২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হাইওয়ে পুলিশের নজরদারি নেই ৯ হাজার কিমি মহাসড়কে

পুলিশের জনবল যানবাহন ও নিরাপত্তা সামগ্রীর সঙ্কট; বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা ও অপরাধ
-

সারা দেশে মহাসড়কের আয়তন হলো প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার। কিন্তু জনবল, সরঞ্জাম ও যানবাহন সঙ্কটের কারণে হাইওয়ে পুলিশ বর্তমানে নিয়মিত নজরদারি করছে ১২ হাজার কিলোমিটার মহাসড়কে। সেখানেও পুরোপুরি নজরদারি করার মতো পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও যানবাহন নেই। ৩৫টি হাইওয়ে পুলিশ স্টেশন ও ৩৭টি চৌকির মাধ্যমে এই বিশাল সড়কপথ নজরদারিতে রাখতে পুলিশ বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে। তাই তারা বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ও নিরাপত্তাসামগ্রী চেয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবনা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশের ৭২টি আউটপোস্ট রয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের ৯ বিভাগের ৩৭ জেলার ৫০টি আউটপোস্টের অবস্থা অত্যন্ত জরাজীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী। বর্তমানে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে সড়ক দুর্ঘটনা ও অপরাধ ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুলিশের বিদ্যমান থানার জনবল ও সহায়ক সুবিধা (লজিস্টিক সাপোর্ট) দিয়ে হাইওয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই ৫০টি হাইওয়ে আউটপোস্ট নির্মাণের জন্য ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করা হয়। তিন বছরের প্রকল্পটি এখনো চলমান।
পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও যানবাহনের চাহিদাসহ ২২২ কোটি ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, হাইওয়ে পুলিশ ইউনিটের ৩৫টি হাইওয়ে স্টেশন এবং ৩৭টি চৌকি দেশের প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে ১২ হাজার কিলোমিটার সড়ক মনিটর করে থাকে। অপর্যাপ্ত জনবল, যানবাহন ও যন্ত্রপাতি দিয়েই হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে আসছে। রেকার সঙ্কটের কারণে নষ্ট গাড়ি দ্রুত হাইওয়ে থেকে সরানো যায় না। একটি নষ্ট গাড়ি সরাতে এক থেকে দু’ঘণ্টা এবং একটি মালবাহী গাড়ি সরাতে লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে হাইওয়ের উভয় পাশে শত শত যানবাহনের দীর্ঘ লাইনে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া হাইওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসাসেবা প্রদানে হাইওয়ে পুলিশের কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই । পাশাপাশি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে অত্যধিক গতিসম্পন্ন ও ওভারটেক করা যানবাহন শনাক্ত করার কোনো আধুনিক প্রযুক্তিও নেই। যার কারণে দুর্ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। প্রতিটি হাইওয়ে থানার জন্য আছে মাত্র একটি গাড়ি। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে এক টহল দিতেই দু-তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এর মধ্যে কোনো দুর্ঘটনা বা নাশকতা ঘটলে তা সহজেই হাইওয়ে পুলিশের নজরে আসে না। এ ক্ষেত্রে ক্লোজ সার্কিট টিভি ক্যামেরা বা সিসিটিভি দরকার।
পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি দেশের মূল বাণিজ্যিক রুট। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানির প্রায় ৯০ শতাংশ পণ্য এই মহাসড়ক দিয়েই পরিবহন করা হয়। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে এই মহাসড়কে প্রতিদিন যানবাহন চলাচলের সংখ্যা দাঁড়বে ৩৫ হাজারে। আর ২০৩০ সালে এই সংখ্যা ৬৬ হাজারে পৌঁছাবে। এ ক্ষেত্রে সিসিটিভি ছাড়া নজরদারি করা কষ্টকর হয়ে পড়বে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে চাওয়া হয়েছে, গাড়ি স্ক্যানার পাঁচটি, রেকার ২০টি, অ্যাম্বুলেন্স ১০টি, গাড়ি স্টপার ১২২টি, এলকোহল ডিটেক্টর ১২২টি, লেজারসহ স্পিড গান ১২২টি, ওয়েটব্রিজ আটটি, পোর্টেবল অটো কেস জেনারেটর ৭২টি, সার্চ লাইট ১৪৪টি, সিসিটিভি এক হাজার ৪২৭টি এবং একটি ডাটা সেন্টার। একটি সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার ও পাঁচটি মনিটরিং সেন্টারও এই প্রকেল্পর আওতায় স্থাপন করা হবে। কনস্টেবলদের মধ্যে থেকে প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স দিয়ে ড্রাইভার নিয়োগ দেয়া হবে।
পরিকল্পনা কমিশন ব্যয় কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়ে বলেছে, যেহেতু বিদেশ থেকে কোনো যন্ত্রপাতি আমদানি করা হবে না, তাই সিডি ভ্যাট বাবদ ৩৮ কোটি ৫১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা বাদ দিতে হবে। হাইওয়ে পুলিশ কার্যক্রমের সাথে যেসব সংস্থা সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইত্যাদি সংস্থাকে নিয়ে যৌথভাবে কর্মশালা করা উচিত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ব্যাপারে। কমিশন থেকে বলা হয়েছে, মহাসড়কে সিসিটিভি স্থাপনের জন্য পোল বসানো এবং সেগুলো কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা দ্রুত মেরামতের জন্য সওজ ও বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে একটা সমঝোতা স্মরক সই করার ব্যবস্থা নেয়া উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement