২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাম জোটের ইশতেহার ঘোষণা

নির্বাচনে থাকা নির্ভর করছে সরকার ও ইসির ওপর

বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ : নয়া দিগন্ত -

শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার ওপর নির্ভর করছে বলে আবার মন্তব্য করে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা তাদের ৩২ দফা ইশতেহারে বলেছেন, বামপন্থীরা জয়ী হলে রুটিন কাজের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান সংবিধানে যুক্ত করা হবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে সংবিধানের ১১৮(১) ধারা মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নসহ সব ব্যবস্থা নেবেন তারা।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচনী ইশতেহার উপলক্ষে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন এসব বিষয় তুলে ধরা হয়। গতকাল পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম। এ সময় সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্কসবাদী) নেতা মানস নন্দী, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, সিপিবি সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, কমিউনিস্ট লীগের নেতা নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইশতেহার ঘোষণা করে জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের শ্রমজীবী মানুষের উপার্জিত সম্পদ এক ভাগ লুটেরারা ভোগ করছে। জোট-মহাজোটের প্রতিনিধিরা ওই এক ভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। এর বিপরীতে বাম জোট ৯৯ ভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। এ ৯৯ ভাগের প্রতিনিধিরা কাস্তে, মই ও কোদাল মার্কায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এ জন্য নেতৃবৃন্দ বাম জোটের প্রার্থীদের ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
ইশতেহারে যা আছে
ইশতেহারে আরো বলা হয় বাম জোটের প্রার্থীরা জয়ী হলে সংসদের ভেতরে-বাইরে তারা এ (ইশতেহারের বর্ণিত) বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবেন। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালুসহ জোটের ৫৪ দফা সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করবে তারা। না ভোটের বিধানও চালু করবেন তারা। ভোটদানে বাধা দিলে শাস্তির বিধান করবে বলেও ইশতেহারে রয়েছে। মেহনতি ও দরিদ্র প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক বাধাগুলো দূর করবে তারা। পর্যায়ক্রমে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারণা কাজে সরকারি অর্থে ও ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করবে। এ ছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনসহ বনাঞ্চল সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সুন্দরবন এলাকায় শিল্পকারখানা নির্মাণ বন্ধ করা, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ করবে তারা।
ইশতেহারে আরো বলা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংবিধান, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও রাজনীতির সংস্কার সাধনের লক্ষ্য নিয়ে নির্বাহী ক্ষমতার প্রয়োগে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার বিপদ পরিহার করতে যৌথতা ও জবাবদিহিতার বিধান আরো স্পষ্ট করে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে। প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোর সাংবিধানিক ভিত্তি পরিবর্তন করা। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা এবং বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে তারা। সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার করার ঘোষণা রয়েছে এতে। ক্রশফায়ার, এনকাউন্টারসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের নীতি রয়েছে তাদের ইশতেহারে।
জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও বিকল্প জ্বালানি নীতির বাস্তবায়নে জাতীয় সম্পদের ওপর শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করার কথাও ইশতেহারে রয়েছে। জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে পূর্ণাঙ্গ জ্বালানি নীতির অধীনে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের সর্বোচ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা। পানি উন্নয়ন ও বন্যা সমস্যার প্রতিকার করা হবে বলেও এতে বলা হয়। এ ছাড়া দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়ন, যানজট রোধে কার্যকর পদক্ষেপ। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো। মাদক ও পর্নো ছবি নিয়ন্ত্রণ করা। ক্রীড়া, শরীরচর্চা ও বিনোদনের সুযোগ নিশ্চিত করা। গণপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা।
এ দিকে লিখিত বক্তব্যে মো: শাহ আলম নির্বাচনী আচরণবিধির বেপরোয়া লঙ্ঘনের বিষয়ে এ পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পুলিশ ও জনপ্রশাসনের ওপর নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ দেখা যাচ্ছে না। দৃশ্যত তারা এখনো সরকারের নির্দেশনার বাইরে যেতে পারছে না। এটি অনুমান করা মোটেও কঠিন নয় যে, সরকার তার সাজানো ছকেই ৩০ ডিসেম্বর নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করতে চায়। এ কারণে মানুষের মধ্যে এখনো গভীর উদ্বেগ রয়েছে যে তারা নিরাপদে ও বিনা বাধায় ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে কি না, ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি না? জনগণের এ আতঙ্ক ও এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা টিকিয়ে রাখতে বাম আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে বেছে নিয়েছে তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকা নির্ভর করছে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার ওপর।


আরো সংবাদ



premium cement