২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আর্থিক খাতের উন্নয়ন প্রচারে এমডিরা

নজিরবিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক বলছেন বিশ্লেষকেরা
-

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমে গেছে। অবলোপনসহ খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। নানা অনিয়মের কারণে নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংক ও সরকারি খাতের বেসিক ব্যাংক ডুবতে বসেছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে ১০ বছরে ব্যাংকিং খাত থেকে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। নানা দুর্নীতির কারণে কয়েক শ’ ব্যাংক কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার জালে আটকে গেছেন। হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, এনন টেক্স, ক্রিসেন্ট লেদার কোম্পানির মাধ্যমে বড় বড় ঋণ অনিয়মের খবর বেরিয়ে গেছে। অথচ এসবের দায়দায়িত্ব না নিয়ে আর্থিক খাতের ১০ বছরের উন্নয়ন প্রচারে মাঠে নেমেছেন সরকারি-বেসরকারি খাতের এমডিরা। জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ১৭ দিন আগে এমডিদের এমন উন্নয়ন প্রচারকার্যক্রমকে নজিরবিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন বিশ্লেষকেরা।
বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, জনগণের আমানত সুরক্ষা করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে বের হয়ে যাচ্ছে। যথাযথ জামানত না রেখে ঋণ বিতরণ করায় এসব ঋণ আদায়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এসবের প্রতি নজর না দিয়ে নানা ত্রাণতহবিলে কোটি কোটি টাকা দান করছেন এমডিরা। তারা বলেছেন, শুধু ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নের কথা বলার পাশাপাশি কেন বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম হচ্ছে, ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জগুলোকে চিহ্নিত করলে এমডিদের বক্তব্য গ্রহণযোগ্যতা পেতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, জনগণের সম্পদ সুরক্ষা করাই হলো এমডিদের কাজ। তাদের বিগত দিনের যে ভুলগুলো ছিল সে সবের কথা উল্লেখ করতে পারতেন। উল্লেখ করতে পারতেন ব্যাংকিং খাতের নানা চ্যালেঞ্জের কথা। কিন্তু তা না করে শুধু ১০ বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরা কোনো মতেই ঠিক হয়নি। জনগণের আমানতের অর্থ ব্যয় করে এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন তারা করতে পারেন না। তিনি এটাকে নজিরবিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ব্যাংকারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) গতকাল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে আর্থিক খাতের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এবিবি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ১০ বছরের বিভিন্ন আর্থিক সূচকের উন্নতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এতে বড় অবদান রাখছে দেশের ব্যাংক খাত। আপনারা এর ভালো দিকগুলো তুলে ধরবেন। জনগণের কাছে ব্যাংক খাত নিয়ে শুধু খারাপ খবরই যায়।’
এ সময় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ভাত খাওয়ার সময়ও প্লেটের বাইরে ভাত পড়ে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে খেলাপিও তেমন। এটা থাকবেই। কারণ ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা আমাদের সংস্কৃতি। ব্যবসায়ীরা কষ্ট করে অর্থনীতিকে সচল করে রেখেছেন। আমাদের ভুল থাকতে পারে। কিন্তু সেটিকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বেশি করে।
সাংবাদিকেরা জানতে চান, হঠাৎ করে গত পাঁচ বছর পরে এবিবির পক্ষ থেকে কেন অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা প্রচার কথা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের জন্য নাকি সিপিডির গত ৮ ডিসেম্বর ব্যাংক খাতের সমস্যা নিয়ে যে সেমিনার করেছে তার জন্য। এর উত্তরে এবিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোনোটির জন্যই না। সিপিডির উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে এই আয়োজন নয়।
প্রসঙ্গত, সিপিডির ওই সেমিনারে তথ্য উপস্থাপন করা হয় গত দশ বছরে ব্যাংক খাত থেকে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে এই অর্থ লুট করা হয়েছে। এরপরই পরই মাঠে নামলেন ব্যাংকাররা। এই প্রচারে গত ১০ বছরের উন্নয়ন তুলে ধরা হচ্ছে।
ব্যাংকের নির্বাহীরা বলেন, দেশের অর্থনীতি অনেক বড় হয়েছে। জিডিপি, মাথা পিছু আয়সহ বেশির ভাগ সূচকেই আমরা উন্নতি করছি। এসব উন্নয়নের মূল ভূমিকা পালন করছে ব্যাংকিং খাত। তাই অর্থের জোগানের প্রধান এ খাতকে শক্তিশালী করতে শত ভাগ কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ করতে হবে। ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণপ্রক্রিয়া ও সিকিউরিটি বাড়াতে হবে। ঝুঁকির ধরন বিভিন্ন সময় পাল্টায়। এটি সমন্বয় করতে হবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি আনিস এ খান বলেন, ব্যাংকিং খাতের মধ্যে আট লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা খারাপ হতেই পারে। এখন ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের কাজ হবে একই ভুলের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। খেলাপিঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, কারখানা স্থাপন করে সঠিক সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে উৎপাদনে যেতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। এ জন্য খেলাপি বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের (আইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মাহবুবউল আলম বলেন, আমরা দেশে একটি উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরি করতে পেরেছি। তা হয়েছে শিল্পায়নের কারণে। এ জন্য ব্যাংক অর্থায়ন করেছে। ব্যাংক অর্থায়নের মাধ্যমে ঝুঁকির ভাগ নিয়েছি। বিদেশী ব্যাংকগুলোও আমাদের প্রতি আস্থা রাখছে।
ইস্টার্ন ব্যাংকের (ইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণের ঝুঁকি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করি। এটাকে ম্যানেজ করি আমরা। ঋণ দেয়ার পরে, তা আদায় হওয়া নিয়েই কাজ করি। বর্তমানে ঋণের নি¤œমানের ঝুঁকি মোকাবেলায় সব ব্যাংকেরই সক্ষমতা রয়েছে। মাঝারি মানের ঝুঁকি মোকাবলা করতে পারে ৭০ শতাংশ ব্যাংক। আমার ঋণ দিলেও তা ফেরত আসে না, এতে দোষ কার বলে প্রশ্ন করেন তিনি। এতে ব্যাংকারদের কোনো দোষ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তৃতা করেন : ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আরফান আলী, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ার, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো: শিরিন, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম, কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হোসেন প্রধানিয়া, ফারমার্স ব্যাংকের এহসান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক খসরু ও মেঘনা ব্যাংকের আদিল ইসলাম।


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশকে এভিয়েশন হাব হিসেবে গড়তে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য অশ্লীল নৃত্য পরিবেশনের অভিযোগে ৫ জন‌ আটক ঈশ্বরদীতে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ তীব্র তাপদাহে খাবার স্যালাইন ও শরবত বিতরণ করল একতা বন্ধু উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গলাচিপায় পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু উপজেলা নির্বাচনে অনিয়ম হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে : ইসি শিশু সন্তান অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, সৎ বাবাসহ গ্রেফতার ২ উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা রা‌তে বৃ‌ষ্টি, দিনে সূর্যের চোখ রাঙানি শিশুদের হাইড্রেটেড-নিরাপদ রাখতে বাড়তি সতর্ক হওয়ার আহ্বান ইউনিসেফের অর্থ আত্মসাৎ: সাইমেক্স লেদারের এমডি ও তার স্ত্রী কারাগারে

সকল