২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন

মোদির সমর্থন মাইলফলক হয়ে থাকবে : শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সে তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করছেন : বাসস -

বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ককে বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সুসম্পর্ক বজায় রেখে দুই দেশই এগিয়ে যাচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছে দুই দেশের জনগণই। আর আমাদের উন্নয়নের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থন ও সহযোগিতা মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
গতকাল বিকেলে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিবিষয়ক প্রকল্প, রেলওয়ের ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ ও ‘আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ (বাংলাদেশ অংশ)’ প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আর গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু যুক্ত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম। বর্তমানে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০ হাজার মেগাওয়াট। মমতা ব্যানার্জি আমাদের আরো ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে চেয়েছেন। আশা করি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিজি তাতে কোনো আপত্তি করবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিটি সেক্টরে দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা ২০৪১ সাল পর্যন্ত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে এগিয়ে যাচ্ছি। সে হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। এ বিদ্যুৎ পেলে বাংলাদেশের অনেক সাফল্যগাথার সাথে ভারতের অবদান থাকবে। ভারতের কাছ থেকে নতুন নতুন সহযোগিতার ফলে নতুন নতুন বাতায়ন খুলে যাবে। একই সাথে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব আরো অটুট থাকবে।’ এই সহযোগিতার কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীসহ সব সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
ভারত-বাংলাদেশের চিরস্থায়ী বন্ধুত্ব কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যার ফলে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করে দুই দেশের জনগণের উন্নতি সাধান করতে পারে। আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় এ ধরনের অনেক সাফল্য আমরা উদযাপন করতে পারব। ইতোমধ্যে আমাদের স্থলসীমানা সমস্যার সমাধান হয়েছে। ভারতবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। ভারতের সংসদের সকল সদস্য এক হয়ে এই স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন। ভারত বোধ হয় বাংলাদেশের বিষয়ে সবসময় ঐক্যবদ্ধ হয় দল-মত নির্বিশেষে, এটাই প্রমাণ হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত যে সহযোগিতা করেছে, তা আমরা সবসময় কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি, যা আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে চিরদিনই মাইলফলক হিসেবে বজায় থাকবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ব্লু ইকোনমি, সামুদ্রিক সহযোগিতা, পারমাণবিক শক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, মাহকাশ গবেষণাসহ নতুন নতুন ক্ষেত্রে আজ আমরা কাজ শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমরা বর্তমানে ভারত থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। আরো তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আমাদের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য আরো বিদ্যুৎ প্রয়োজন। আঞ্চলিক সহযোগিতার কাঠামোর অধীনে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্য থেকে নয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করছি। আশা করি এ লক্ষ্য অর্জনে ভারত আমাদের পাশে থাকবে।’
ভারতীয় ঋণের অর্থে নির্মিতব্য রেলের দু’টি প্রকল্প সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রেলওয়ে খাতেও আমাদের দুই দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে মালামাল পরিবহনের জন্য ১৯৬৫ পূর্ব রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করার জন্য কাজ করছি।’
আমরা আরো কাছে এলাম : অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলা ভাষায় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আজ থেকে আমরা আরো কাছে এলাম, আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হলো। ধন্যবাদ।’
আপনি জিতুন নিশ্চয় আসব : অনুষ্ঠান থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে আবার আসুন বেড়াতে, সেটাই চাই।’
জবাবে মমতা বলেন, ‘নিশ্চয় আসব, আপনি জিতুন, নিশ্চয় আসব।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ উচ্চস্বরে হাসছিলেন কিছুক্ষণ।
অনুষ্ঠানে মমতা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে নিজ আগ্রহের কথা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকি।’
এ সময় বাংলাদেশকে আরো এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেয়ার ইচ্ছার কথা জানান মমতা।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব ভালো হলো, এটা বিরাট কাজ, এক হাজার মেগাওয়াটের জন্য আমরা অপেক্ষায় আছি।’
মমতা বলেন, ‘আমি রাজি আছি, কেন্দ্রীয় সরকার অনুমতি দিলে আমরা দেবো, আপনাদের কাজে লাগবে ভালো।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মমতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আশা করি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিজি এ ব্যাপারে নিশ্চয় সম্মতি দেবেন।’
অনুষ্ঠানে মমতার পাশাপাশি ত্রিপুরার নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথোপকথন হয় শেখ হাসিনার। পরস্পর কুশল বিনিময় ছাড়াও একে অপরের দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বিপ্লবকে বলেন, ‘বাংলাদেশে কবে আসবেন?’
জবাবে বিপ্লব বলেন, ‘আসব আপনার কাছে। কোনো একটা কার্যক্রম করে আমি আসব। আমি বলেছিলাম প্রথম আসব আপনার কাছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনার অপেক্ষায় আছি।’
জবাবে বিপ্লব বলেন, ‘আসব আসব, আপনি ভালো থাকেন।’


আরো সংবাদ



premium cement