২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

আ’লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী নাসিম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায় বিএনপি

সিরাজগঞ্জ-১ আসন
-

সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর) ‘কাজিপুরের মাটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি’Ñ এটি সর্বজনস্বীকৃত কথা বলেই জানেন সিরাজগঞ্জের বেশির ভাগ মানুষ। কেননা ১৯৯১ সাল থেকে অদ্যাবধি এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ আসনের এমপি। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপরীতে যারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তারা অনেক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। এর বড় কারণÑ বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলীর প্রভাব দারুণভাবে কাজ করে নির্বাচনের সময়। শহীদ এম মনসুর আলীর বিপুল জনপ্রিয়তায় এ আসনটি মনসুর তনয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপির একক আসন হিসেবেই পরিচিত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক আর না-ই আসুক কাজিপুরের সংসদীয় সিট মোহাম্মদ নাসিমেরÑ এমনটিই জানালেন নাসিম ভক্তরা।
বরাবরের মতো আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত বলে বেশির ভাগ মানুষের ধারণা। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা নির্বাচন কিংবা মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ভেতরে ভেতরে এখানে অন্তর্দ্বন্দ্ব কাজ করছে। তবে কেবিনেট মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কারণে দলীয় কোন্দল দৃশ্যমান হচ্ছে না। অপ্রকাশ্য অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকলেও আগামী সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিমের বিপরীতে আওয়ামী লীগের কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশী নেই। তবে কোনো কারণে যদি তিনি জেলার অন্য কোনো আসন থেকে প্রার্থী হন তবে তার ছেলে সাবেক এমপি প্রকৌশলী তানভির শাকিল জয় এ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন বলেই জানান দলীয় নেতাকর্মীরা।
অন্য দিকে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলী পরিবারের বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে বিগত দিনে এ আসনে শক্ত রাজনৈতিক ভিত তৈরি করতে পারেনি বিএনপি। তবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকলে কাজিপুরে দলীয় ভিত শক্ত করা অসম্ভব নয় বলে মনে করেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। সরকারি দলের দমন-পীড়নের কারণে বর্তমানে কাজিপুরে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির পক্ষে জনমত একেবারে কম নয়। এ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা, সিরাজগঞ্জ শহর বিএনপির সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা ও জেলা বিএনপি নেতা মকবুল হোসেন চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায় এখানকার বিএনপি।
কাজিপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং সিরাজগঞ্জ সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসন গঠিত। এ আসনের বর্তমান ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৪৮ হাজার ১৬৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা এক লাখ ৭৩ হাজার ২০১ এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা এক লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৫। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ সালে প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিম প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ৬২ হাজার ৩৮৩ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ নাসিম আবার বিজয়ী হন। সে সময় মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর) ও সিরাজগঞ্জ-২ (সদর)সহ দু’টি আসন থেকে নির্বাচিত হওয়ায় সদর আসন রেখে কাজিপুর আসন ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিমের বড় ভাই ড. মোহাম্মদ সেলিম এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করে এক লাখ এক হাজার ৯৮১ ভোট পেয়ে আবার নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে মোহাম্মদ নাসিম ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। এ সময় মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৯১ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের পাঁচটিতে বিএনপি জয়লাভ করে। সেই সময় সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর) আসনে জয়ী হন মোহাম্মদ নাসিম। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। সে সময় কাজিপুর আসনের এমপি নির্বাচিত হয়ে মোহাম্মদ নাসিম ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়ে কাজিপুরে ব্যাপক উন্নয়নকাজ করেন। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীতে বহু লোকের চাকরির ব্যবস্থা করেন। এরপর ২০০৯ সালের পর টানা দু’বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা ও মন্ত্রী হওয়ায় এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা বিল্ডিংসহ অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন করেছেন। এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। এলাকায় টেলিফোনসহ আইসিটি খাতের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এরই মধ্যে তার নির্বাচনী আসনের বাগবাটিতে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। কাজিপুর আসনের সীমান্ত বাজারে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি গত বছরের ৭ নভেম্বরে উদ্বোধন করেছেন। কাজিপুরের সোনামুখিতে স্টেডিয়াম, মেঘাইতে পর্যটন কেন্দ্র, বেড়িপোটলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রতনকান্দিতে নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ অনেক নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। নদীভাঙনের কবল থেকে কাজিপুরকে রক্ষার জন্য মেঘাই থেকে ঢেকুরিয়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করেছেন এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাহুকা থেকে কাজিপুরের খুদবান্ধি পর্যন্ত যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ ও নদী খনন কাজের জন্য সাড়ে চার শ’ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। গত কয়েক বছরে সিরাজগঞ্জ টু কাজিপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি ব্রিজ নির্মাণ করেন তিনি। সিরাজগঞ্জ সদরের শিয়ালকোলে ৫০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালসহ শহীদ এম মনসুর আলী সরকারি মেডিক্যাল কলেজের নির্মাণকাজ চলছে।
এ ছাড়া কাজিপুরের মানুষ যেকোনো ধরনের আপদ-বিপদে, ব্যবসায়, চাকরি, চিকিৎসাসহ সব ধরনের কাজে নাসিম পরিবারের সহযোগিতা পেয়ে থাকেন বলে জানান স্থানীয়রা। এলাকার মানুষের খোঁজখবর, উন্নয়নকাজের তদারকি ও দলীয় সভা-সমাবেশে অংশ নিতে তিনি প্রায় প্রতি সপ্তাহে সিরাজগঞ্জে আসেন। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নামাজে জানাজা, বিয়েশাদি, ঈদ, পূজা, বিভিন্ন দিবস উদযাপনসহ সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে তিনি যোগ দিয়ে মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে সচেতন। এতে মোহাম্মদ নাসিমের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে বেড়েছে। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি অনায়াসে বিজয়ী হবেন বলে তার অনুসারীরা জানান।
অন্য দিকে বিভিন্ন কারণে বিগত দিনে এ আসনে স্থায়ী ও শক্ত রাজনৈতিক ভিত তৈরি করতে পারেনি বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই কাজিপুর পৌরসভাসহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। কাজিপুর উপজেলা বিএনপি সভাপতি সেলিম রেজা জানান, পাবলিক ভোট দিতে পারলে এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও চালিতাডাঙ্গা আফজাল হোসেন মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সেলিম রেজা। কাজিপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আফজাল হোসেন সরকারের ছেলে সেলিম রেজা বিএনপির দুর্দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কাজিপুরের মতো জায়গায় হামলা-মামলা ও নির্যাতন সহ্য করে বিএনপির রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে সদা সচেষ্ট ভূমিকা রাখায় সেলিম রেজা এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাবেন বলে এখানকার বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। বসন্তের কোকিলের মতো অন্য কাউকে মনোনয়ন না দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। অন্য দিকে সিরাজগঞ্জ শহর বিএনপির সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা কাজিপুর আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপির বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে, হামলা-মামলা, নির্যাতনের মুখোমুখি হয়ে দলকে যারা এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তিনি তাদের অন্যতম। এ কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাজমুল হাসান তালুকদার রানা কাজীপুর আসনে বিএনপি হাইকমান্ডের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া জেলা বিএনপি নেতা মকবুল হোসেন চৌধুরীও বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল