২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডা: জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে জিডির তদন্তে ডিবি

-

মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। সময় টিভির এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধানকে নিয়ে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মন্তব্যকে ‘অসত্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল’ আখ্যায়িত করে থানায় জিডি করেছেন সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা। জিডি নম্বর ৪৯৮। ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন হাওলাদার জানান, সেনাসদরে দায়িত্বরত মেজর এম রকিবুল আলম গত শুক্রবার থানায় এসে ডা: জাফরুল্লাহের বিরুদ্ধে জিডি করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি মো: মাসুদুর রহমান জানান, ডা: জাফরুল্লাহের বিরুদ্ধে জিডি হয়েছে। আদালত ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (দক্ষিণ) বিষয়টি তদন্ত করছে।
২০ আগস্ট রাতে সময় টিভির আলোচনা অনুষ্ঠান সম্পাদকীয়তে জাফরুল্লাহ চৌধুরী দাবি করেন, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ যখন ‘চট্টগ্রামের জিওসি’ ছিলেন, সেখান থেকে ‘সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ চুরি’ যাওয়ার ঘটনায় তার কোর্ট মার্শাল হয়েছিল।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ের আগের রাতে হঠাৎ করে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সেনাপ্রধান সম্পর্কে প্রদত্ত বক্তব্যটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বিদ্বেষপ্রসূত ও ষড়যন্ত্র মূলক, যা সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি তথা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি কেন, কী উদ্দেশ্যে এবং কাদের প্ররোচনায় এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক, বানোয়াট ও অসত্য বক্তব্য টকশোতে বলেছেন, তা তদন্তের দাবি রাখে।
টেলিভিশনে দেয়া জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘অসত্য’ বলে আখ্যায়িত করে শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে দেয়া বক্তব্যে বলা হয়, ডা: জাফরুল্লাহ দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য কেবল সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল আজিজ আহমেদের সুনাম ও সামাজিক অবস্থানকে ক্ষুণœœ করেনি, বরং তা সেনাবাহিনীর প্রধানের পদকে চরম ভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছে।
টেলিভিশন চ্যানেলে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে দুঃখ প্রকাশ করেন গণস্বাস্থ্য ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জেনারেল আজিজকে অসাবধানতাবশত কোনো মনকষ্ট দিয়ে থাকলে সে জন্য আমি পুনরায় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। উল্লেখ্য, আমি এরই মধ্যে বিগত দুই দিন কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে আমার বক্তব্যে ভুল শব্দ চয়ন ও শব্দ বিভ্রাটের বিষয়টি প্রকাশ করে সেনাপ্রধানের নিকট দুঃখ প্রকাশ করেছি। ভুল বোঝাবুঝির অবসানকল্পে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, সময় টেলিভিশনের বিশেষ অনুরোধে শারীরিক দুর্বলতা নিয়েই আমি ৯ অক্টোবর রাত ১০টায় তাদের একটি টকশোতে অংশ নিই। ওই টকশোতে অন্য অতিথিরা ছিলেন সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহউল আলম লেনিন। আলোচনাকালে আমি দেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করে ছিলাম। জেনারেল আজিজ একজন দক্ষ আর্টিলারি সেনা কর্মকর্তা। তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ‘জিওসি’ ছিলেন না, ‘কমান্ড্যান্ট’ও ছিলেন না। তিনি তার কর্মজীবনের এক সময়ে চট্টগ্রাম সেনাছাউনিতে আর্টিলারি প্রশিক্ষক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ‘কোর্ট মার্শাল’ হয়নি, একবার ‘কোর্ট অব এনকোয়ারি’ হয়েছিল। ভুল বক্তব্য ও শব্দ বিভ্রাটের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও মর্মাহত।
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য নিয়ে আইএসপিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য ছিল একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য। কারণ, বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরি জীবনে কখনোই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত কুমিল্লার ৩৩ আর্টিলারি ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, ২০১১ সালের জুন থেকে ২০১২ সালের মে পর্যন্ত ঢাকার মিরপুরে ৬ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার এবং ২০১২ সালের মে থেকে ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণিত সময়ে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লায় সেনানিবাসে কোনো সমরাস্ত্র বা গোলাবরুদ চুরি বা হারানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তার দীর্ঘ, বর্ণাঢ্য সামরিক চাকরি জীবনে কখনোই কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হননি।
আইএসপিআরের পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল আলমগীর কবিরের স্বাক্ষরিত বক্তব্যে বলা হয়, চাকরিরত একজন সেনাবাহিনী প্রধান সম্পর্কে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির এ রূপ দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা সেনাবাহিনী প্রধানসহ সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে জনসমক্ষে হেয় করার হীন অপচেষ্টা মর্মে স্পষ্টত প্রতীয়মান।


আরো সংবাদ



premium cement