২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

২১ আগস্ট মামলার রায় নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে : রিজভী

নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন :নয়া দিগন্ত -

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক কার্যক্রম সরকারের ‘গাইডলাইনে’ হচ্ছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিএনপি। গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই সংশয় প্রকাশ করে বলেন, আজ জনগণের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ২১ আগস্টের বোমা হামলার আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে। আদালত দিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণের রমরমা রাজনৈতিক সফলতায় ক্ষমতাসীনেরা উল্লসিত। এই সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী ২১ আগস্ট মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে কি না তা নিয়ে জনগণের মনে বড় ধরনের সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ জেনেও সরকার তার চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা করছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা মো: তাইফুল ইসলাম টিপু, মো: মুনির হোসেন ও অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের জড়ানোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, ১/১১’র সরকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম তদন্ত করে পেলো না। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে নজিরবিহীনভাবে তারেক রহমানকে ফাঁসানো জন্য নিজেদের দলের মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিকে যিনি কয়েক বছর আগে অবসরে গেছেন তাকে ডেকে নিয়ে এসে পদোন্নতি পর পদোন্নতি দিয়ে তারেক রহমানের নাম সম্পূরক অভিযোগপত্রে যুক্ত করেছে।
বেগম খালেদা জিয়া গুরুত্বর অসুস্থ জানিয়ে তিনি বলেন, গত শুক্রবার কারাগারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার আত্মীয়স্বজনেরা দেখা করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া এখনো গুরুতর অসুস্থ। তার হাত, পা-এর ব্যথা আরো তীব্র হয়েছে। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতাকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দিতেই দেশনেত্রীকে ইচ্ছাকৃতভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। অসুস্থতা লাঘবের জন্য বেগম জিয়ার আস্থার হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের উপেক্ষা করা হচ্ছে।
রিজভী বলেন, প্রস্থেসিস কমপেটিবল এমআরআই মেশিন ইউনাইটেড হাসপাতাল অথবা অন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে রয়েছে। কিন্তু এটি বিএসএমএমইউতে নেই। এমনকি বিএসএমএমইউতে ভর্তিকৃত অনেক রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বাইরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে করা হয় এবং বেলা ২টার পর বিএসএমএমইউতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া দুষ্কর ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বন্ধ থাকে। সুতরাং বেগম খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালের দাবি কি অনায্য? এমনকি সরকারি মেডিক্যাল বোর্ডও বিএসএমএমইউসহ যেকোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেছে। বিএসএসএমএমইউ যদি এতই বিশেষায়িত ও ইকুইপড হতো তাহলে রাষ্ট্রপতি বারবার চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাচ্ছেন কেন? ক’দিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বিদেশ থেকে চিকিৎসা করে এলেন কেন? তারা কেন বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিলেন না?
তিনি বলেন, বেগম জিয়ার ওপর জুলুম ও অত্যাচারে সরকার রীতিমতো উৎফুল্ল বোধ করছে। সরকার প্রধানের একধরনের অহংবোধ চরিতার্থ করতে বেগম জিয়ার চিকিৎসায় বাধা দেয়া হচ্ছে। মানুষ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সরকারের টালবাহানায় অসুস্থ বেগম জিয়া চিকিৎসা না পাওয়ায় দেশবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এক বিষাদময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে রিজভী বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি তো দেশে বসেই সৎ সাহসের সঙ্গে কাজ করছিলেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতির কাছে তো বন্দুক নেই। রাষ্ট্রের বন্দুকধারীরা যদি তার দিকে বন্দুক তাক করে দেশের বাইরে যেতে বাধ্য করে তখন তিনি কী করবেন? তখন তিনি বিদেশে গিয়ে লিখবেন নাকি গণভবনে সবুজ লনে বসে লিখবেন? আওয়ামী লীগ সরকারের লোকেরা একজন নিরস্ত্র প্রধান বিচারপতিকে সন্ত্রাসী কায়দায় বন্দুকের নলের মুখে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়। এটা কোনো বীরের কাজ নয়, এটি কাপুরুষের কাজ। সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে বিচার বিভাগ একটি স্বাধীন সংস্থা। অথচ বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী-উপদেষ্টারা কথা বলার নামে এমন আচরণ করেছেন যেন তারা প্রধান বিচারপতিকে রিমান্ডে নিয়েছেন। এস কে সিনহা সত্য কথা লিখাতে অন্তর্জ্বালা হচ্ছে আপনাদের।
তিনি আরো বলেন, আদালত দিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণের রমরমা রাজনৈতিক সফলতায় ক্ষমতাসীনেরা উল্লসিত। এই অবৈধ সরকার আইন, বিচার সবকিছু কুক্ষিগত করে দেশকে ‘মগের মুল্লুক’-এ পরিণত করেছে। সরকারের সব ধরনের বক্তব্য, বিবৃতি ও প্রচারকেই জনগণ বাকোয়াস বলে মনে করে। তাদের উন্নয়নের ফানুস ফেটে গেছে। গণতন্ত্রকে বন্দী করে, বিরোধী দলের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত দমনের পথ বেছে নিয়ে, মামলা-হামলা-গ্রেফতার করে সরকার বিরোধী দলের নেতাদের ঘুম কেড়ে নিতে চাচ্ছে। তবে আমি আবারো প্রত্যয়দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাইÑ সরকারের এই সমস্ত অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সম্মিলিত কণ্ঠস্বরে সরকার ও সরকারপ্রধান কতটুকু শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন তা দেখার জন্য জনগণ অপেক্ষা করছে।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা যুবদল নেতা শাহিন আহমেদকে গ্রেফতার এবং জেলা ছাত্রদল সভাপতি মশিউর রনিকে নতুন করে আরো একটি বানোয়াট মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের মুক্তি দাবি করেন রিজভী।

 


আরো সংবাদ



premium cement