২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাচ্ছে

অর্থের সংস্থান না করেই একের পর এক প্রকল্প অনুমোদন
-

কাক্সিত হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। আসছে না বৈদেশিক অনুদান। কিন্তু এর পরও শেষ মুহূর্তে সরকার একের পর এক প্রকল্প অনুমোদন করছে। অর্থের সংস্থান না করে ব্যয় বাড়িয়ে দেয়ায় সরকার সঞ্চয়পত্রসহ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নগদ টাকার সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো পড়েছে মহাবিপাকে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এমনিতেই নগদ টাকার সঙ্কট, এর ওপর সরকারের ঋণগ্রহণের হার বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ আরো সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানের ওপর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সরকার তার বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ছয় হাজার ২০৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল তিন হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়েছে ৮৬ শতাংশ। একই সাথে সঞ্চয়পত্র থেকে দুই মাসে ঋণ নিয়েছে ৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। ফলে দুই মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা ও ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ঋণ নিয়েছে ১৫ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১২ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় চাপের মুখে পড়েছে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে প্রধান বিরোধীদলবিহীন অনেকটা একতরফা নির্বাচনের পর নানামুখী সমালোচনার সম্মুখীন হয় সরকার। এ সমালোচনা ঢাকতে জনগণকে আশ্বস্ত করতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেয় সরকার। বড় বড় প্রকল্পের কাজে হাত দেয়। কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় বড় প্রকল্পের পাশাপাশি জনগণের কাছে দেয়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে নানামুখী কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টসহ নানামুখী কাজ হাতে নিয়েছে। এর সাথে নতুুন করে যোগ হয়েছে নদীভাঙন। হাজার হাজার ঘরবাড়ি নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এরই মধ্যে ২৫০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। একই সাথে ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় ও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় নানামুখী চাপে থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতেও তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের (সিএসআর) অংশ হিসেবে বেশ কিছু অর্থ এসব খাতে বরাদ্দ করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর জন্য এক সার্কুলারও জারি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সরকারের যে পরিমাণ ব্যয় বেড়ে গেছে সেই হারে আয় বাড়েনি। এতেই সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের ব্যয় মেটাতে গিয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনা বেশ চাপে পড়েছে। যার ফলে ঋণ গ্রহণ বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক অনুদানও কমে গেছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই মাসে বৈদেশিক অনুদান এসেছিল ২৬ কোটি ডলার, এবার একই সময়ে এসেছে মাত্র ছয় কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে বৈদেশিক অনুদান কমেছে প্রায় ৭৭ শতাংশ, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে বেড়েছিল ৯০ শতাংশ।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এক দিকে বড় বড় শিল্পগ্রুপ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ফেরত দিচ্ছে না, এতে ব্যাংকের ঋণ আদায় কমে গেছে। সামগ্রিক খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ ব্যাংকই নগদ টাকার সঙ্কটে রয়েছে। এতে ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তহবিল কমে গেছে। বছরখানেক আগেও যেখানে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল সোয়া লাখ কোটি টাকা, সেটি এখন কমে নেমেছে ৭৫ হাজার কোটি টাকায়, যার বেশির ভাগই সরকারি কোষাগারে ট্রেজারি বিল ও বন্ড আকারে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত আগস্ট শেষে ব্যাংকগুলোর ন্যূনতম তারল্য সংরক্ষণের কথা ছিল প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা; কিন্তু ব্যাংকগুলোর তারল্য রয়েছে দুই লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের কোষাগারেই বিল ও বন্ড আকারে রয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। ফলে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার যে উদ্বৃত্ত তারল্য দেখানো হচ্ছে তার বেশির ভাগই ব্যাংকগুলোর হাতে নেই। অন্য দিকে সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক বিনিয়োগের ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র এক দশমিক ২৪ শতাংশ, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সরকারি হিসাবে গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে উদ্বৃত্ত ছিল ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। যে কারণে সরকার ওই সময়ে কোনো ঋণ না নিয়ে বরং আগের ঋণ পরিশোধ করেছে। চলতি অর্থছরের একই সরকারের হিসাবে অতিরিক্ত অর্থের কোনো সংস্থান নেই। বরং ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে ঋণের মাধ্যমে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। এতে জনভোগান্তি বেড়ে যাবে। পাশাপাশি নানামুখী চাপে পড়বে অর্থনীতি।


আরো সংবাদ



premium cement
বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত বগুড়ায় ধানের জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে খুন জিআই স্বীকৃতির সাথে গুণগত মানের দিকেও নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ সখীপুরে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গায় বাতাসে আগুনের হল্কা : গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম

সকল