২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গরিবের আটা হয়ে গেল ধনীদের খাবার

তিন দশকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
-

আটা একসময় ছিল গরিবের খাবার। অর্থের অভাবে যাদের চাল কেনার সামর্থ্য ছিল না তারা আটা কিনতেন। ১৯৮০ এবং ’৯০ দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সচ্ছল পরিবারে আটা রুটি খাওয়ার প্রচলন ছিল না। আটা বা আটার রুটি খাওয়াটা তখন গ্রাম-গঞ্জে ছিল গরিবানার লক্ষণ।
পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলার সোহাগল গ্রামের তৈয়ব আলীর বয়স এখন ৪৬। ঢাকায় বসবাসরত তৈয়ব আলী ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেটি আশির দশকের মাঝামাঝির কথা। তিনবেলা ভাত খাওয়া তো দূরের কথা আমাদের মতো অনেকেরই দুই বেলা আটাও জুটত না ঠিকমতো। গরিব মানুষেরা আটা খেত। অনেকে এক বেলাও পেট ভরে ভাত খেতে পেত না। শুধু রাতের জন্য ভাতের আয়োজন থাকত তাদের। সেই ভাত খাওয়ার আগেও তারা দুয়েকটা রুটি খেয়ে নিত যাতে ভাত কম খেতে হয়। আর অভাবের কারণে অনেকে আটার রুটি খেত কোনো তরকারি ছাড়াই। গ্রামের সব গরিব মানুষেরই এই ছিল তখনকার নিত্যদিনের চিত্র।
তৈয়ব বলেন, আমার মনে আছে আমি চার টাকা কেজি দরে আটা কিনেছি। গ্রামে তখন বেশি পাওয়া যেত লাল আটা। লাল আটার চেয়ে সাদা আটার দাম আবার বেশি ছিল। সাদা আটা তখন খুবই সুস্বাদু ছিল লাল আটার তুলনায়। চমৎকার ছিল তার ঘ্রান। কিন্তু অনেকের অভাব এতই প্রকট ছিল যে, তাদের সাদা আটা কেনার সামার্থ্যও ছিল না।
গরিবের এই আটা বেশি দিন আর গরিবের খাবার থাকল না। এটি পরিণত হলো বেশ দামি খাবারে এবং ক্রমে চলে গেল গরিবের নাগালের বাইরে। আটা হয়ে গেল ধনীদের খাবারে। আটার দাম বৃদ্ধি আর বিশেষ করে নগর সংস্কৃতি এবং ডায়াবেটিস রোগের বিস্তারের কারণে আটা পরিণত হলো ধনীদের নিত্যদিনের খাবারে। অন্য দিকে পরে আটার বিপরীতে চালের দাম কম থাকায় গরিব মানুষ আটা খাওয়া বাদ দিয়ে ভাত খাওয়ার দিকে ঝুঁকল।
ক্যাবের পণ্যমূল্য তালিকায় দেখা যায় ১৯৯০ সালে সাদা খোলা আটার কেজি ছিল ১১ টাকা। দীর্ঘ ১২ বছর পর্যন্ত আটার দাম তেমন বাড়েনি। ২০০২ সালেও সাদা খোলা আটার কেজি ছিল মাত্র ১৪ টাকা। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এর দাম ১৯ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু এর পর থেকেই অস্বাভাবিকভাবে এ আটার দাম বাড়তে লাগল এবং গরিব মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায় এ আটা। একই সময় চালসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও রেকর্ড পরিমাণ বাড়তে থাকায় গরিব সাধারণ মানুষ অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়ে। ২০০৬ সালে যেখানে আটার কেজি ছিল ১৯ টাকা সেটি ২০০৭ সালে হলো ৩৩ টাকা। পরের বছর ২০০৮ সালে সাদা খোলা আটার কেজি হয় ৩৬ টাকা এবং প্যাকেটজাত আটার কেজি হয় ৪০ টাকা। এরপর ২০০৯ সালে দাম অনেকটা কমে খোলা আটার কেজি ২০ টাকা হয়। তবে ২০১১ সাল থেকে আবার বাড়তে থাকে। ২০১০ সালে যেখানে ছিল ২৫ টাকা কেজি সেখানে ২০১১ সালে খোলা আটার কেজি বেড়ে হয় ২৯ টাকা। ২০১২ সালে প্যাকেট আটার কেজি হয় ৩৮ টাকা। ২০১৩ সালে খোলা আটার কেজি হয় ৩৬ টাকা। বর্ধিত এ দাম স্থির থাকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত।
এরপর থেকে কিছুটা দাম কমতে থাকে আটার। গতকাল সিপাহিবাগ বাজারে সাদা খোলা আটার কেজি ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। প্যাকেটজাত আটার কেজি ৩৪ টাকা। এক সময় লাল আটার দাম ছিল সবচেয়ে কম এবং সেটিই ছিল মূলত গরিবের খাবার। কিন্তু বর্তমানে সেই লাল আটার দামই সবেচেয় বেশি এবং তা পাওয়া যায় না বললেই চলে। রাজধানীর শৌখিন কিছু দোকানে এ লাল আটা পাওয়া যায় এবং এর কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। অন্য দিকে সম্প্রতি বড় বড় প্রতিষ্ঠান সাদা আটার মতো লাল আটাও প্যাকেটে বিক্রি শুরু করেছে। তবে তা অতটা লাল নয় এবং দামও কিছুটা কম। বর্তমানে ২ কেজি ওজনের এ লাল আটার প্যাকেট ৭৫ টাকায় পাওয়া যায় রাজধানীর অনেক দোকানে।
ক্যাবের তালিকায় দেখা যায় ১৯৯৩ সালে সাদা আটার কেজি ১২ টাকা আর লাল আটার কেজি মাত্র ৯ টাকা। ১৯৯৮ সালেও সাদা আটার কেজি ছিল ১৬ টাকা আর লাল আটা ১৪ টাকা। ২০০২ সালে সাদা আটা ১৪ টাকা আর লাল আটা ১২ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। তবে ২০০৪ সালের পর থেকে সাদা আটার বিপরীতে বাড়তে থাকে লাল আটা এবং একপর্যায়ে দু®প্র্রাপ্য হয়ে যায় এ লাল আটা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরে নিহতদের বাড়ি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী টিকটকে ভিডিও দেখে পুরস্কার, প্রভাব ফেলছে মানসিক স্বাস্থ্যে পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে: পাটমন্ত্রী মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও নেতাকর্মীরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে : সালাম নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশ সচিব সৌরশক্তি খাতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় জার্মানি ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতি’ মোদি কি হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের চেনা রাজনীতিতে ফিরছেন? টাঙ্গাইলে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ ফুলগাজীতে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু দোয়ারাবাজারে শিশু হত্যা মামলার আসামিসহ গ্রেফতার ২

সকল