২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
এমপির স্ত্রীর গাড়িচাপায় পথচারীর মৃত্যু

চালককে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ

-

রাজধানীর মহাখালীতে সংসদ সদস্যের স্ত্রীর গাড়িচাপায় পথচারীর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ গতকাল পর্যন্ত চালককে শনাক্ত করতে পারেনি। তবে এই ঘটনার জন্য নোয়াখালীর সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরীকে দায়ী করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারা বলছেন, দুর্ঘটনার সময় গাড়ির চালক ছিলেন শাবাব নিজেই।
এ দিকে পুলিশ গাড়ির প্রকৃত মালিক সম্পর্কে নিশ্চিত হলেও দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি কে চালাচ্ছিলেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি কে চালাচ্ছিলেন, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
গত ১৯ জুন রাতে মহাখালী ফাইওভারে গাড়িচাপায় সেলিম বেপারি নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। নিহত সেলিম নিজেও পেশায় একজন গাড়িচালক ছিলেন। মহাখালীর যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সেলিম, সেখানে গাড়িটি জমা রেখে দণিখানের নিজ বাসায় ফিরছিলেন তিনি।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার পর প্রত্যদর্শী কয়েকজনের বরাতে সেলিমকে চাপা দেয়া গাড়িটির নম্বর জানতে পারে পুলিশ। ঢাকা মেট্রো গ-১৩-৭৬৫৫ সিরিয়ালের গাড়িটির মালিকানা কার নামে তা জানতে বিআরটিএতে খোঁজ নেয়া হয়। পরে জানা যায় গাড়িটির মালিক নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চেয়ারম্যান কামরুন্নাহার শিউলির। তার স্বামী একরামুল করিম চৌধুরী নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য।
ডিএমপির মিরপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সৈয়দ মামুন মোস্তফা জানান, বিআরটিএ থেকে গাড়িটি কার নামে রেজিস্ট্রেশন করা, সে বিষয়ে কনফার্ম হয়েছি। কিন্তু গাড়িটি কে চালাচ্ছিলেন, তা নিশ্চিত হতে পারিনি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা সব কিছু তদন্ত করে দেখছি।
এ দিকে সংসদ সদস্যের বাসভবন ন্যাম ফ্যাটের নৈশপ্রহরী ও প্রত্যক্ষদর্শী দুই যুবকের বর্ণনায় জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনার সময় গাড়ি চালাচ্ছিলেন সংসদ সদস্যের ছেলে শাবাব চৌধুরী। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শাবাবের পরিবার বলছে, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গাড়িটি তাদের। কিন্তু ঘটনার সময় শাবাব গাড়ি চালাচ্ছিলেন না। আর পুলিশ বলছে, ওই সময় শাবাব গাড়ি চালাচ্ছিলেন কি না সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত না। গাড়িটি উদ্ধারের পর পরীা করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
শামীম আশরাফি নামের এক যুবক রাতের ঘটনা বর্ণনা করে সাংবাদিকদের জানান, তারা দুইজন একটা গাড়িতে ছিলেন। রাত ১০টার পরে বনানী পার হয়ে ধানমন্ডি যাওয়ার পথে একটা সাদা আউডি গাড়িকে একটি মোটরসাইকেলকে অনুসরণ করতে দেখে কৌতূহলবশত তারাও তাদের পিছু নেন। একপর্যায়ে গাড়িটি ন্যাম ভবনে ঢুকে পড়ে। একই সাথে মোটরসাইকেলটি ঢুকে পড়ে। পরে তারাও ঢুকে পড়েন। ন্যাম ভবনে প্রবেশ করার আগে গার্ডকে জিজ্ঞাসা করতেই সে জানায়, ওই গাড়িতে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিমের ছেলে শাবাব চৌধুরী আছেন। তার পরনে হালকা রঙের শার্ট ও প্যান্ট ছিল। গাড়ির কাছে গিয়ে দেখেন শাবাব চৌধুরী মোটরসাইকেলের আরোহীর মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে গালাগাল দিচ্ছেলেন। তিনি এগিয়ে গিয়ে কারণ জানতে চান। তখন শাবাব এগিয়ে এসে বলেন, একটা বাসের সাথে গাড়ির ধাক্কা লেগেছে। পরে মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, আপনার গাড়ির চাপায় একজন মারা গিয়েছে। তার ভিডিও ফুটেজও আমার কাছে রয়েছে। এরপর ওই যুবক শাবাবকে বলেন, তোমার ভুল হয়েছে। যিনি মারা গিয়েছেন তার পরিবারের কাছে গিয়ে মা চাও। তাদের তিপূরণ দাও।
শামীম জানান, একপর্যায়ে বন্ধুর সাথে ন্যাম ভবন থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে কাফরুল থানায় যান। ওসিকে বিষয়টি জানালে তিনি বারবার তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতে থাকেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে খারাপ আচরণও করেন।
নিহত সেলিমের জামাতা আরিফ ভূঁইয়া বলেন, রাতে নিজের প্রতিষ্ঠানের গাড়ি জমা দিয়ে উত্তরখানের বাসায় ফিরতে বাসে উঠতে মহাখালীতে অপো করছিলেন তার শ্বশুর। ওই সময় একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে থানায় গিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রত্যদর্শীদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনতে পান। তারা বলেছে, প্রথমে একটি সাদা জিপ গাড়ি শ্বশুরকে চাপা দেয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement