২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সরকারের শেষ মুহূর্তে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন

এবারো সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারল না বাংলাদেশ ব্যাংক
-

এবারো সিদ্ধান্ত ধরে রাখতে পারল না বাংলাদেশ ব্যাংক। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল নির্বাচনের আগে আর কোনো পরিচালনা পর্ষদ করা হবে না। আর করলেও নতুন কোনো ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হবে না। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ১৯ দিন আগে সরকারের চাপে রাজনৈতিক বিবেচনায় আরো একটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোর্শেদ আলম। তার প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। মোর্শেদ আলম এ গ্রুপের চেয়ারম্যান। এ গ্রুপের নামেই ব্যাংকটির নাম দেয়া হয়েছে বেঙ্গল ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে মোর্শেদ আলমের ছোট ভাই জসীম উদ্দিনকে। এ ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু করলে বাংলাদেশে মোট তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা হবে ৬০।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বৈঠকে বেঙ্গল ব্যাংকসহ তিনটি ব্যাংকের বিষয়ে শর্তসাপেে অনুমোদন স্থগিত রাখা হয়। গতকালের বৈঠকে পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংককে অনুমোদনের জন্য আরো কিছু শর্ত পূরণ করতে বলা হয়। প্রস্তাবিত সিটিজেন ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। প্রস্তাবিত এ ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে আনিসুল হকের মা জাহানারা হককে। অপর প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তা হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেম। তার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা কাশেমের যাবতীয় সম্পদের হিসাব চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যে হিসাব দেয়া হয়েছিল তা যথাযথ নয় বলে মনে করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সিরাজুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বেঙ্গল ব্যাংকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ একমত হয়েছে। বেঙ্গল ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করার অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি দু’টি ব্যাংকের বিষয়ে কিছু শর্ত পূরণ করতে বলা হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে এর পরিচালনা পর্ষদের সভা গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত চলে। গত ২৯ অক্টোবরের বৈঠকে বেঙ্গল ব্যাংকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প থেকে বলা হয়েছিল, বেঙ্গল ব্যাংকের আবেদনে যে পরিচালকদের নাম প্রস্তাব করা হয়, তাদের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে করসংক্রান্ত মামলা থাকায় অনুমোদন দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ভৌগোলিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবরই বলে আসছে দেশে নতুন ব্যাংকের কোনো প্রয়োজন নেই। ২০১৩ সালেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন ব্যাংকের বিষয়ে বিরোধিতা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে নতুন ৯ ব্যাংক অনুমোদনে বাধ্য করে।
এবারো বাংলাদেশ ব্যাংকসহ স্বয়ং অর্থমন্ত্রী নতুন ব্যাংক দেয়ার বিরোধিতা করে আসছিলেন। কিন্তু গত ২৯ অক্টোবর নতুন চার ব্যাংকের অনুমোদনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। ওই দিন পুলিশ ব্যাংকের অনুমোদন দিলেও বাকি তিনটি ব্যাংকের কাগজপত্র ঠিক না থাকায় অনুমোদন করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু অর্থমন্ত্রী নতুন ব্যাংক দেয়ার পক্ষে নন, ব্যাংক না দেয়ার বিষয়ে নতুন কৌশল অবলম্বন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনেকটা অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন আর কোনো ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হবে না। এ কারণে নির্বাচনের আগে আর কোনো পরিচালনা পর্ষদ ডাকা হবে না। এ কারণে গত মাসে একটি পরিচালনা পর্ষদের সভা ডেকেও শেষ মুহূর্তে তা আর অনুষ্ঠিত হয়নি। কারণ পর্ষদের সভা করলে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে চাপ থাকবে।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক তার সিদ্ধান্ত ধরে রাখতে পারেনি। গতকাল বাধ্য হয়ে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিতে হয়।
রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন এ চার ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ায় স্বয়ং অখুশি হয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত ১ নভেম্বর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি। এর পরেও চারটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন করা হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। তিনি বলেন, এভাবে ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ায় আমি (ভেরি আনহ্যাপি) খুবই অখুশি। এর আগেও গত ২৪ অক্টোবর সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ব্যাংকিং খাত খুব বেশি বড় হয়ে গেছে। অনেক ব্যাংক অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুটোই বেশি। এটা মনে হয় একটু সীমিতকরণ (কনসুলেশন) দরকার হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট মতায় এসে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সমীা চালিয়ে বলেছিল, দেশের অর্থনীতিতে আর নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই মতামতকে গুরুত্ব¡ দিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান বেসরকারি খাতে আর কোনো নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছিলেন। ফলে বিএনপি সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত কোনো নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়নি। যদিও ওই সময়ে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন চেয়ে ১০৬টি আবেদন পড়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে অর্থনীতিবিদদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বার বার বলে আসছে বর্তমান অর্থনীতিতে নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু সরকারের বাইরে নয়, তাই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রাখতে পারে না। সরকারের সদিচ্ছার কারণে বিএনপির আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার সিদ্ধান্ত ধরে রাখতে পারছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে যেখানে অর্থমন্ত্রীর মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয় না, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক তার মতামত দিয়ে বেশি দূর যেতে পারে না। নতুন ব্যাংক দেয়ার সরকারের সিদ্ধান্তকেই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়। যেমনটি করা হয়েছিল ২০১২ সালে। এখনো তাই করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭ উপজেলা নির্বাচনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি বাগাতিপাড়ায় ইসতিসকার নামাজ পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন : বাকৃবি অধ্যাপক বৃষ্টির জন্য হাকাকার, সাভারে ইসতিসকার নামাজ আদায় বরিশালে সালাতুল ইসতিসকার আদায় অর্ধ শতাব্দীতে ভ্যাকসিন সাড়ে ১৫ কোটি লোকের জীবন বাঁচিয়েছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আল্লাহর রহমত কামনায় সকলকে সিজদাহ অবনত হতে হবে-মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন কাউখালীতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা ভাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

সকল