২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর করলে সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে : বিএফইউজে-ডিইউজে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কালো ধারা বাতিলের দাবিতে বিএফইউজে-ডিইউজের অবস্থান কর্মসূচি :নয়া দিগন্ত -

ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতেই সরকার সংবিধান, গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম বিরোধী নতুন কালা-কানুন করছে অভিযোগ করে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, সাংবাদিক সমাজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কালো ধারা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছে। এ আইন আমরা মানব না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর করলে সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে। নেতৃবৃন্দ জাতীয় সংসদে এ কালাকানুন পাসের দিন ১৯ সেপ্টেম্বরকে ‘গণমাধ্যমের ঘৃণা দিবস’ হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কালো ধারা বাতিলের দাবিতে গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে সাংবাদিক নেতারা এ কথা বলেন। বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সহ-সভাপতি শাহীন হাসনাতের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বিএফইউজে মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজে সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম, বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল আমিন রোকন, সহ-সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, বিএফইউজের প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, ডিআরইউর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: ইলিয়াস হোসেন ও মোরসালিন নোমানী, ক্র্যাবের সভাপতি আবু সালেহ আকন, ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম, দফতর সম্পাদক শাহজাহান সাজু, ডিইউজে নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আলী আসফার, ডিইউজের বাসস ইউনিট প্রধান আবুল কালাম মানিক, নয়া দিগন্তের ভারপ্রাপ্ত ইউনিট প্রধান আমীর হামজা চৌধুরী, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরী প্রমুখ।
এ দিকে বিএফইউজে ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সারা দেশে সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, বগুড়া, কক্সবাজার, কুমিল্লা, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে সাংবাদিক ইউনিয়ন সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে রুহুল আমিন গাজী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে এ ধরনের কালো ধারা কোনো সভ্য সমাজে কার্যকর হতে পারে না। এ আইন গণমাধ্যম ও সংবিধান বিরোধী। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতেই সরকার এ আইন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সাংবাদিক সমাজ তা কখনোই বাস্তবায়ন হতে দিবে না। ১৯ সেপ্টেম্বরকে সাংবাদিক সমাজ ‘গণমাধ্যমের ঘৃণা দিবস’ হিসেবে পালন করবে। আসুন আমরা এই কালো আইনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। এ আইন বাতিলের জন্য আগামীকাল ২৪ সেপ্টেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে। যত দিন এ আইন বাতিল না করা হবে তত দিন আমাদের এ আন্দোলন চলবে। এ সময় তিনি এ আইনে স্বাক্ষর না করতে রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানান।
আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কালো ধারা বাতিলের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবেই এ আইন প্রতিহত করতে হবে। এই আইন প্রতিহত করতে না পারলে কেউ রক্ষা পাবে না।
এম আবদুল্লাহ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আমরা অনেক প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি। অবশেষে এটি অবৈধ সংসদে পাস করা হলো। সংসদে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে মিথ্যাচার করেছেন তা নিন্দনীয়। এই আইন শুধু সাংবাদিকদের নয়, দেশের সব মানুষের বাক স্বাধীনতাকে কেড়ে নিবে। সরকারের বিরুদ্ধে কেউ সমালোচনা করলে তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ আইন বাতিল না করা পর্যন্ত আমরা সাংবাদিকেরা ঘরে ফিরে যাব না। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের কালাকানুনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজ লড়াই করেছে। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের মাধ্যমে ওই কালাকানুন বাতিল হয়েছে। এ সরকারের বিদায়ের মধ্য দিয়েও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কালো ধারা বাতিল হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ এই আইনে স্বাক্ষর না করে ফিরিয়ে দিন এবং প্রধানমন্ত্রীকে এ আইন সংশোধন করতে বলুন।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে দেশের ১৬ কোটি মানুষ অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। সাংবাদিক সমাজ এ আইন ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছে। এ দানবীয় আইন বাতিল করুন। অন্যথায় মিডিয়ার দুশমন হিসেবে এ সরকার চিহ্নিত হবে।
শহিদুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদকে চিরস্থায়ী করতে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। এই কালো আইনে স্বাক্ষর না করার জন্য তিনি রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ দাবি আদায়ে আমরা রাজপথে আছি এবং থাকব। গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করেই আমরা ঘরে ফিরব।


আরো সংবাদ



premium cement