২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শ্যামনগরে ধানের শীষের পোস্টার ছাপানোর সময় প্রেসে হামলা ও লুট

-

আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী পুলিশের বিশেষ অভিযানে ৫২ জন আটক হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতা আজিজুর রহমান জানান, গত দুই দিন ধরে সাতক্ষীরা-৩ আসনে (দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও আশাশুনি) পুলিশ আভিযানের নামে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। বাড়ির গৃহকর্তাকে না পেলে গৃহবধূকে সাবধান করে দিয়ে আসছে, যেন নির্বাচনের আগে বাড়িতে না ফেরে। এ দিকে, সাতক্ষীরা শ্যামনগরে ধানের শীষ প্রতীকের ছাপানো পোস্টার ও হ্যান্ড বিল লুটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। রোববার রাত ১০টার দিকে শ্যামনগর উপজেলা সদরের নকিপুর বাজারের নুর কম্পিউটার মার্কেটে ঘটনাটি ঘটে। এ সময় দুর্বৃত্তরা ওই মার্কেটের মুক্ত ছাপাখানা ও সোনালী প্রেস নামীয় দু’টি প্রতিষ্ঠান থেকে ধানের শীষ প্রতীকে ছাপানো ১৫ হাজার হাজার পোস্টার এবং সোনালী প্রেস থেকে ছাপানো তিন হাজার হ্যান্ডবিল লুটে নেয়। দু’টি প্রতিষ্ঠানের মালিক যথাক্রমেÑ আনিছুজ্জামান ও নুর এ আলম সিদ্দিকী পোস্টার লুটের সাথে জড়িতদের নাম প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী বেলাল ও আজিজুরসহ অনেকে জানান উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান সরদার এবং বাদঘাটা কিং স্টার ক্লাবের সভাপতি মোস্তফার নেতৃত্বে ১৫-১৬জন ওই হামলা ও লুটের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
তবে সোনালী প্রেসের মালিক নুর এ আলম সিদ্দিকী বলেন পোস্টার নিয়ে যাওয়ার আগে হামলাকারীরা তার দোকানে থাকা কর্মচারী আবু সাইদকে বেপরোয়া মারধর করে। এ ছাড়া, পরে এসব প্রতিষ্ঠানে ধানের শীষ প্রতীকের কোনো পোস্টার না ছাপানোর হুমকি দিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে হামলাকারীরা প্রতিষ্ঠান দু’টি তালাবদ্ধ করে দিয়ে চাবি নিয়ে গেলেও পরক্ষণে এসে চাবি ফেরত দেয় বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
এ দিকে, এই গ্রুপটি গত ৮ ডিসেম্বর ছাত্র শিবিরের এক কর্মীকে বেধড়ক মারধর করলে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলেও পরক্ষণে আবারো হামলার শঙ্কায় অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ দিকে, বিএনপি করার অভিযোগে শ্যামনগরে সাবেক ছাত্র দলের এক নেতার ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
বিএনপি করিস, এখন বাইরে কেন? প্রশ্ন করেই ছাত্রদলের সাবেক নেতা হাফিজ আল আসাদ কল্লোল হোসেনের ওপর হামলা চালায় এক দল দুর্বৃত্ত। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শ্যামনগর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনের রাস্তায়। হাফিজ সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের জিয়া হলের সাবেক ছাত্রদল সভাপতি ছিলেন।
এ দিকে, জেলাব্যাপী পুলিশের বিশেষ অভিযানে ৫২ জনকে আটক করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত জেলার আটটি থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক আজম খান জানান, সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে ১৪, কলারোয়া থানা থেকে ছয়, তালা থানা থেকে চার, কালিগঞ্জ থানা থেকে ছয়, শ্যামনগর থানা থেকে আট, আশাশুনি থানা থেকে সাত, দেবহাটা থানা থেকে তিন ও পাটকেলঘাটা থানা থেকে চারজনকে আটক করা হয়েছে। আটকরা বেশির ভাগই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী।
জামায়াতের নিন্দা ও প্রতিবাদ
জামায়াতে ইসলামীর চাঁদপুর জেলা সেক্রেটারি মাওলানা বিল্লাল হোসেন মিয়াজীকে গতকাল পুলিশের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার এবং ৯ ডিসেম্বর রাতে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের দু’টি ছাপাখানা থেকে ধানের শীষ প্রতীকের ১৮ হাজার পোস্টার ও তিন হাজার হ্যান্ডবিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের লুট করে নিয়ে যাওয়া এবং ছাপাখানার একজন কর্মচারীকে বেদম মারধর করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এবং সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, মাওলানা বিল্লাল হোসেন মিয়াজীকে পুলিশের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার এবং সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের দু’টি ছাপাখানা থেকে ধানের শীর্ষ প্রতীকের ১৮ হাজার পোস্টার ও তিন হাজার হ্যান্ডবিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের লুট করে নিয়ে যাওয়া এবং ছাপাখানার একজন কর্মচারীকে বেদম প্রহার করার ঘটনার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রই অত্যন্ত নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আমি এ ঘটনা দু’টির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঘটনা দু’টির দ্বারা আবারো প্রমাণিত হলো দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। সরকারি দলের সন্ত্রাসী কর্মীরা বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করার হীন উদ্দেশ্যেই প্রশাসনের সহযোগিতা ফ্যাসিবাদী তাণ্ডব শুরু করেছে। তাদের এ ধরনের তাণ্ডব কঠোর হস্তে দমন করার জন্য তিনি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। একই সাথে তিনি অবিলম্বে মাওলানা বিল্লাল হোসেন মিয়াজীসহ সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরে ধানের শীর্ষের পোস্টার ও হ্যান্ডবিল লুটের ঘটনার সাথে জড়িত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

 


আরো সংবাদ



premium cement