২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ব্যাংকিং কমিশন গঠনে রূপরেখার উদ্যোগ নেই

-

আলোচিত ‘ব্যাংকিং কমিশন’ গঠনের রূপরেখা প্রণয়নের কোনো উদ্যোগ নেই। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী সরকারের জন্য এ রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকিং কমিশন গঠনের রূপরেখা প্রণয়নের বিষয়ে ওপর থেকে কোনো দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
গত ৪ জুন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ব্যাংকিং খাতের জন্য কমিশন জুন মাসের যেকোনো সময়ে ঘোষণা করা হবে। এ বিষয়ে সব কিছু ঠিক হয়ে আছে। শুধু মেম্বারগুলো ঠিক করলেই হবে। সর্বশেষ ২০০৪ সালে কমিশন করা হয়েছিল। তার পর তেমন কিছু করা হয়নি। আগের কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, কোনো কমিশনের সুপারিশই পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। কিছু কিছু হয়। কিছু কিছু হয় না।
গত জুলাই মাসে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বর্তমান সরকারের বাদবাকি সময় ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়। তবে আমরা চেষ্টা করব আগামী সরকার যাতে এই কমিশন গঠন করতে পারে সে জন্য একটি রূপরেখা প্রণয়ন করার। এ রূপরেখাটি আমরা প্রণয়নের চেষ্টা করছি। জানা গেছে, ব্যাংকিং কমিশন গঠনের রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দেয়ার কথা ছিল অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি এ বিষয়ে। তাই ব্যাংকিং কমিশন গঠনের রূপরেখা কখন শুরু করা হবে তা আমাদের পক্ষ থেকে বলা সম্ভব নয়। তবে আগামী বছরের আগে এই রূপরেখা প্রণয়ন করা সম্ভব নাও হতে পারে।
চলতি বছরের শুরুতে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে একটি সার-সংক্ষেপ তৈরি করা হয়। এই সার-সংক্ষেপে বলা হয়, এ মুহূর্তে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে এ খাতের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে সরকারের সচেতন হওয়ার সঙ্গে সমস্যা সমাধানের আন্তরিকতা প্রকাশ পাবে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের পর যে সরকার রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে সে সরকার শুরুতেই এ খাতের সমস্যাগুলো দূর করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সম হবে। ফলে এ কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত সরকারের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করবে।
ব্যাংকিং খাতে কমিশন গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, মোট দেশজ উৎপাদনে (ডিজিপি) ১৯৮০ সালে ব্যাংকিং খাতের অবদান ছিল দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০১৮ সালে এর অবদান ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। জিডিপিতে ব্যাংকিং খাতের অবদান বেড়েছে ১৮০ শতাংশ। ১৯৮০ সালে ১৫টি ব্যাংক ৩৩ লাখ টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭টিতে এবং আমানতের পরিমাণ ৯ লাখ কোটি টাকার ওপরে। শতাংশের হিসাবে ব্যাংকের সংখ্যার প্রবৃদ্ধি ৩১ ভাগ এবং আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮৪ ভাগ। ওই সময় ৭৮ লাখ আমানতকারী থাকলেও বর্তমানে এ সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত অতীতের চেয়ে বহুগুণ বড়। বিশেষ করে ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বর্তমান সরকারের আমলে উল্লিখিত সূচকের বেশ অগ্রগতি হয়েছে।
বলা হয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দেশের খাদ্য উৎপাদন, শিল্পায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে শুরু থেকে অদতা ও অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বেসিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক গ্রুপ ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঘটনা সমালোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এ ছাড়া সুশাসনের অভাব রয়েছে সরকারি ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায়। ঋণগ্রহীতা নির্বাচন ও ঋণ প্রস্তাবের মূল্যায়নে অনিয়ম, ঋণ বিতরণ ও আদায়ে দুর্নীতি ও অনীহা, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতিসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা প্রতিনিয়তই আলোচনা হচ্ছে। অন্য দিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো তুলনামূলক উন্নত গ্রাহক সেবা এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সুপরিচিত। কিন্তু তাদের েেত্র নিয়ম লঙ্ঘন করে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ দেয়া এবং এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের পরিচালককে ঋণ দেয়ার মাধ্যমে এক ধরনের স্বজনপ্রীতি প্রতিষ্ঠার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ফারমার্স ব্যাংকের ঘটনা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সুনাম মারাত্মকভাবে ুণœ করেছে। ফলে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সার্বিক কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং দতা ও কার্যকারিতা বাড়াতে একটি ব্যাংক কমিশন গঠন প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement