২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অস্বাভাবিক ব্যবধান ডলারের বাজার ও প্রকৃত মূল্যে

অর্থনীতির সূচকের সমন্বয়হীনতা
-

অর্থনৈতিক সূচকগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে ডলারের প্রকৃত ও বাজার মূল্যের ব্যবধান অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। সাধারণত ডলারের প্রকৃত মূল্যের সাথে বাজার মূল্যের ব্যবধান ৫ থেকে ৭ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এ ব্যবধান এখন ১৭ টাকার ওপরে চলে গেছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, ডলারের প্রকৃত দর ও বাজার দরের মধ্যকার ব্যবধান বেশি হলে ধরে নিতে হবে অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে কোথাও গোলমাল আছে। এই ব্যবধান যত বেশি হবে তত বেশি গোলমাল থাকবে। বিশেষ করে হিসাবের ম্যারম্যাচ বা কোনো কিছু কমিয়ে বাড়িয়ে দেখার প্রণবতা থেকে এটি হতে পারে। এই প্রবণতা চলতে থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব বেরিয়ে পড়বে। সে কারণে এখনই সতর্ক হওয়া উচিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডলারের বিপরীতে টাকার প্রকৃত বিনিময় মূল্য নির্ধারিত হয় একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে। যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভালো, পণ্য আমদানি-রফতানি বেশি, অর্থনীতির মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে এমন সব দেশের রফতানি, আমদানি, মূল্যস্ফীতি, পণ্যমূল্য, উৎপাদনশীলতা ইত্যাদি তথ্য বিবেচনায় নিয়ে এই মূল্য বের করা হয়। এমন ১০টি দেশের মুদ্রা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি বাস্কেট তৈরি করেছে। এই মুদ্রাগুলো হচ্ছে : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডলার, যুক্তরাজ্যের পাউন্ড স্টারলিং, কানাডিয়ান ডলার, মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ভারতের রুপি, চিনের ইউয়ান, জাপানের ইয়েন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরো, কোরিয়ান ইয়েন ও শ্রীলঙ্কার ডলার। এসব দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হচ্ছে। এ কারণে এ মুদ্রাগুলোর সঙ্গে তুলনায় করে প্রকৃত বিনিময় হার বের করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বাজারে এখন প্রতি ডলার ওভার ড্রাফট আকারে (রফতানি বিল) বিক্রি হচ্ছে ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ৮৩ টাকা ৮৫ পয়সা দরে। নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা ৫০ থেকে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা দরে। গ্রাহকদের কাছে বা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে ডলারের এই দামেরই সরাসরি ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে এই দর নির্ধারিত হয়। একে বলা হয় নমিনাল এক্সচেঞ্জ রেট বা নিয়ার। এর বাইরে অর্থনীতিকে সঠিক ধারায় পরিচালিত করতে বিভিন্ন দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় সমতা অর্জনে অর্থনীতির মূল তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ডলারের বিপরীতে টাকার আরো এক ধরনের বিনিময় হার প্রণয়ন করা হয়। একে বলা হয় ডলারের প্রকৃত মূল্য বা রিয়াল এক্সচেঞ্জ রেট বা রিয়ার। এ হিসাব নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক তৈরি করে বিভিন্ন গবেষণার কাজে ব্যবহার করে। কিন্তু বাজারে এর সরাসরি কোনো প্রয়োগ নেই। যে কারণে গ্রাহকদের মধ্যে এই বিনিময় হারের কোনো প্রভাব নেই, তবে অর্থনীতিকে পরিচালিত করতে এর গুরুত্বপূর্র্ণ ভূমিকা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে বিশেষ করে রফতানি আয়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স, বৈদেশিক বিনিয়োগ, আমদানি ব্যয়, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়, মূল্যস্ফীতির হার এসব সূচকের কোনো এক পর্যায়ে সমন্বয়হীনতার কারণে এই খাতে ব্যবধান অস্বাভাবিক রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টাকার বিপরীতে ডলারের প্রকৃত মূল্য ছিল ১০০ টাকা ৭৮ পয়সা। অথচ বাজার মূল্য ছিল ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা। দুই মূল্যের ব্যবধান হচ্ছে ১৭ টাকা ৩ পয়সা। গত জুনে প্রকৃত মূল্যছিল ১০০ টাকা ৬৫ পয়সা, বাজার দর ছিল ৮৩ টাকা ৭০ পয়সা। ব্যবধান ছিল ১৬ টাকা ৯৫ পয়সা। অথচ এই ব্যবধান সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৭ টাকা হওয়ার কথা নয়।
সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা এর সঠিক কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের মতে, অর্থনীতির সূচকগুলোতে কোথাও বড় ধরনের সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছেন। যে কারণে ডলারের সাথে টাকার বিনিময় হারে এর প্রভাব পড়েছে। এ কারণে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের সমতার বিষয়টি নিপুণভাবে শনাক্ত করার প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement