২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা

মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন সরকারের তৈরি : রিজভী

নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন রুহুল কবির রিজভী : নয়া দিগন্ত -

বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন সরকারের তৈরি করা বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করে বলেন, দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের বক্তব্য স্ববিরোধী ও সরকারের চিন্তার প্রতিফলন। এটা একদেশদর্শী এবং সার্বজনীন চিকিৎসানীতির পরিপন্থী। বেগম খালেদা জিয়াকে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নিয়ে যাওয়ার জন্যই সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী মেডিক্যাল বোর্ড এ প্রতিবেদন বানিয়েছে। তিনি দলের পক্ষ থেকে এই একগুঁয়েমি ও প্রতিহিংসাপরায়ণতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
রিজভী বলেন, আমরা বারবার বলে এসেছি অবৈধ আওয়ামী সরকার ও সরকার প্রধান পরিকল্পিতভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে তার অসুস্থতা চরম শোচনীয় অবস্থায় উপনীত করার চক্রান্ত চালিয়ে আসছে। সরকারি দলের অনুগত চিকিৎসকদের দিয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড কারাগারে দেশনেত্রীকে বিশ মিনিটে তথাকথিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিএসএমএমইউতে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালককে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা বলেছেন- বেগম জিয়ার পুরনো রোগগুলোই তারা পেয়েছেন, অন্য কিছু নয়। তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে সরকারি দলের অনুগত বোর্ড সদস্যরা সরকারের পছন্দানুযায়ী পরামর্শ দেবেন-সেটিই এখন প্রমাণিত হলো। দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য যদি ঝুঁকিপূর্ণ না হয় তাহলে অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি এপাশ ওপাশ হতে পারেন না কেন? এ কথা তো মেডিক্যাল বোর্ডই স্বীকার করেছে। দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের বক্তব্য স্ববিরোধী ও সরকারের চিন্তারই প্রতিফলন।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা কর্নেল (অব:) আবদুল লতিফ খান, মো: মুনির হোসেনসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, একজন রোগীকে তার পছন্দ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া উচিত, এটি তার মানবাধিকার, সেটি না করে কর্তৃপক্ষ জোর করে তাদের নিজেদের পছন্দের চিকিৎসকদের দিয়ে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ জেদেরই বহিঃপ্রকাশ। তিনি দলের পক্ষে কর্তৃপক্ষের এই একগুঁয়েমির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মেডিক্যাল বোর্ডে বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাকে বেসরকারি কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানাই।
নিপীড়ন নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, গুম ও ক্রসফায়ার এই যমজ সহিংস সর্বনাশা কর্মসূচি বাংলাদেশের মানুষের জীবনের অনিবার্য পরিণতি করা হয়েছে। সারা দেশে গুম ও ক্রসফায়ার পাল্লা দিয়ে চলছে। বর্তমানে অবৈধ আওয়ামী সরকার আর কোনো উপায় না দেখে গুম ও ক্রসফায়ারে হত্যাকেই নির্ভরযোগ্য মনে করছে তাদের টিকে থাকার শর্ত হিসেবে। বাংলাদেশের স্মৃতিতে আছে ‘৭১-এর বিভীষিকা, আর মানুষ এখন অবলোকন করছে আওয়ামী বিভীষিকা। হত্যা, নির্যাতন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে পথে-ঘাটে ফেলে দেয়া, সবই ’৭১-এর নবসংস্করণ।
রিজভী বলেন, গত শুক্রবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচল থেকে তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই যশোরের শার্শা ও কেশবপুর উপজেলায় দু’টি লাশ পাওয়া গেছে। পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় লোকজন বলেছেন, সাদা পোশাকধারীরা সাদা মাইক্রোবাসে করে তাদের তুলে নিয়ে গেছে। ঢাকার নয়াপল্টন এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে তুলে নিয়েছে ডিবি পরিচয় দেয়া লোকেরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি আটক করে আটকের বিষয়টি অস্বীকার ও গুম করে দেয়ার ঘটনায় সারা দেশে বিরাজ করছে এক ভয়াল আতঙ্কজনক পরিবেশ।
বিএনপির এই নেতা বলেন, রোববার সন্ধ্যায় সিলেটের সোবহানীঘাট এলাকায় একটি মসজিদে ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীমের বাড়িতে কয়েকজন নেতাকর্মী গেলে পুলিশ তার বাসা ঘিরে ফেলে এবং অকারণে কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। পুলিশের এ ঘৃণ্য কৌশলকে ধিক্কার জানান তিনি। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলমের নামে ঢাকায় বিভিন্ন থানায় মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। দেশকে জনশূন্য করার জন্যই এই মামলা। এ ছাড়াও দিনাজপুরে পৌর বিএনপির আবদুল মান্নান, শামীম ও মোহাম্মদ আলীসহ আরো কিছু নেতাকর্মীকে হোটেলে খাওয়া-দাওয়ার সময় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন রিজভী।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ কে এম আমিনুল হক (এফসিএ), কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, ড. শামসুজ্জামান মেহেদী, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, মো: মশিউর রহমান বিপ্লব, মোহাম্মদ শাহ আলম, ঢাকার মো: হারুন অর রশিদ হারুনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৭৫ জন নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা করেছে পুলিশ। ঢাকার বাইরে ফরিদপুর, মেরেহপুর ও সাতক্ষীরাতে বহু নেতাকর্মী গ্রেফতার ও অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, নির্বিচারে হামলা, মামলা, গ্রেফতার, দমন-পীড়নে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার হরণের ছায়া পড়তে শুরু করেছে। সরকার একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করছে। কিন্তু দেশের ষোল কোটি মানুষের আত্মশক্তিকে ভুলে গেছে তারা। দেশের পলিমাটির ধুলোয় জনগণের দ্রোহ ভাসছে। মামলা খেয়ে, গ্রেফতার হয়ে কারান্তরীণ হওয়ার পরও বিএনপি ঐক্যবদ্ধ-এটিই আমাদের ব্যতিক্রমী শক্তি। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতেই হবে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনের জাতীয় নির্বাচন দিতেই হবে। আর সেই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন বেগম খালেদা জিয়া। স্বৈরাচারের লৌহকপাট আর বেশি দিন বন্ধ রাখা যাবে না। বেগম জিয়ার মুক্তিতেই বেগবান গণতন্ত্রের শক্তি।

 


আরো সংবাদ



premium cement