২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকার সব ব্যবস্থা নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীতে বৃক্ষমেলায় স্টল পরিদর্শন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা :বাসস -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ’৭৫-পরবর্তী শাসকরা সুন্দরবনের নদ-নদী, খাল ও চ্যানেলগুলো বন্ধ করে চিংড়ি চাষ প্রকল্প করায় এখানকার পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছিল। তার সরকার এই নদী এবং খাল পুনঃখনন করে নাব্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তা জাহাজ চলাচলের উপযুক্ত করে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশমেলা, ২০১৮ এবং জাতীয় বৃরোপণ অভিযান ও বৃমেলা ২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ৩০ লাখ বীর শহীদের স্মরণে সারা দেশে একযোগে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন। দেশে প্রথম বারের মতো এই ধরনের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বনের দস্যুতা দূর করার জন্য আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের পুনর্বাসন এবং বনের অপরাধ দমনের উদ্যোগের পাশাপাশি সেখানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার জন্য সহ-ব্যবস্থাপনা এবং বিকল্প আয়েরও ব্যবস্থা করেছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল্লাহ মহসিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
তিনি অনুষ্ঠানে পরিবেশপদক ২০১৮ এর জন্য নির্বাচিত ব্যক্তি ও সংস্থা এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৮, বৃরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৭ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেকপ্রাপ্তদের মধ্যে পদক ও চেক বিতরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা এবং আমাদের গর্ব রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ব্রিডিং পয়েন্ট উন্নত করা এবং এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার যাতে সুরক্ষিত হয় তার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
’৯৬ সালে সরকারে এসেই ভারতের সাথে গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তি সম্পাদনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পানিচুক্তি করার পর আমরা সুন্দরবনের গড়াই নদী খননের কাজ শুরু করি।
গড়াই নদী খননের ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের লবণাক্ততা দূর হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই লবণাক্ততা দূর করা একান্তভাবে প্রয়োজন ছিল। কারণ, এই গড়াই নদীর হোগলা বন এলাকাটিই বাঘের ব্রিডিং পয়েন্ট। গড়াই, সালনাসহ সুন্দরবনের নদীগুলো খননের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, মিঠা পানির ¯্রােত যত বেশি হবে জলের লবণাক্ততা ততই কমে আসবে। সে জন্যই এই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একে একে প্রায় সব খালের মুখ আমরা খুলে দিয়েছি। যেগুলোর মধ্যে ৮০টা এখনো বাকি আছে এবং ঘাসিয়ার খাল পুনঃখনন করে সেখান দিয়েই জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। তাতে জাহাজ চলাচলের সময়ও বেঁচে যাচ্ছে। তা না হলে জাহাজগুলোকে অতিরিক্ত ১৪-১৫ কিলোমিটার ঘুরে সালনা নদী দিয়ে আসতে হতো। এখন খুব সহজেই জাহাজগুলো মংলা বন্দরে চলে আসতে পারছে।
আওয়ামী লীগকে এ দেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দলটি যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের পরিবেশ, দেশের মানুষের উন্নয়ন, দেশের অর্থনৈতিক এবং সার্বিক উন্নয়নের দিকেই দৃষ্টি দেয়া হয়। ‘যে কারণেই সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় এই কাজগুলো করা হয়েছে এবং আমাদের পরিবেশের সুরক্ষা কার্যক্রমও এখন যথেষ্ট অগ্রগামী’, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশের ৪০টি বনজসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা এবং জলাভূমি, হাওর, নদী, উপকূলীয় দ্বীপসহ ১৩টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেছে।
১৯টি উপকূলীয় এলাকায় জেগে ওঠা চরগুলোয় সরকার উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী তৈরির জন্য ব্যাপক বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম ও মাছের প্রজনন ত্রে তৈরি করেছি। বনায়নের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর থেকে ১ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভূমি দেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হয়েছে।
উপকূলীয় চরাঞ্চলে এ যাবৎ ২ লাখ ১০ হাজার হেক্টর বাগান করা হয়েছে, যা উপকূলবাসীকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে রা করছে, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা তার সরকারের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির সাফল্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক বনায়নকার্যক্রম পরিবেশের ভারসাম্য রা করে নারীর মতায়ন, নেতৃত্ব সৃষ্টি, কর্মসংস্থান এবং দরিদ্রতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়নে আমাদের তেমন ভূমিকা নেই। কিন্তু বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।’
সরকারের ‘কাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৩ শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমাদের এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বৃরোপণ করে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন, আমরা প্রত্যেকে অন্তত একটি করে বনজ, ফলদ ও ভেষজ গাছের চারা রোপণ করি এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণে এগিয়ে যাই।’
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে, পরিবেশপদক ২০১৮ এর জন্য নির্বাচিত ব্যক্তি ও সংস্থা এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৮, বৃরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৭ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেকগ্রহীতাদের অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পশ্চিম পাশে একটি ছাতিম গাছের চারা রোপণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী পরিবেশমেলা এবং বৃমেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement