২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আর্সেনিক ঝুঁকিতে এখনো মানুষ

গ্রামে ৮৮ জনে একটি নিরাপদ পানির উৎস
-

রাষ্ট্রের নানা পদক্ষেপ ও উদ্যোগের পরও এখনো দেশের মানুষ আর্সেনিকের ঝুঁকিতে। ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত এখনো দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ। যেখানে আর্সেনিকের মাত্রা ৬০ শতাংশেরও বেশি বলে সরকারি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিরাপদ পানি সরবরাহ নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে চরম সমন্বয়হীনতায় অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এলজিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ পানীয় জলের ক্ষেত্রে আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছে। আর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের জুন ’১৭-এর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে প্রতি ৮৮ জনের জন্য মাত্র একটি নিরাপদ পানির উৎস রয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে এটি কমে ৮৫ জনে দাঁড়াবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র বলছে, গত শতাব্দীর শেষ নাগাদ বাংলাদেশ ভূগর্ভস্থ পানির উৎস ব্যবহারের মাধ্যমে নলকূপ প্রযুক্তির দ্বারা পানি সরবরাহের কভারেজ ৯৭ শতাংশ অর্জনে সক্ষম হয়, যা ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে সর্বোচ্চ। কিন্তু নব্বই দশকের শুরুর দিকে ভূগর্ভস্থ পানিতে বিশেষত অগভীর স্তরে আর্সেনিকের উপস্থিতি শনাক্তকরণ এই প্রশংসনীয় সাফল্যকে ম্লান করে দেয়, যা নিরাপদ পানি সরবরাহ কার্যক্রমকে ৯৭ শতাংশ থেকে ৭৪ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসে। তখন দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬১টিতেই খাবার পানিতে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব শনাক্ত করা হয়। জেএমপি-১৫ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পরবর্তীতে সরকারের কিছু পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে নিরাপদ পানি সরবরাহ কভারেজ ৮৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ খাবার পানির ক্ষেত্রে আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের ৫৪টি জেলার ৩৩৫টি উপজেলা আর্সেনিক ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের এক জরিপে (২০১৫) বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৫৯ ভাগ মানুষ সুপেয় পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এ জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গত ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১১ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সুবিধার আওতায় আনার অঙ্গীকার করে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে দলটি আবারো ক্ষমতায় আসার সময় ২০২১ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর ঘোষণা দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১৩টি মন্ত্রণালয়ের অধীন ৩৫টি সংস্থা নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে কাজ করছে। কিন্তু এদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রকট আকার ধারণ করায় অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। ফলে জনগোষ্ঠীর বিশাল একটি অংশ মানহীন পানি পান করে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ দিকে ২০০৯ সালে জাইকা-ডিপিএইচই একটি সমীক্ষা চালায় ৫৫টি জেলার ৩০১টি উপজেলার দুই হাজার ৯৯৮টি ইউনিয়নে। ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এক হাজার ২৯০টি ইউনিয়নে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা ৬০ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরূপণের লক্ষ্যে মোট তিন হাজার দুইশ’টি ইউনিয়নের বা সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় ৭০ ভাগে এই আর্সেনিক শনাক্তকরণ করা হবে। মোট এক হাজার ৯৯০ কোটি ৯৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। বলা হচ্ছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ২ কোটি মানুষ আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি পেতে সক্ষম হবে। প্রকল্প এলাকায় প্রতি ৭৫ জনের জন্য একটি নিরাপদ পানির উৎস নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। মোট এক লাখ ৯২ হাজার ৯৪৫টি ভিন্ন ভিন্ন পানি সরবরাহ প্রযুক্তির সংস্থান রাখা হয়েছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপদ পানি সরবরাহ কার্যক্রমের অগ্রগতির হার বিবেচনায় দেখা গেছে ১৯৯০-২০১৫ সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ ভাগ মানুষ বিশুদ্ধ পানির আওতায় এসেছে। সেই হিসাবে এখনো প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ এ সুবিধার বাইরে আছে। আর দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১২ ভাগ পাইপ লাইনের মাধ্যমে শোধনকৃত পানির সুবিধা পাচ্ছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই শহরের বাসিন্দা। তবে দেশের কিছু গ্রামীণ জনপদেও পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। যার পরিমাণ ১ ভাগেরও কম। মোট জনসংখ্যার ২৬ ভাগ মানুষ এখন শহরে বাস করে। আর ৭৪ ভাগ মানুষ বসবাস করে গ্রামে। তবে সমন্বিতভাবে কাজ না করলে মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধা ভোগ করতে পারবে না।


আরো সংবাদ



premium cement