২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খেলাপি ঋণে কমছে আয়

সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার আয় স্থগিত ; বিনিয়োগ সক্ষমতা হারাচ্ছে ব্যাংক
-

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ আদায় কমে যাচ্ছে। এতে বাড়ছে মন্দ ঋণ। মন্দ ঋণের কারণে প্রভাব পড়ছে ব্যাংকের মুনাফায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত সেপ্টেম্বর শেষে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার সুদ আয় স্থগিত করতে হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী মন্দ ঋণের বিপরীতে ধার্যকৃত সুদ ব্যাংকগুলোর আয় খাত থেকে আলাদা করে রাখা হয়। অপর দিকে এ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর আয় খাত থেকে টাকা এনে প্রভিশন রাখতে হয়। এর ফলে এক দিকে ব্যাংকগুলোর মুনাফার পরিমাণ কমে যাচ্ছে পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডাররাও বছর শেষে প্রকৃত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি টাকা আটকে যাওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
প্রচলিত বিধান অনুযায়ী কোনো নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধের সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার ৩ মাস অতিক্রান্ত হলে তা শ্রেণীকৃত ঋণ বা খেলাপি ঋণ হিসেবে ধরা হয়। এ খেলাপি ঋণকে ব্যাংকিং ভাষায় সাব-স্ট্যান্ডার্ড বা নি¤œমান ঋণ বলা হয়। ঋণের কিস্তি পরিশোধের সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার ৬ মাস অতিক্রান্ত হলে তা সন্দেহজনক ঋণ হিসেবে ধরা হয়। এ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ৫০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। আবার ঋণের কিস্তি পরিশোধের সীমা ৯ মাস অতিক্রান্ত হলে তা মন্দ ঋণ হিসেবে ধরা হয়।
জানা গেছে, মন্দ ঋণ ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ হিসেবে ধরা হয়। আর এ ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। প্রভিশন ঘাটতি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর জরিমানা বা তিরস্কার গুনতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিরস্কার বা জরিমানার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যাংকের আয় খাত থেকে টাকা এনে প্রভিশন ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
অপর দিকে, মন্দ ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ ব্যাংকগুলোর আয় খাতে স্থানান্তর করা হয় না। অর্জিত সুদ ব্যাংকের আলাদা হিসেবে স্থগিত করে রাখা হয়।
গত সেপ্টেম্বর-ভিত্তিক খেলাপি ঋণের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকাই মন্দ। অর্থাৎ মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৮৪ শতাংশই মন্দ। এর মধ্যে সরকারি ৬ ব্যাংক অর্থাৎ সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের রয়েছে ৪০ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এ ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রয়েছে ৪৮ হাজার ৮০ কোটি টাকা। সরকারি এ ৬ ব্যাংকের মন্দ ঋণের হার মোট খেলাপি ঋণের ৮৫ শতাংশ। খেলাপি ঋণের কারণে গত সেপ্টেম্বরে ১২ হাজার ৭১০ কোটি টাকার সুদ আয় স্থগিত করে রাখা হয়েছে।
সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১২ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ১১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকাই মন্দ ঋণ। আর এ মন্দ ঋণের কারেণে ৩ হাজার ২৩০ কোটি টাকার সুদ আয় স্থগিত করে রাখা হয়েছে। একই সাথে খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা।
আলোচ্য সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের সুদ আয় স্থগিত করে রাখা হয়েছে ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৪ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ৯২৮ কোটি টাকার সুদ আয় স্থগিত করে রাখা হয়েছে।
অপর দিকে ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের মন্দ ঋণের হার মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৮২ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৪৩ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৫ হাজার ৬১০ কোটি টাকাই মন্দ ঋণ। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকগুলোর সুদ আয় স্থগিত করতে হয়েছে ১০ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। আবার মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ায় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর নিট আয় কমে গেছে। শুধু ব্যাংকগুলোর নিট লোকসানই বাড়েনি, ব্যাংকগুলোর ইতোমধ্যে মূলধন ঘাটতি বেড়ে গেছে। মূলধন ঘাটতির কারণে সামগ্রিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে কিছু কিছু ব্যাংক।
ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পাশাপাশি মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা জানান, নি¤œমানের খেলাপি ঋণ আদায় না বাড়লে পরে সন্দেহজনক খেলাপি ঋণ হয়ে মন্দ ঋণে পরিণত হয়। আবার খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য কোনো গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করলে তা সরাসরি মন্দ ঋণে চলে যায়। এভাবে মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ায় আয়ের ওপরও প্রভাব পড়ছে বলে তারা মনে করেন।


আরো সংবাদ



premium cement