত্ব সবকিছু আপনাদের নিতে হবে, গণতন্ত্র ধ্বংস করার দায়-দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করবেন না, নির্বাচনকে এভাবে হামলা-মামলা, অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যা-গুম করে নির্বাচন থেকে জনগণকে বিরত করতে পারবেন না।
গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী দেশবাসীকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক সম্বোধন করে বলেন, আমি স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আপনারা সবাই অবগত আছেন, এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচনে যেতে রাজি হয়েছি। যারা ক্ষমতাসীন আছেন তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে আবারো মতায় থাকার জন্য নীলনকশার ষড়যন্ত্র, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। আমাদের পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় কাজে ব্যবহার করে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, যাতে আমরা নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে দেই। ১৬ কোটি মানুষ ও ১০ কোটি ভোটারের ওপর নির্ভর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। ৩০ ডিসেম্বর জনগণ ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে রায় দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয় করবে এই হলো আজকের বিজয় দিবসের আহ্বান।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটা বিজয়ের দিন আর আমরা একটা লড়াইয়ের মধ্যে আছি। এই লড়াই ভোটের লড়াই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটের নামে একটি প্রতারণা হয়েছে। ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল, ভোটের ফলাফল ভোট হওয়ার আগেই প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই থেকে গত ৫ বছরে দেশে যত নির্বাচন হয়েছে সব নির্বাচন ক্ষমতাসীনরা ছিনতাই করেছেন, জনগণকে ভোট দিতে দেয়নি। নতুন যখন নির্বাচন এলো তারা মনে করেছিল যে এই নির্বাচনটাতেও বোধহয় তারা ওয়াকওভার নিতে পারবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার ওয়াকওভার দেবো না, আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি, প্রার্থী দিয়েছি এবং তখন সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজে মুসুল্লিদের ঢল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার : রিজভী চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০টি সহযোগিতা নথি সই ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি’ মিলান ডার্বি জিতে শিরোপা পুনরুদ্ধার ইন্টারের

সকল