২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
২০ দলীয় জোটের সংবাদ সম্মেলন

বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে নিরপে নির্বাচন অসম্ভব

২০ দলীয় জোটের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন অলি আহমদ : নয়া দিগন্ত -

২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমদ বলেছেন, ২০ দল নির্বাচনে আসুক সরকার সেটা চায় কি না সন্দেহ আছে। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে নিরপে নির্বাচন অসম্ভব।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
অলি আহমদ বলেন, যদি ভাবেন, আমরা মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যাবো, তাহলে ভুল করবেন। মুক্তিযোদ্ধারা কখনো মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যায় না। যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সরকারকে মোকাবেলা করব। মুক্তিযুদ্ধের মতো ভোটযুদ্ধে তরুণ প্রজন্মকে অংশগ্রহণ করতে হবে। এটা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। মুক্তিযোদ্ধারা কখনো মাঠ ছেড়ে যায় না।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা থাকার পরও এখনো সরকার মনোনীত প্রতিনিধিরা বহাল তবিয়তে আছে। নির্বাচন কমিশনকে তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এসব অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে শুধু অন্তরায় নয়Ñ প্রচণ্ড বাধা।
তিনি বলেন, গত পরশু নির্বাচন কমিশন আইজিকে এক নির্দেশে বলেছে, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় কোনো মিছিল যেন না হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। গত বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসা সারা দেশের হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর পুলিশ বিনা উসকানিতে হামলা চালায়। এতে নারীকর্মীসহ বিএনপির প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন মারাত্মক আহত হন। তিনি বলেন, ঘটনার পর বিএনপি কার্যালয় যখন জনশূন্য, তখন একদল হেলমেটধারী লোক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এই হেলমেট বাহিনী নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী কিশোর ছাত্রছাত্রীদের ওপরও হামলা চালিয়েছিল। তারা কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপরও অত্যাচার করেছিল।
গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীদের বিষয়ে অলি বলেন, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া পর যে ছবি পাওয়া গেছে, সে ছেলেটি ছাত্রলীগের কর্মী বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। মাত্র কয়েক দিন আগে মতাসীন দল চার হাজারেরও বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে। তারা ঢাকঢোল বাজিয়ে মিছিল করেছে। নির্বাচন কমিশন তখন কোনো নির্দেশনা বা কোনো আদেশ জারি করেনি। প্রশাসন ও পুলিশ কোনো বাধা দেয়নি, কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অন্য দিকে, বিএনপির জনসমাগম দেখে সরকার শঙ্কিত। সরকার মনে করল, এবার আর মতায় থাকতে পারবে না। গদি ছাড়তে হবে। এই ভয়ে তারা নিরপরাধ নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হলো।
তিনি বলেন, দুই দিন আগে লাখ লাখ নেতাকর্মী শান্তিপূর্ণভাবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে এমন কী হলো যে হামলা চালাতে হলো? আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় সমর্থকদের সংঘর্ষে দু’জন মারা গেছে। তাতে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
শিাপ্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ মনোনীত সভাপতিদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্য অপসারণ করতে ইসির প্রতি আহ্বান জানান অলি আহমদ। তিনি বলেন, অন্যথায় কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যত ধরনের অন্তরায় আছে, সেটা সরাতে হবে, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলে, কিন্তু মাঠে-ময়দানে যখন আমরা যাই, তখন দেখি মন্ত্রীরা এখনো পুলিশ পাহারায় চলে। কয়েক দিন আগে এরশাদ রংপুরে গিয়েছিলেন, সেখানে তাকে পুলিশের এসপি নিরাপত্তা দিয়েছেন। তাহলে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদেরও পুলিশের নিরাপত্তা দিতে হবে। না হলে এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে এক সময় জনগণের কাছে জবাব দিতে হবে।
এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড় বন্ধ হয়নি। সারা দেশে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদওয়ান আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি মাওলানা আব্দুর রকিব, জাগপা সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, মুসলিম লীগের সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদ্জ্জুামান ফরহাদ, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সভাপতি রিটা রহমান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের সভাপতি মুফতি ওয়াক্কাস, অপর অংশের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাশেমী, ন্যাপ ভাসানীর সভাপতি অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, জাগপা মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান, সাম্যবাদী দলের সেক্রেটারি কমরেড সাঈদ আহমেদ, বাংলাদেশ ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এন শাওন সাদেকী, এনডিপির চেয়ারম্যান কারী আবু তাহের, বিজেপির মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ, জাতীয় দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট এহসানুল হুদা, ডেমোক্র্যাটি লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, পিপলস লীগের মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুব হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement