১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আ’লীগকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন : রিজভী

-

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন কমিশন বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়া আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজদের ভোটে সুরক্ষা দিতে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়েছে ইসি। মূলত আওয়ামী দুর্নীতিবাজদের ভোটে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার বিধান রদ করে দিয়েছে। আয়কর বিবরণী সনদপত্রে সংক্ষিপ্তভাবে প্রার্থীর আয়-ব্যয় ও সম্পদের বিবরণীর বাধ্যবাধকতা বাতিল করে তাদের সম্পদ ঢেকে রাখার বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, আপনারা ওয়াকিবহাল আছেন বর্তমান অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী-এমপি-নেতারা জনগণের সম্পদ লুটপাট করে একেকজন অর্থবিত্ত ও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। কেউ কেউ বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের শীর্ষ ধনীদের ‘টপ টেন’ তালিকায় নাম উঠিয়েছেন। লোভ-লালসা-রাহাজানি-ডাকাতি অনন্তভাবে চলমান রাখার জন্যই তারা জোর করে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়ায় অহরহ কারো কারো বেশুমার সম্পদের কিয়দাংশের খবর বেরুচ্ছে। ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক থাকার ফলে দেশের মানুষ জানতে পেরেছে মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদ এক শ’ গুণ থেকে পাঁচ শ’ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাদের স্ত্রীরাও পাল্লা দিয়ে গড়েছিলেন সম্পদের পাহাড়। ২০০৮ সালে ধারদেনা করে নির্বাচন করেছেন এমন এমপিরাও কয়েক শ’ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সাথে যোগ হয়েছে বাড়ি, ফ্ল্যাট, ব্যাংকে নগদ টাকা, জমি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র, এফডিআর ইত্যাদি। কিন্তু ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্তও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে হরিলুট হয়েছে, লুটপাটের কারণে ব্যাংকগুলোতে অর্থসঙ্কট দেখা দিয়েছে। দেউলিয়া হওয়ার পথে অধিকাংশ ব্যাংক। সব ক্ষেত্রে দুর্নীতির কারণে মানুষের জীবন দুুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কি পরিমাণ সম্পদ বেড়েছে সেটি যাতে জনগণ জানতে না পারে সে জন্য আওয়ামী সরকারের বংশীবাদক নির্বাচন কমিশন আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের রিটার্ন দাখিল করার বাধ্যবাধকতার বিধান তুলে দিয়েছে। বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির খবর ঢেকে রাখতেই আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেনি ইসি। ফলে আওয়ামী লীগের অনেকেই সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বকেয়া রেখেও আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। করযোগ্য নয় বলে অনেকেই মিথ্যা তথ্য দেবেন। আইনি শিথিলতার সুযোগে নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে প্রচার-প্রচারণা চালালেও করযোগ্য আয় নেই বলে নির্বাচন কমিশনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পার পেয়ে যাবেন।
রিজভী বলেন, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার বিধানটি কেবল বাদ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন। এমনকি টিআইএন না থাকলেও প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র এবার বাতিল হবে না বলে আইন করা হয়েছে। আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে একই সাথে ঋণ ও বিল খেলাপিদের প্রার্থী হওয়ার শর্ত সহজ করেছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। গত ৩১ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠক শেষে শেখ হাসিনার একান্ত অনুগত ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন থেকে প্রার্থীদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে না। আগে সকল প্রার্থীর আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক ছিল, কিন্তু এখন তা বাধ্যতামূলক নয়। যাদের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) আছে কেবল তারাই জমা দেবেন, আর যাদের নেই তাদের জমা দেয়ার প্রয়োজন নেই।’
তিনি বলেন, ইসি সচিব আরো বলেছেন, ‘আগে নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে ঋণ খেলাপীদের মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার সাত দিন পূর্বে ঋণ বা কিস্তি পরিশোধের বিধান ছিল এবং ব্যাংক থেকে কোনো কিস্তি বকেয়া নেই এমন সার্টিফিকেট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়ার বিধান ছিল। বর্তমান বিধান অনুযায়ী একদিন আগে ঋণ পরিশোধ করেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন।’ সে ক্ষেত্রে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের পেপারস জমা দেয়া সম্ভব। কারণ তখন যাচাই-বাছাই করার মতো সময় ও সুযোগ নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে না। বড় ঋণখেলাপিরা আইনে বড় সুযোগ পেলেও ছোট খেলাপিদের ক্ষেত্রে তা নেই। কৃষকদের বেলায়ও আইনের উল্টোটা করা হয়েছে। আরপিওর ১২ (১) এর এল উপধারা সংশোধন না হওয়ায় কৃষিকাজের জন্য গৃহীত ক্ষুদ্র কৃষিঋণের কিস্তি সাত দিন আগে পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন। আরপিওর ১২ (১) এর এন উপধারা সংশোধন না হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে মনোনয়নপত্র দাখিলের সাত দিন আগে বকেয়া টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা অন্য কোনো সেবা প্রদানকারী সংস্থার বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসির জারি করা পরিপত্র-১ এ এই বৈষম্য চিত্র ফুটে উঠেছে।
রিজভী বলেন, সংশোধিত আরপিওর কারণে আওয়ামী লীগের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থীদের জালিয়াতি করার সুযোগ বেড়ে যাবে। নির্বাচন কমিশনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সরকার দুর্নীতিবাজদের এই সুযোগ দিয়েছে। ফলে এবারের নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হবে। দখল আর দুর্নীতির অন্তঃক্রিয়াই আওয়ামী সংস্কৃতি। চাঁদপুরের ডিসি ক’দিন আগে বলেছেন, ‘আমি নিরপেক্ষ থাকতে পারব না, নিরপেক্ষ থাকলে খারাপ লোকজন চলে আসবে, উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।’ বিএনপির একজন নেতা ডিসিকে টেলিফোনে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে তিনি দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
দেশজুড়ে চলমান গ্রেফতার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ঢাকা মহানগরীর চকবাজার থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রাসেল গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করার পরও তার সন্ধান মিলছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই তাকে আটক করেছে অথচ তারা এখন পর্যন্ত তাকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করছে না। আমি আবারো অবিলম্বে শফিকুল ইসলাম রাসেলকে জনসমক্ষে হাজির করার জোর দাবি জানাচ্ছি। শাহজাহানপুর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ ভূঁইয়াকে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করছে না পুলিশ। আমি অবিলম্বে তাকেও জনসমক্ষে হাজির করার জোর দাবি জানাচ্ছি। তফসিল ঘোষণার পর যশোরের বাঘারপাড়া বিএনপি নেতা রেজাউল ইসলাম, আব্দুল্লাহ, হামিদুর, ড. ওয়াহিদ, আলমগীর হোসেন, আব্দুল ওয়াহিদ, সাইদুর রহমান, নাজিম উদ্দিন, আহমেদ আলী, বাবুল আহমেদ, সিদ্দিকুর রহমান ও মোস্তফা এবং অভয়নগরের বিএনপি নেতা আতাউর রহমান, হারুন, সাঈদ, আলমগীর, ইয়ামিন, যুবদল নেতা বাকি উজ্জামান, সাইদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাসায় গিয়ে তাদের পরিবারের নিকট থেকে টাকা দাবি করছে পুলিশ। তফসিলের পরে উল্লিখিত স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৯টি বানোয়াট ও মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। আমি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মিথ্য মামলা প্রত্যাহারসহ তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।


আরো সংবাদ



premium cement