১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী তৎপরতা

ঢাকা-৭ আসন
-

রাজধানীর অতি পরিচিত এলাকা পুরান ঢাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত পুরান ঢাকার লালবাগ, চকবাজার ও বংশাল থানার ১৬টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-৭ আসন। এটি নির্বাচন কমিশনের তালিকায় ১৮০ নম্বরে রয়েছে। দেশের অন্য সংসদীয় আসনগুলোর মতো এই আসনেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকেই পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন লাগিয়ে এলাকাবাসীকে নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। কেউ কেউ মাঠ পর্যবেক্ষণ করছেন। এই আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য বেশ কয়েকজন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের অনেকেই এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন। এই আসনে বিএনপির নতুন নতুন মুখ আলোচনায় রয়েছেন। এ দিকে আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবেÑ এটা মাথায় রেখে পুরনোদের পাশাপাশি নতুন প্রার্থীকেও অগ্রাধিকার দেয়ার চিন্তা করছে বিএনপির হাই কমান্ড।
অতীতে ঢাকা-৭ আসনে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে একাধিকবার। একেকবার একেক দলের প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। তবে বিএনপি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এই তিন দলের প্রার্থীরাই ঘুরে ফিরে নির্বাচিত হয়েছেন। কেউ কেউ একাধিকবারও নির্বাচিত হন।
জানা গেছে, বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত এই সংসদীয় আসনের নিত্যসঙ্গী যানজট, জলাবদ্ধতা আর মাদক। এ সমস্যাগুলোর এখনো তেমন কোনো সমাধান হয়নি। আশানুরূপ উন্নতি হয়নি জনবহুল এ এলাকার সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তা ডুবে একাকার হয়ে যায়। এলাকাটি যেভাবে ঘনবসতিপূর্ণ সেভাবে রাস্তাগুলো প্রশস্ত নয়। ফলে রাস্তাঘাটে চলা দায়। তবে আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে এসব সমস্যা সমাধান করার জন্য কাজ করবেন বলে সম্ভাব্য প্রার্থীরা জানান।
জানা যায়, ঢাকা-৭ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেনÑ বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, চকবাজার থানা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী মো: টিপু সুলতান। এই আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন সাবেক এমপি মরহুম নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু। বিগত ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে আমৃত্যু তিনি জেলে ছিলেন। এই আসনে তার সহধর্মিণী ও ঢাকা মহানগর দণি বিএনপির সহসভাপতি নাসিমা আক্তার কল্পনা মনোনয়ন চাইতে পারেন। প্রার্থীদের মধ্যে নেওয়াজ আলী নেওয়াজ এবং হাজী টিপু সুলতান বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের অবস্থান তুলে ধরছেন। এ ছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কয়েকজন নেতা নির্বাচন করতে চান বলে জানা গেছে।
জানা যায়, হাজী টিপু সুলতানের বাবা মরহুম আবদুস সাত্তার চকবাজারের পরিচিত ডাল ব্যবসায়ী ছিলেন। তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে এই এলাকায় রয়েছে কিছু স্থাপনা। ১৯৮৬ সালে টিপু সুলতানের বড় ভাই হারুন অর রশিদ জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে একই দল থেকে তার মামা আনোয়ার হোসেন এমপি হন। এলাকার উন্নয়নে তাদের অবদান রয়েছে।
আগামী নির্বাচনে নিজের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ নয়া দিগন্তকে বলেন, পুরনো ঢাকার লালবাগে আমার জন্ম। রাজনীতির বাইরেও রয়েছে আমার আলাদা পরিচিতি। এই এলাকার প্রায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ড ও মহল্লায় আমার পদচারণা রয়েছে। সব শ্রেণিপেশার লোকের সাথে আমার যোগাযোগ রয়েছে। ছাত্র অবস্থা থেকেই আমার রাজনীতি শুরু। দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। অনেকবার জেল খেটেছি। অসংখ্য মামলা আমার বিরুদ্ধে। আগামী নির্বাচনে বিএনপির হাইকমান্ড সার্বিক বিবেচনায় তাকে মনোনয়ন দেবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। ঢাকা-৭ আসনের সমস্যা ও সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাও শোচনীয়। বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কটও রয়েছে। স্থানীয় জনগণ ও দল এমপি হওয়ার সুযোগ দিলে এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করব এবং যুবসমাজকে সাথে নিয়ে মাদকবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ।
হাজী টিপু সুলতান বলেন, চকবাজারেই আমার জন্ম। পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, নবীন-প্রবীণ প্রায় সব শ্রেণিপেশার লোকের সাথে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। স্থানীয় লোকদের সাথে রয়েছে আত্মার সম্পর্ক। তাদের সুখে-দুঃখে আমি ছুটে গিয়ে খোঁজখবর নেই। তিনি বলেন, ঢাকা-৭ নির্বাচনী এলাকাটি খুবই ঘনবসতিপূর্ণ। এখানাকার সড়কব্যবস্থা নাজুক। রয়েছে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খেলার মাঠের অভাব। উন্মুক্ত পরিবেশ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা মাদকাসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা রোধ করা না গেলে ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসবে। অতীতে যারা এমপি হয়েছেন, তারা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার বেশির ভাগই পূরণ করেননি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার সাথে যাদের সম্পর্ক নাই তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হলে জনগণ আস্থা রাখতে পারবে না। আমি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আসছি। রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক ও ক্রীড়া কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে আমার অংশগ্রহণ রয়েছে। আমি ১২টি রাজনৈতিক মামলার আসামি। এখন তরুণ প্রজন্মের জোয়ার বইছে। আগামী নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে থেকে যার অবস্থান ভালো তাকেই মনোনয়ন দেয়া উচিত। দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দিলে আশা করি বিজয়ী হয়ে পুরান ঢাকার উন্নয়ন ও বিএনপির রাজনীতিকে শক্তিশালী করা এবং জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবো। বিশেষ করে মাদকমুক্ত পুরান ঢাকা উপহার দিবো ইনশাআল্লাহ।


আরো সংবাদ



premium cement