২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নরসিংদীতে ২ সন্তানকে হত্যা করে বাবার আত্মহত্যা

নরসিংদীতে দুই সন্তান ও স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রীর আহাজারি : নয়া দিগন্ত -

দুই সন্তানকে হত্যা করে গলায় ফাঁস দিয়ে বাবা আত্মহত্যা করেছেন। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রায়পুরা উপজেলার তুলাতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঋণের বোঝা ও মামলায় পরাজিত হওয়ায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। নিহতরা হলেন, তুলাতলী এলাকার আবদুল আজিজের ছেলে কাজল মোল্লা (৩৫), তার দুই সন্তান কাকলী আক্তার (৮) ও সোহান মোল্লা (৫)।
নিহতের পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তুলাতলী মোল্লা বাড়ির কাজল মোল্লা তিন বছর ধরে নিজ বাড়িতে না থেকে পাশের নয়াচর গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে থেকে নরসিংদী শহরে অটোরিকশা চালাতেন। এরই মধ্যে তিনি তার পাশের বাড়ির দূরসম্পর্কের চাচা সিরাজ মিয়ার মেয়ের জামাই কিশোরগঞ্জের রুহুল আমিনকে বিদেশে যাওয়ার জন্য ঋণ করে কয়েক লাখ টাকা দেন। কিন্তু দীর্ঘ দিনেরও রুহুল আমিন বিদেশ নিতে না পারায় কাজল মোল্লা নরসিংদী আদালতে মামলা করেন। গত বৃহস্পতিবার ওই মামলার রায় হয়। এতে কাজল মোল্লা পরাজিত হন। এদিকে ঋণের টাকার জন্য পাওনাদাররা চাপ প্রয়োগ করেন। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার মামলার রায়ের পর দুপুরে দুই সন্তান কাকলী ও সোহানকে নিয়ে একই উপজেলার মরজাল এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াত যান। সেখান থেকে নিজের বাড়ি তুলাতলীতে যান বিকেলে। পরে সেখান থেকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য বের হন। এ সময় বাড়ির লোকজন থেকে যাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করলেও তিনি শোনেননি।
গতকাল সকালে স্থানীয়রা বাড়ির কাছেই একটি ডোবার পাশে কাকলী আক্তার ও সোহানের লাশ পাশাপাশি দেখতে পান। আর কাজল মোল্লাকে পাশের একটি গাছে ফাঁস লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে পুলিশে খবর দিলে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে নিহত কাজল মোল্লার বড় ভাই শামসু মোল্লা বলেন, কাজল আজ প্রায় তিন বছর ধরে আমাদের সঙ্গে বাড়িতে থাকে না। সে নয়াচরে শ্বশুরবাড়ি থেকে নরসিংদী শহরে অটোরিকশা চালাত। মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসত খোঁজখবর নিতে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে সে তার দুই সন্তানকে নিয়ে আমাদের বাড়ি আসে এবং আমাদেরকে দেখে রাতে চলে যায়। পরে গতকাল সকালে খবর পাই আমাদের বাড়ির খানিকটা দূরে তার দুই সন্তানকে হত্যা করে ও সেও আত্মহত্যা করে। দৌড়ে গিয়ে দেখি নোংরা পরিবেশে বর্ষার পানি জমে থাকা একটি গর্তের পাশে সন্তান দুটির লাশ পড়ে আছে আর সে একটি গাছে ঝুলে আছে। কী কারণে সে এমনটি করল বুঝতে পারছি না। রায়পুরা থানার ওসি মো: দেলোয়ার হোসেন জানান, বিদেশ যাওয়ার জন্য সে রুহুল আমিন নামে একজনকে ঋণ করে কয়েক লাখ টাকা দিয়েছিল। পরে বিদেশ নিতে না পারায় তার বিরুদ্ধে কাজল মোল্লা মামলা করেছিল। গত বৃহস্পতিবার ওই মামলার রায় হয়েছে। কাজল মোল্লা মামলায় পরাজিত হয়েছে। এখন মামলায় হেরে যাওয়ায় ও পাওনাদারদের চাপে হতাশা থেকে সে দুই সন্তানকে ডোবার পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে নিজে একটি গাছে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement