২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি অব্যাহত

ইসির হস্তক্ষেপ নেই
-

২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নয়াপল্টনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় নতুন করে দিশেহারা অবস্থায় নেতাকর্মীরা। তাদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে তল্লাশি অভিযান। অপর দিকে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহত হলেও ওইসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কোনোই ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এক দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হলেই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন জানাচ্ছে এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অপর দিকে মোহাম্মদপুরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দু’জন নিহত হলেও ওই মামলায় গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতা দিনে দিনেই জামিন পেয়ে যান। এই দ্বৈত আচরণের কারণে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই বলেছেন, নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছে।
গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে সেখানে পুলিশের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ সেখানে কয়েক শ’ রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় আহত হন অনেকেই। সংঘর্ষে পুলিশেরও কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। ঘটনার পরই ওই এলাকা থেকে অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সাধারণ পথচারীও রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দেয়া হয়েছে পল্টন থানায়। ওই মামলাতেই গত বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্রবধূ ও নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে নিপুণ রায় গ্রেফতার হন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই মামলাগুলো নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। মামলার এজাহারে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তার বাইরে অনেকেই রয়েছেন অজ্ঞাত আসামি হিসেবে। পুলিশ এখন যাদেরকে গ্রেফতার করছে ওই অজ্ঞাত আসামি হিসেবে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখাচ্ছে বলে জানা যায়। ওই তিন মামলায় গ্রেফতার অনেকেই পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন। রিমান্ডে যারা রয়েছেন তাদের একজনের পরিবার গতকাল বলেছেন, ওই ব্যক্তি ঢাকায় এসেছিলেন নিজের ফার্মেসির জন্য ওষুধ ক্রয় করতে। তিনি ওষুধের ব্যবসা করেন। ঘটনার সময় তিনি নয়াপল্টন এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তিনিও বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন।
গতকাল বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সাথে কথা হয়। শিমুল নামে এক কর্মী গতকাল বলেন, যেভাবে পুলিশ চারি দিক দিয়ে কর্ডন করে রেখেছে তাতে ভয়ই লাগে। রিয়াজুল নামে জেলাপর্যায়ের এক নেতা বলেন, মনে হয় এই বুঝি পুলিশ ধরল। সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।
অপর দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হলেও ওই মামলার আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের কোনো উদ্যোগ নেই। গত ১০ নভেম্বর মোহাম্মদপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাদেক খানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পিকআপ চাপায় সুজন ও আরিফ নামে দু’জন নিহত হন। এই ঘটনায় নানক সমর্থক যুবলীগ নেতা তুহিনকে গ্রেফতার করা হলেও তিনি দিনে দিনে জামিনে মুক্তি পেয়ে যান। এই সংঘর্ষের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কোনোই তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।
তফসিল ঘোষণার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কাজ করার কথা থাকলেও তারা এখন পর্যন্ত কাদের কমান্ডে দায়িত্ব পালন করছেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে পুলিশের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।


আরো সংবাদ



premium cement