২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ছাত্রনেতাদের সাথে প্রশাসনের বৈঠক

সহাবস্থান নিশ্চিত করে দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের দাবি ছাত্রসংগঠনগুলোর

অক্টোবরের মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন
-

ইতঃপূর্বে বেশ কয়েকজন ভিসির আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন কারণে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে সেই সংস্কৃতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বর্তমান প্রশাসন। দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ডাকসু বিহীন দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলাবস্থা ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন। সে লক্ষ্যে ভোটার তালিকা এবং শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ তৈরি শুরু করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সাথে গতকাল রোববার আলোচনায় বসে ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামানের প্রশাসন। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসে অর্থাৎ অক্টোবরের মধ্যেই খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন ভিসি। এ ছাড়া পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৯ সালের মার্চে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ডাকসু নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে প্রকৃত অর্থেই ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ছাত্রনেতারা। সেই সাথে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবিও করেন তারা। গতকাল রোববার বিশ^বিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সাথে প্রশাসনের আলোচনায় দাবির বিষয়গুলো উঠে আসে।
বেলা ১১টায় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি কার্যালয় সংলগ্ন অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল শ্রেণীকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান। এ সময় প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী ও বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বরাবর পাঠানো হয়। অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের ১৩টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের আগেই ছাত্র সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত হন। ১১টায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক বি এম বাশার সিদ্দিকী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি গাড়িতে করে সভাস্থলে উপস্থিত হন। তাদের সাথে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো: মোর্শেদ হাসান খান। এ ছাড়া তাদের প্রস্থানকালে যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ আবুল কালাম সরকার উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ছাত্রলীগের নেতারা রেজিস্ট্রার ভবনে আসেন। তারা রিকশায় করে সভাস্থলে আসেন। এর পর অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীও সভাস্থলে আসেন। দীর্ঘ চার ঘণ্টার আলোচনা সভায় ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রসংগঠনের নেতারা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। আলোচনা শেষে ছাত্রদলের সভাপতি ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন।
সভা শেষে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান বলেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির কথা বলেন। তিনি বলেন, সে পরিবেশের জন্য ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধুর ক্যান্টিনে রাজনীতির স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকার উপযোগী করতে হবে। মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন করতে হবে। অন্য ছাত্র সংগঠনের যারা আছে তাদের ভীতিহীন ও নিরাপদে থাকার পরিবেশ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের জন্য ডাকসু নির্বাচন আমাদের করতে হবে। তাই আমরা ছাত্রসংগঠনগুলো একমত হয়েছি। প্রশাসনকে জানিয়েছি, ডাকসু নির্বাচন হোক। আর বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছেন, একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সবার মতামতের ভিত্তিতে তারা একটি ঐক্যে পৌঁছাবেন।
ছাত্রলীগের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর না হওয়া ডাকসু নির্বাচন যেন একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে হয়। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের বৈধ ভোটার তালিকার করার দাবি জানিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি হলে ছাত্রলীগের সংখ্যা ত্রিশ শতাংশ। এর বাইরে যারা আছেন তারা বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সঙ্ঘের সাথে জড়িত। আমরা বলেছি, সহাবস্থানের জন্য যে ক্রাইটেরিয়া রয়েছে সেগুলো পূর্ণ করতে হবে। আমরা সবাইকে বলেছি যারা নিয়মিত ছাত্র আছেন তারা ক্যাম্পাসে আসুন। আমরা চাই ছাত্রদলের কেউ ক্যাম্পাসে এসে পেট্রল বোমা রাখবে না। তাহলে সহাবস্থানের জন্য আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের পক্ষে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, আমরা দ্রুত ডাকসু নির্বাচন চাই। জাতীয় নির্বাচনের আগে হোক বা পরে হোক। ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের আন্তরিকতা খুবই প্রয়োজন। এর জন্য ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন ডাকসু নির্বাচন চেয়ে আসছি। দ্রুত ডাকসু নির্বাচন করা হোক। নভেম্বরের মধ্যে হলে ভালো হয়।
ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা ডাকসু নির্বাচনের জন্য যা যা প্রস্তুতি দরকার তা সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছি। জাতীয় নির্বাচন ডাকসু নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব ক্যাম্পাসের পরিবেশে পড়বে না। আগামী মার্চের মধ্যে বিশ^বিদ্যালয় সময় বেঁধে দিয়েছে সেই সময়ের মধ্যে হোক এটি আমরা চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান বলেন, গণতান্ত্রিক ও সংসদীয় রীতিনীতি ও মূল্যবোধ নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা আলোচনা করেছে। তারা যে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন সেগুলো আমাদের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা নোট করেছেন। সেগুলো আলোচনা পর্যালোচনা করে প্রতিটি বিষয় কিভাবে সমাধান করা যায় সেগুলোর দিকে আমরা গুরুত্ব দেবো।
ভিসি বলেন, একটি ভালো বিষয় হচ্ছে তাদের মধ্যে হটকারী কোনো চিন্তার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখিনি। তারা বলেছে যৌক্তিক উপযুক্ত সময়ে এটি করা দরকার। সবাইকে এক করে যেন করতে পারি এ ধরনের পরামর্শ আছে। কেউ বলছে মার্চের মধ্যে করা যায় কিনা, কেউ বলছে জাতীয় নির্বাচনের পর করতে। তবে সবাই একটি বিষয়ে এক হয়েছে যে আমরা যেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনটা করি।
কবে নাগাদ নির্বাচন দেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাবি ভিসি বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে একটা নির্দেশনা আমাদের আগেই দেয়া আছে। নির্বাচনী কাজের পরিধি নিয়ে আমাদের প্রভোস্ট কমিটি ও শৃঙ্খলা কমিটি এরই মধ্যে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের মার্চ মাস আমাদের টার্গেট আছে সে থেকে তো আমাদের সরে যেতে বলেনি শৃঙ্খলা কমিটি ও প্রভোস্ট কমিটি। এ লক্ষ্যে আমরা আছি, আমাদের প্রাধ্যক্ষরা ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্য কাজ করছেন।
অক্টোবরের মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যদিও এটি কঠিন কাজ। এটি করতে পারলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাবো। ছাত্রসংগঠনগুলোর ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের বিষয়ে ভিসি বলেন, সহাবস্থানের জন্য যা যা করা দরকার প্রাধ্যক্ষরা তাই করবেন। এগুলো নতুন কিছু নয়। সবাই অভিজ্ঞ। হলে সহাবস্থান ও মধুর ক্যান্টিনে রাজনৈতিক চর্চা সবার জন্য উন্মুক্ত। আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই। ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালনার পরিবেশ উন্মুক্ত আছে, সেগুলো করতে কারো জন্য বাধা নেই। 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল