২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেলদুয়ারের আতিয়া মসজিদ ৪০০ বছরের নিদর্শন

অনন্য স্থাপত্য
-

৪০০ বছরের পুরনো দেশের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া জামে মসজিদ। মসজিদটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে জাতীয় প্রতœতত্ত্ব বিভাগ। ষোড়শ শতাব্দী থেকে শুরু করে এই মসজিদটিতে এখনো নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় চলছে। আরবি ‘আতা’ থেকে ‘আতিয়া শব্দটির উৎপত্তি, যার বুৎপত্তিগত অর্থ হলো ‘দান কৃত’। আলি শাহান শাহ্ বাবা আদম কাশ্মিরিকে (র:) সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ টাঙ্গাইল জেলার জায়গিরদার নিয়োগ দান করলে তিনি এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেন। সে সময় তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারের এবং আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য আফগান নিবাসী কররানী শাসক সোলাইমান কররানীর কাছ থেকে সংলগ্ন এলাকা দান বা ওয়াকফ্ হিসেবে লাভ করেন। এই এলাকাটি তাকে দান করায় এই অঞ্চলটির নাম হয়েছে ‘আতিয়া’।
পরবর্তী সময়ে আদম কাশ্মিরির পরামর্শক্রমে সাঈদ খান পন্নী নামক সুফিজির এক ভক্তকে মোগল স¤্রাট জাহাঙ্গীর আতিয়া পরগণার শাসন কর্তা হিসেবে নিয়োগ দান করেন। এই সাঈদ খান পন্নীই ১৬০৮ সালে আদম কাশ্মিরির কবরের কাছে আতিয়া মসজিদ নির্মাণ করেন।
মুহাম্মদ খাঁ নামক তৎকালীন এক প্রখ্যাত স্থপতি এই মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। রওশন খাতুন চৌধুরানী ১৮৩৭ সালে এবং আবুল আহমেদ খান গজনবী ও করটিয়ার জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নীসহ কয়েকজন মিলে ১৯০৯ সালে মসজিদটির সংস্কার করেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকার এই মসজিদটিকে প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে অধিগ্রহণ করেন।
দেলদুয়ার উপজেলা সদর থেকে মসজিদটির দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। চুন, সুড়কি নির্মিত মসজিদটির পূর্ব-উত্তর পাশে রয়েছে সুনিপুন দুর্লভ কারুকার্য। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট প্রস্থে ৩২ ফুট এবং উচ্চতা ৪৪ ফুট। একটি বড় আকৃতির গম্বুজসহ মোট ৪টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের দেয়াল ৮ থেকে সাড়ে ৮ ফুট প্রশস্থ।
লাল ইট দ্বারা নির্মিত এই মসজিদটি আকারে বেশ ছোট, মাত্র ১৮.২৯ মিটার (৫৯ ফুট) ১২.১৯ মিটার (৪০ ফুট) এবং দেয়ালের পুরুত্ব ২.২৩ মিটার (সাড়ে ৭ ফুট)। এর চারকোণে ৪টি অষ্টকোণাকৃতীর মিনার রয়েছে, যার ওপরের অংশটি ছোট গম্বুজের আকৃতি ধারণ করেছে।
সুলতানি ও মোগল এই দুই আমলেরই স্থাপত্যরীতির সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে এই মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে।
প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে ঐতিহ্যবাহী আতিয়া জামে মসজিদটি স্থান পেয়েছে উইকিপিডিয়ায়। এক সময় সরকার মসজিদটিকে দেশবাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর খোরশেদ আলম দায়িত্বে থাকাকালীন দশ টাকার নোটের মধ্যে আতিয়া মসজিদটির ছবি মুদ্রণ করেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তনে মসজিদটির ছবির পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর ছবি মুদ্রণ করা হয়।
মসজিদের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আহাম্মেদ জানান, ২০০১ সালের পর থেকে মসজিদটিতে কোনো চুনকাম করা হয়নি। বিভিন্ন অংশে শেওলা পড়ে কালো হয়ে গেছে। দেয়ালের ইট বালু খসে পড়ছে, মসজিদটির প্রধান গম্বুজের একটি অংশ ভেঙে পড়ায় বৃষ্টি হলে মসজিদে পানি পড়ে। বিশেষত বর্ষাকালে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়।
ইমাম আরো জানান, জাতীয় প্রতœতত্ত্ব বিভাগের ঢাকা বিভাগীয় প্রধান সরেজমিন পরিদর্শন করে মসজিদটির সংস্কারের ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে ছিলেন কিন্তু তার এই আশ্বাসের কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। সরকারের বিভিন্ন দফতরে স্থানীয় এমপি ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হলেও কার্যত তা-ও বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমান সময়ে জরুরিভিত্তিতে মসজিদটির সংস্কার প্রয়োজন।
মসজিদটি দেখার জন্য এখনো অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেন। এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা মসজিদটির সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কাতারের সাথে যৌথ বাণিজ্য কাউন্সিল গঠনে এফবিসিসিআইয়ের চুক্তি টি-২০ খেলতে সিলেটে পৌঁছেছে ভারতীয় নারী ক্রিকেট দল খুলনায় হিটস্ট্রোকে এক ব্যক্তির মৃত্যু ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কী বলল যুক্তরাষ্ট্র? জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য বাংলাদেশের প্রাথমিক দল ঘোষণা বৃষ্টির জন্য রাজশাহীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় গাজীপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে মৃত হাতি উদ্ধার প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের গুলির নিন্দা জামায়াতের রাজধানীতে তৃষ্ণার্তদের মাঝে শিবিরের বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ রাজশাহীতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার হেরোইনসহ যুবক গ্রেফতার

সকল