২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সড়কে পরিবহন শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে

-

রাস্তায় চালকদের দৌরাত্ম্য কমছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আরো বেড়েছে। প্রায়ই তারা পিষে মেরে ফেলছে মানুষ। এখন যাত্রীদের মারধর করতেও তারা ছাড়ছে না। তাদের হাতে প্রায়ই নাজেহাল হচ্ছেন সাধারণ পথচারী। অভিযোগ উঠেছে কিছু পরিবহন নেতার ইন্ধনে শ্রমিকেরা আরো বেসামাল হয়ে উঠেছেন। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে যে আইন হয়েছে তার প্রতি বৃদ্ধাঙুল দেখিয়ে তারা রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছে।
গতকালও নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। তাদের হাতে হাতে শোভা পেয়েছে সচেতনতামূলক পোস্টার-প্ল্যাকার্ড। কিন্তু থেমে নেই মৃত্যু। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নিহত হচ্ছে মানুষ। গতকাল সোমবার ভোর রাতে চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলার গোগরা এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে পিতা-পুত্রসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন অটোচালকসহ আরো দু’জন।
রোববার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পিকআপের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয় একটি শিশু। মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে চাকায় পিষ্ট হয়ে ওই শিশুটি মারা যায়।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর সাংবাদিকদের বলেন, মা নাজমা বেগম শিশু নাবিলকে কোলে নিয়ে রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন, তখন একটি পিকআপ পেছন থেকে রিকশাটিকে ধাক্কা দিলে তারা রাস্তায় পড়ে যায়। তখন পিকআপের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে শিশুটি মারা যায়।
মাকে চিকিৎসা করাতে ঢাকায় এসে দুই বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে সেলিম মিয়া (২২) এবং জুয়েল হাওলাদার (৩০) নামে দুই যুবক নিহত হন। গতকাল সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়ে এই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১টার দিকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে ট্রান্সসিলভা পরিবহনের দু’টি বাস যাত্রী তোলা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করে। এ সময় বাস থেকে নেমে রাস্তা পার হওয়ার আগেই সেলিম ও জুয়েল দুই বাসের মধ্যে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে তারা মারা যান।
সেলিম তার মা মনোয়ারা বেগমকে ঢাকায় নিয়ে আসছিলেন ডাক্তার দেখানোর জন্য। সেলিম মাদারীপুর শিবচর উপজেলার আলেপুর গ্রামের ফয়েজুল হকের ছেলে।
গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ সড়ক চাই দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকেরাও অংশ নেন। রাজধানীর মানিকনগর মডেল স্কুলের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেয়া এক অভিভাবক সারোয়ার আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় চালকেরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। এরপর সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে আইন হয়েছে। কিন্তু এই আইন হওয়ার পরে চালকেরা যেন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, রাস্তায় দাঁড়ালে দেখা যায় চালকেরা কতটাই বেপরোয়া। এক বাস আরেক বাসের সাথে যে পাল্লা দেয় তা দেখলেই শরীর শিউরে ওঠে। এভাবে পাল্লা দিতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পুলিশের সামনেই এই গাড়িগুলো একটির সাথে আরেকটি পাল্লা দিচ্ছে। কিন্তু পুলিশ ওইসব গাড়ির বিরুদ্ধে কোনোই ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
গতকাল রাজধানীর মৎস্যভবন এলাকায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায় গাড়িগুলোর গতি খুবই বেপরোয়া। বিশেষ করে কিছু কিছু কোম্পানির বাস রয়েছে যারা কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করে না। এমনকি ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশও অমান্য করতে দেখা যায়।
ভুক্তভোগীরা বলেছেন, এখন পরিবহন শ্রমিকেরা এতটাই বেপরোয়া যে যাত্রীদের গায়ে হাত তুলতেও তারা তোয়াক্কা করে না। দু’দিন আগে রাজধানীর পল্টনে এক সিনিয়র সাংবাদিককে তার স্ত্রী সন্তানের সামনে নাজেহাল করে বাসের চালক ও কন্ডাক্টর। ওই সাংবাদিক ও তার স্ত্রী সন্তানদের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নামানোর কথা ছিল। কিন্তু তাদের না নামিয়ে চালক বাসটি চালিয়ে পল্টন মোড়ে চলে যায়। এ সময় ওই সাংবাদিক প্রতিবাদ করলে বাসশ্রমিকেরা তাকে নাজেহাল করে।
ভুক্তভোগীরা বলেছেন, পরিবহন শ্রমিকেরা এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি বেপরোয়া। আর শ্রমিকদেরকে চাঙ্গা করতে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন সারা দেশে তাদের কর্মসূচি পালন করছে। বিশেষ করে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে যে আইনটি পাস হয়েছে তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের মাঠে নামানোর জন্য তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা হচ্ছে। এর আগে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে। ২৭ অক্টোবরের মধ্যে ওই দাবি বাস্তবায়ন না হলে ২৮ ও ২৯ অক্টোবর সারা দেশে পরিবহন শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান বলেছেন, সরকার চায় না গণপরিবহন জনবান্ধব হোক। তিনি বলেন, যে আইন হয়েছে তা দিয়ে সড়কে নিরাপত্তা প্রদান সম্ভব নয়।


আরো সংবাদ



premium cement