২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিমানবন্দরে আট মাসে ৩৯৪ যাত্রী অফলোড

আকাশপথে ‘মানবপাচার’ অব্যাহত ; টাস্কফোর্সের নীরবতার অভিযোগ
-

হজরত শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘিরে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা দীর্ঘ দিন ধরে সক্রিয় থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এই সুযোগে নামসর্বস্ব সাইনবোর্ডধারী ট্রাভেল ও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক সেজে দেদারসে আকাশপথে ‘মানবপাচার’ চালিয়ে যাচ্ছে বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এসব অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গঠিত টাস্কফোর্স এবং বিমানবন্দরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে যাদের ভূমকা বেশি রয়েছে, তাদের ‘নীরবতার’ সুযোগে মানবপাচার চক্রের সদস্যরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ হেল্প ডেস্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের আট মাসে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানোর আগে ৩৯৪ যাত্রীর যাত্রা (অফলোড) স্থগিত করা হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই মালয়েশিয়া, দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, ও ফিজিসহ বিভিন্ন দেশে মানবপাচারের পরিণতি ভোগ করতে যাচ্ছিলেন। তবে এসব অসহায় মানুষগুলোকে কারা পাচার করছিল, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জড়িতদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনার প্রয়োজন মনে করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা গ্রামের অসহায় মানুষগুলোর কাছ থেকে নানা কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক মো: তানভীর হোসেন গত সপ্তাহে নয়া দিগন্তকে জানান, চলতি বছরের মার্চ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৩৯৪ যাত্রীকে বিদেশ যাওয়ার আগেই বিমানবন্দরে অফলোড করা হয়। এদের মধ্যে মার্চ মাসে ৬৯ জন, এপ্রিলে ৭১, মে-তে ৪৫, জুনে ২৮, জুলাইয়ে ৫৭, আগস্টে ৪৪, সেপ্টেম্বরে ৫৩ এবং অক্টোবর মাসে ২৭ জন। কোন কোন দেশে এসব যাত্রীরা পাড়ি জমাচ্ছিলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেনÑ কাতার, সৌদি আরব, ফিজি, ওমান, মালদ্বীপ, ব্রুনাই, দুবাই এবং মালয়েশিয়া। বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা জানান, পাসপোর্টে যেসব দেশের দূতাবাসের সত্যায়ন থাকে না ওইসব যাত্রীকেই মূলত এয়ারপোর্ট দিয়ে পাঠানোর অভিযোগ বেশি। ওই কর্মকর্তার মতে, যাদের কাছে স্মার্ট কার্ড পাওয়া যায় না, তাদের পাসপোর্ট জব্দ করে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন পরিচালকের দফতরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব পাসপোর্ট কালোতালিকাভুক্ত করা হলেও জনশক্তি ব্যুরো থেকে চক্রের সদস্যরা আবারো নানা কৌশলে সেগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে আবারো ফ্লাইটে তুলে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে জনশক্তি ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বিমানবন্দর থেকে যে পাসপোর্ট অফলোড করে এখানে পাঠানো হচ্ছে সেগুলো কালোতালিকায় থাকে। এসব পাসপোর্ট আর ব্যবহারের সুযোগ থাকে না।
বিমানবন্দর এলাকায় খোঁজ নিতে গেলে জানা যায়, মানবপাচারচক্রের সদস্যরা প্রতিদিন ইমিগ্রেশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘ম্যানেজ’ করে বিভিন্ন দেশের ফ্লাইটে তুলে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু যেদিন বিমানবন্দরে ‘রেড এলার্ট’ থাকে, সেদিন চক্রের সদস্যরা তাদের মক্কেলদের না পাঠিয়ে বিমানবন্দরের আশপাশের কোনো হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করে থাকে। পরের কোনো ফ্লাইটে গ্রিন সিগন্যাল পেলেই সুযোগ বুঝে ফ্লাইটে তুলে দেয়া হয়।
আশকোনা হজ ক্যাম্পের পশ্চিম পাশের একটি হোটেলে অবস্থান নেয়া রাজবাড়ি এলাকার বাসিন্দা দুবাইগামী এক ব্যক্তির সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপ হয়। তিনি জানান, ‘আজ রাতেই আমার দুবাই যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। পাসপোর্টে ট্যুরিস্ট ভিসা লাগানো আছে। তবে আমাকে যে দালাল পাঠাচ্ছে সে বলেছে, আজ ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ৫০০ টাকা দিয়ে রাত কাটাতে এ হোটেলে এসেছি। আপনি কি জানেন? অবৈধপথে বিদেশ যাওয়া মানে মানবপাচারের শিকার হচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু বলেন, দুবাইতে আমার একজন ভাই আছে। সে বলেছে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে শুধু তুই চইল্যা আয়। বাকিটা আমি দেখছি। শুধু দুবাই নয়; একই প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন কোনো না কোনো ফ্লাইটে অবৈধপথে (ট্যুরিস্ট ভিজিট) মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে মানবপাচারের শিকার হচ্ছেন গ্রামের অসহায় মানুষগুলো। অথচ এসব ঠেকাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রণালয়ের গঠিত টাস্কফোর্সের বেশি খোঁজ নেয়ার কথা। কিন্তু তাদের নীরবতার সুযোগে এই চক্রের সদস্যরা আরো বেশি বেপোরোয়া হয়ে ওঠেছে। এভাবে দেশ থেকে মানবপাচার অব্যাহত থাকায় বৈধপথে জনশক্তি প্রেরণের হার কমে আসছে।
গতকাল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির একজন নেতা নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা যতটুকু খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা আমাদের বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে ‘বিমানবন্দর কন্ট্রাক্ট’ করে অবৈধভাবে লোক পাঠানোর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে শ্রমবাজারের ক্ষতি হচ্ছে। তবে এসবের সাথে কারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তিনি আরো বলেন, যারা দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে অবৈধপথে বিদেশ যাচ্ছেন, তাদের বিদেশ যাওয়ার পর থাকতে হচ্ছে অবৈধভাবে। অন্য দিকে, প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে তাদের যে সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, সেটি থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। যারা না বুঝে এ পথে পা বাড়াচ্ছেন, তাদের জেনে-বুঝে বিদেশ যাওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement
বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭ উপজেলা নির্বাচনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি বাগাতিপাড়ায় ইসতিসকার নামাজ পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন : বাকৃবি অধ্যাপক বৃষ্টির জন্য হাকাকার, সাভারে ইসতিসকার নামাজ আদায় বরিশালে সালাতুল ইসতিসকার আদায় অর্ধ শতাব্দীতে ভ্যাকসিন সাড়ে ১৫ কোটি লোকের জীবন বাঁচিয়েছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আল্লাহর রহমত কামনায় সকলকে সিজদাহ অবনত হতে হবে-মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন কাউখালীতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা ভাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

সকল