২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ক্রিকেটও কি খেলবেন মাশরাফি!

নড়াইল-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ক্রিকেটার মাশরাফি :নয়া দিগন্ত -

ক্রিকেটার ইমরান খান এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এটি কে না জানে! ক্রিকেট ছেড়ে ভারতের আজহারউদ্দিন সংসদ সদস্য হয়েছেন। মন্ত্রী হয়েছেন শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা। এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে। কিন্তু ক্রিকেট খেলা অবস্থায় গণভোটে অংশ নিতে নমিনেশন পেপার সংগ্রহের রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মাশরাফি বিন মতুর্জা যেটি করেছেন গতকাল। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল এক্সপ্রেস ইলেকশন করবেন সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য। নির্বাচন কমিশন আগামী ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখও চূড়ান্ত করেছে। এ তারিখ আবার পরিবর্তনও হতে পারে। কথাগুলো বলার কারণ ক্রিকেটার মাশরাফি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে রয়েছে। সেখানে খেলবেন তিনি। নিউজিল্যান্ড সফর রয়েছে। সেখানেও তার খেলার কথা। বিপিএলে খেলবেন। ব্যস্ততা তার ক্রিকেটেও। যেহেতু ওয়ানডে ভার্সানের অধিনায়ক তিনিই। কিন্তু এরই মধ্যে সংসদ সদস্য হয়ে গেলে সেখানে তার খেলোয়াড়ী জীবনে প্রভাব পড়বে কি-না সেটি প্রশ্নের মুখে। তবে মাশরাফি সব কিছু ম্যানেজও করতে পারেন। হয়তো সেটি তিনি পারবেনও। কিন্তু আগামী ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও তার অধিনায়কত্বে খেলার কথা বাংলাদেশের। সেখানে একটা বিশাল আলোচনারও পাত্র হয়ে যাবেন মাশরাফি বলার অপেক্ষা রাখে না। তার আগে তিনি নির্বাচন করবেন। তবু মাশরাফির হঠাৎ করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে যুক্ত হওয়াটা কতটা সমীচীন এ নিয়ে এখন আলোচনার ঝড়। গতকাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশনপত্র কেনার পর থেকেই এ ঝড় শুরু। অবশ্য এতে ভক্তরা খুশি। একজন ক্রিকেটার এতই জনপ্রিয় যে তিনি জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে অংশ নিচ্ছেন দেশ সেবার জন্য। আবার খোদ আওয়ামী লীগেও ক্ষোভ- একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হঠাৎ করেই সংসদ সদস্য করার জন্য নির্বাচিত করা। এবং তৃণমূলের নেতা যারা ত্যাগী তাদের উপেক্ষা করা কতটা সমীচীন। মাশরাফি ভক্তরাও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। এদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি পছন্দ করেন না তাদের জন্য কষ্টটা বেশি। সামাজিক গণমমাধ্যমে তারা ঝড় তুলেছেন তার এ ‘টার্ন’-এ। তাদের অভিমত ক্রিকেটার মাশরাফিই আমাদের বেশি পছন্দ। একজন ভক্ত লিখেছেন, ‘রাস্তার পাশে বিল বোর্ড বা পোস্টারে ব্যাট-বলের মাশরাফিকেই দেখতে আমাদের পছন্দ। রাজনীতির ব্যানারের মাশরাফিকে আমাদের পছন্দ নয়।’ আওয়ামী লীগের পক্ষের লোকজন বেজায় খুশিও। খুশি হওয়ারও কথা!
তবে এটি ঠিক দিন শেষে একটা কথা ঠিকই প্রশ্ন আকারে উঠে এসেছে। ব্যক্তি মাশরাফি রাজনীতি করুক সমস্যা নেই। কিন্তু ক্রিকেটার মাশরাফির রাজনীতিটা কতটুকু সমীচীন। মাশরাফি কি আসন্ন ক্রিকেট ম্যাচগুলো খেলবেন? নাকি শিগগিরই ইতি টানতে যাচ্ছেন তার ক্যারিয়ার? কারণ ইনজুরির সাথে তার সখ্যতা দীর্ঘ দিনের। একই কারণে টেস্ট ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন। টি-২০ ক্রিকেট থেকে তাকে বিসিবির কিছু অভ্যন্তরীণ পলিটিকসের জন্য অবসরে যেতে হয়েছে। ওয়ানডেতে তিনি এখনো দুর্দান্ত। তার ক্যাপ্টেনসির এখনো বড্ড প্রয়োজন টিম বাংলাদেশের। টেস্ট ও টি-২০ তে বাংলাদেশ এখনো সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। কিন্তু ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দুর্বার। আর সেটি অনেকটাই সম্ভব হয়েছে মাশরাফির দুর্দান্ত ক্যাপ্টেনসিতে। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়েও ক্যাপ্টেন মাশরাফির সুনাম অনেক। তার বিচক্ষণ পদচারণা ওয়ানডে ক্রিকেট অনেক দূরে নিয়ে গেছে। ফলে জাতীয় স্বার্থে এখনো সে মাশরাফিকে বড্ড প্রয়োজন। বিশেষ করে আগামী বিশ্বকাপে তো অবশ্যই। কিন্তু প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে মাশরাফিকে কি আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত পাওয়া যাবে? যদি সংসদ সদস্য হয়েই যান। তাকে কি বোর্ড ওই পর্যন্ত নিয়ে যেয়ে খেলাবেন? নাকি সেখানে অন্য কাউকে বিবেচনা করবেন। সংসদ সদস্য হওয়ার পর খেলার প্রতি তার কি সে আগ্রহটা থাকবে? অনেক প্রশ্ন এসে ভর করেছে। এগুলোর উত্তর এক মাশরাফিই অনেকটা দিতে পারবেন। সময়ও কিছুটার উত্তর মিলবে। ভারতের শচীন টেন্ডুলকারও সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় ক্রিকেট খেলেছেন। কিন্তু সেটি গণভোটে অংশ নিয়ে পাস করে নয়। সেটি ছিল ‘সম্মানসূচক’। মাশরাফির বেলায় হবে গণভোটে পাস করে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অংশ নিয়ে এলাকায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে। পাস করে। এরপর ভোটে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও খেলা চালিয়ে যাওয়া। মাশরাফির জন্য একটু কঠিন হয়ে গেল কি-না, প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে এখন সর্বত্র। 

 


আরো সংবাদ



premium cement