১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিচারিক ক্ষমতা ছাড়া সেনাবাহিনী মোতায়েনের সফলতা নিয়ে সংশয়

একাদশ সংসদ নির্বাচন
-

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাথে ধারাবাহিক সংলাপে অংশ নেয়া ১৮টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৩টি দলই একই দাবি জানিয়েছিল। আর ক্ষমতাসীন দলের জোট বলছে, নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করতে। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাথে একাধিকবার বৈঠকও করেছে রাজনৈতিক জোটগুলো। তবে বিচারিক ক্ষমতা ছাড়া সেনামোতায়েন করলে কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিচারিক ক্ষমতা ছাড়া শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে কোনো ফল পাওয়া যাবে না। যারা ভোট জালিয়াতি, দখলকারীরা তাদের কাজ করে চলে যাবে ভোটারেরা তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।
এর আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা না দিয়ে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে সেনা মোতায়েন করা হয়। কিন্তু সে নির্বাচনগুলোতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি সেনাবাহিনী। ফলে সেসময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রার্থীরা।
প্রার্থীদের অভিযোগÑ বিচারিক ক্ষমতা ছাড়া সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত আইওয়াশ ছাড়া কিছু নয়। আমাদের দাবি ছিল, সেনা মোতায়েন ও সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হোক। উপজেলা নির্বাচনেও সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ছিল, বিচারিক ক্ষমতা না দেয়ায় তাতে কোনো কাজ হয়নি। এবারো নির্বাচন কমিশন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েনের কথা বলেছে এটা ‘আইওয়াশ’ মাত্র। আমরা এজন্য সেনাবাহিনী চাইনি। সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েন করতে হবে।
ইসি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ভোটের দুই থেকে তিন দিন অথবা সাত থেকে ১০ দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। যদিও এর কয়েক ঘণ্টা পরই বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ভিন্ন কথা বলেন ইসি সচিব। তিনি জানান, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেনাবাহিনীর সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর পর থেকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশা।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা যেটুকু সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটুকু সিইসি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) মহোদয়ের জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের মধ্যেই ছিল। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আছে। তবে কিভাবে, কত দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে, এটা পরে সেনাবাহিনীর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
১৫ নভেম্বর বিকেলে একই কথা বলেছিলেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ; তিনি ওই দিন সকালে এক বক্তব্যে বলেছিলেন, নির্বাচনের দুই থেকে তিন দিন, এক সপ্তাহ বা ১০ দিন আগে সেনা মোতায়েন থাকবে, বিজিবি মোতায়েন হবে।’ তবে একই দিন বিকেলে ওই বক্তব্য অস্বীকার করেন তিনি।
অস্বীকার করে সচিব ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয় নাই। আমি ওভাবে বলি নাই। আমি বলেছি যে, যেহেতু ইউএনওরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী যখন যাবে তখন যাতে একোমোডেশনটা রাখা হয়, ওই জন্য আমি বলেছি যে, ওটা দুই দিন আগেও যেতে পারে, সাত দিন আগেও যেতে পারে, ১০ দিন আগেও যেতে পারে। সুতরাং তাদের জন্য যাতে পর্যাপ্ত একোমোডেশন রাখা হয়।
সচিবের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, সিদ্ধান্তগুলো একপক্ষ (সচিবকে উদ্দেশ করে) থেকে নিয়ে নিলে হবে না। সিদ্ধান্ত নিতে হলে অন্যদের (সিইসি ছাড়াও অন্য তিন কমিশনার) সাথে বসতে হবে।
সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই বলেও জানান রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রিয়াল পাওয়ার দেয়ার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের না। ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেসি দিতে গেলে একটা প্রক্রিয়া আছে। আইনি প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না করলে কাউকে এটা দিয়ে দেয়া যায় না। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া যায় কি না, সেই ব্যাপারটা আইনের মাধ্যমে সিদ্ধ হতে হবে। এটা সিদ্ধ কি না, সেটাই একটা বড় প্রশ্ন বলে উল্লেখ করেন এই কমিশনার।
রফিকুল ইসলাম জানান, সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার চাওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ইতোমধ্যে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। তার ভাষ্য, ইতোমধ্যে আমরা তাদের (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) বলেছি যে, আইনে এরকম কোনো সুযোগ নাই। কারণ সেনাবাহিনী আর বিজিবি কোনোদিনই তাদের আইনে ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া কোথাও মুভ (যাতায়াত) করতে পারে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা বিজিবি মোতায়েন করেছি। তারা ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া মুভ করতে পারেনি।
তিনি আরো জানান, ভোটের কয় দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে সেই পরিকল্পনা কমিশন করেনি তা নয়। সেই পরিকল্পনা আমাদের মাথার মধ্যে আছে। সিইসিকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আমরা এমপাওয়ার্ড করে দিয়েছি। এ বিষয়ে সিইসি যা বলবেন তা-ই চূড়ান্ত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement