২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি জয় ধরে রাখার চেষ্টা আ’লীগের

বগুড়া-১ আসন
-

যমুনা ও বাঙ্গালী নদী ঘেরা সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-১ আসন। এ আসনটি পুনরুদ্ধারে বিএনপি মরিয়া হয়ে কাজ করছে। সেই সাথে বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে নানা কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বগুড়া জেলার সাতটি সংসদীয় আসনের মধ্যে আলোচিত আসন বগুড়া-১ আসন। যমুনা ও বাঙ্গালী নদীবিধৌত পূর্ব বগুড়ার দু’টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছেন। তারা অনেকে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
বগুড়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন সিরাজুল ইসলাম সুরুজ। এরপর দীর্ঘ সময়ে আর আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারেনি। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ হোসেন তরফদার, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কর্নেল (অব:) আব্দুল মোমিন মণ্ডল, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির প্রার্থী ডাক্তার হাবিবুর রহমান নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজী রফিকুল ইসলাম বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমান এমপি আব্দুল মান্নান ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। তবে তিনি ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের বিতর্কিত দশম নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো এমপি হন তিনি।
আগামী নির্বাচনে এই আসন পুনরুদ্ধারে তৎপর হয়ে উঠেছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতা। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বগুড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শোকরানা। নির্বাচনে জয়ের জন্য তিনি ও বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এলাকার জনগণের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের আহ্বান জানাচ্ছেন। জনগণের অন্যতম দাবি, নদীভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান, বেকার সমস্যার সমাধান, রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্টের উন্নয়নসহ এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও কাজ করার আশ^াস দিচ্ছেন। তিনি দলের বর্তমান দুঃসময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। তার সমর্থকদের দাবি, শোকরানাকে দলের প্রার্থী করা হলে তিনি ধানের শীষের বিজয় উপহার দেবেন।
দলের অন্যতম মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম। তার সমর্থকদের দাবি, তিনি এলাকার জনগণের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। তার হাত ধরে চার দলীয় জোট সরকারের আমলে (২০০১-২০০৬) যমুনা ভাঙন রোধসহ অনেক উন্নয়নকাজ হয়েছে। তাই তাকে দলের মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি জয়লাভ করবেন। দলের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী বগুড়া জেলা বিএনপির শিশুবিষয়ক সম্পাদক ও জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী। তিনি নিয়মিত নির্বাচনী এলাকায় যান এবং জনগণের পাশে রয়েছেন। তার সমর্থকদের দাবি, তাকে দলের প্রার্থী করলে তিনি আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। এ ছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসানুল তৈয়ব জাকির, ড্যাব, বগুড়া জেলা সভাপতি অধ্যাপক ডা: শাহ মো: শাহজাহান আলী, সারিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান মাছুদুর রহমান হিরু মণ্ডল, সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রফেসর ড. শামছুল আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ বেলাল হোসেন।
এ দিকে আবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পেতে পারেন বর্তমান এমপি আব্দুল মান্নান। তার মনোনয়ন নিশ্চিত বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন তার সমর্থকেরা। তাদের দাবি তিনি আবারো প্রার্থী হলে নৌকার জয় হবে। এ ছাড়াও আরো যারা আ’লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তারা হলেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা: মোকবুলার রহমান, সারিয়াকান্দি পৌরমেয়র আলমগীর শাহী সুমন, বগুড়া জেলা কমিটির সদস্য মুনজিল আলী সরকার, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম সিরাজুল ইসলাম সুরুজের ছেলে মোজাহিদুল ইসলাম বিপ্লব, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত কর কমিশনার মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী, বিটিসিএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক খাবিরুজ্জামান বাদশা, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন নবাব।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সারিয়াকান্দি উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও শিক্ষক নেতা মোখছেদুল আলম ও জি এম বাবু মণ্ডল।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে চান সারিয়াকান্দি পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ টিপু সুলতান।
হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী, বগুড়া-১ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৪২২ জন। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১ লাখ ৭১ হাজার ৫০৪ জন এবং সোনাতলা উপজেলায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১৮ জন। এ আসনে মোট ১২২টি ভোটকেন্দ্র। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ৬৯টি ও সোনাতলায় ৫৩টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ রয়েছে ৬১১টি। এর মধ্যে সারিয়াকান্দিতে ৩৪০টি ও সোনাতলায় ২৭২টি।


আরো সংবাদ



premium cement