২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গায়েবি মামলা নিয়ে করা রিটের শুনানি মুলতবি

-

বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ‘গায়েবি’ মামলার তদন্ত বন্ধ, ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরবর্তীতে এ ধরনের মামলা না দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি মুলতবির এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। সাথে ছিলেন আইনজীবী মো: মাসুদ রানা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মানিক।
এ মামলায় রিটকারীদের পক্ষে শুনানি শেষ হলেও রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করবেন বলে সময় চাওয়া হলে মামলার কার্যক্রম বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবির আদেশ দেন আদালত।এর আগে আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ‘গায়েবি’ মামলার তদন্ত বন্ধ, ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরে এ ধরনের মামলা না দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ। এর ফলে নিয়মানুসারে মামলাটি প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। পরে প্রধান বিচারপতি মামলাটির শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চ গঠন করে দেন। এতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দিয়েছিলেন। এই দ্বৈত বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী তার আদেশে ‘গায়েবি’ মামলা হিসেবে অভিযোগকারীসহ অন্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা মামলা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একইসাথে ঢাকায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো তদন্ত করে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলার পরবর্তী তারিখ ১৭ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেন। এরপর আদালতের কনিষ্ঠ বিচারপতি আশরাফুল কামাল তার আদেশে বলেন, রিটটি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই এ রিটটি আমি প্রত্যাখ্যান (খারিজ) করলাম।
পরে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, গত ৮ অক্টোবর রুল পাওয়ার আশায় আদালতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। ড. কামাল হোসেন ৮ অক্টোবর শুনানি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, (৯ অক্টোবর) তার আর আসার দরকার হবে না। আজকে (ওই দিন) অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করলেন। তিনি শুনানিতে আদালতকে বললেন, এসব ফৌজদারি মামলা রিটের আওতায় আসবে না, এগুলো কোয়াশিংয়ে (বাতিল) যাবে। জবাবে আমি আদালতকে বললাম, সারা দেশের আট লাখ লোক এ মামলায় আসামি। তাই একটি রিট করে আমরা এ ধরনের ঘটনা (গায়েবি মামলা) ঘটেছে কি না তা জানতে চাই। পরে আদালত দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দিলেন। এর ফলে মামলাটি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। এরপর তিনি মামলাটি শুনানির জন্য অন্য একটি বেঞ্চ গঠন করে দেবেন।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন অ্যাডভোকেট এ কে খান। প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী ও সানাউল্লাহ্ মিয়ার পক্ষে এই রিট দায়ের করা হয়।
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটের আবেদন করা হয়। রিটে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারা দেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে করা চার হাজার মামলা এবং তিন লাখের বেশি লোককে আসামি করার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসাথে, এ বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
এ ছাড়া, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যত গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে, সেগুলোর তদন্ত বন্ধ এবং এ গায়েবি মামলাগুলোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে পরে যেন এ ধরনের মামলা দেয়া না হয়, তার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অগণিত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশি ক্ষমতা অপব্যবহার করে গায়েবি বা আজগুবি মামলা দায়ের করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রিটে সে বিষয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছিল।
এ দিকে গতকাল মঙ্গলবার রিটের পক্ষে প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে প্রত্যেক থানায় বিএনপিসহ বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকে হজ করতে গেছেন, আবার কেউ কেউ মারা গেছেন। এসব নেতাকর্মীকে জড়িয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়েছে। তাই আমরা এসব ‘গায়েবি’ মামলার তদন্ত বন্ধ, ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরে এ ধরনের মামলা না দেয়ার নির্দেশনা এবং রুল চেয়েছি। আদালত আমাদের শুনানি গ্রহণ করে এবং পরবর্তী আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন। 


আরো সংবাদ



premium cement